ঘুর্ণিঝড় আমপান বিধ্বস্ত এলাকা পরিদর্শনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই
শুধু যে লকডাউন পর্বে এই প্রথম ঘূর্ণিঝড়ের পরে বাংলার বেহাল দশা দেখতে প্রধানমন্ত্রী বাড়ির বাইরে পা রাখলেন, তা নয়। আজ প্রধানমন্ত্রীর দফতর মনে করিয়ে দিল, চলতি বছরে এই নিয়ে দ্বিতীয় বার নরেন্দ্র মোদী পশ্চিমবঙ্গ সফরে গেলেন। এক মাত্র উত্তরপ্রদেশ ছাড়া আর কোনও রাজ্যে এ বছর প্রধানমন্ত্রী একবারের বেশি দু’বার যাননি।
গত জানুয়ারিতে একাধিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী কলকাতায় গিয়েছিলেন। তার পরে তাঁর দ্বিতীয় বার পশ্চিমবঙ্গে যাওয়ার বিষয়টিকে আজ প্রধানমন্ত্রীর দফতর যে ভাবে গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরেছে, তাতে রাজনৈতিক শিবিরে প্রশ্ন উঠেছে, আগামী বছর বাংলায় বিধানসভা ভোটের দিকে তাকিয়েই কি মোদীর এই উৎসাহ? ভোট জিততেই কি তাঁর রাতারাতি এক হাজার কোটি টাকার ঘোষণা? শুধু তা-ই নয়, আজ ঘূর্ণিঝড় দেখতে গিয়ে বসিরহাটে তিনি যে ভাবে রাজা রামমোহন রায়ের জন্মজয়ন্তীর উল্লেখ করেছেন এবং ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলার সঙ্গে তাঁকে জুড়েছেন, তার মধ্যেও ভোটের অঙ্কই দেখছে রাজনৈতিক মহল। অনেকেই বলছেন, বাংলায় এসে ঘূর্ণিঝড় দেখার সঙ্গে সঙ্গে নবজাগরণের অন্যতম ব্যক্তিত্বের জন্মজয়ন্তীর উল্লেখ— সবটাই ছকে বাঁধা।
কেন্দ্রীয় সরকারের ২০১৯-এর পরিসংখ্যান বলছে, মোদী সরকারের জমানায় বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিই বন্যা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের মোকাবিলায় কেন্দ্রের থেকে অনেক বেশি অর্থ পেয়েছে। ২০১৯-এ কেন্দ্রের জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলা তহবিল থেকে সাতটি রাজ্যের জন্য প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা মঞ্জুর হয়েছিল। এর মধ্যে পাঁচটিই বিজেপি শাসিত। কেরলের বাম সরকার বন্যার জন্য সাহায্য চেয়েও কিছু পায়নি। কর্নাটক, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, অসম, ত্রিপুরা-র মতো বিজেপি শাসিত বাদ দিলে শুধু মাত্র মহারাষ্ট্র ও মধ্যপ্রদেশ কিছু অর্থ পেয়েছিল। তার মধ্যে মহারাষ্ট্রে ২০১৯-এর অধিকাংশ সময়ই সরকারে ছিল বিজেপি।
বিরোধী শিবিরের মতে, সেই প্রথা ভেঙে এ বার মোদী সরকার যদি বাংলার জন্য উপুড়হস্ত হয়, তা হলে সেটা ভোটের বছরের লগ্নি বলেই ধরে নিতে হবে।
কর্নাটকের প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব আজ মনে করিয়ে দিয়েছেন, গত বছর প্রবল বন্যা এবং ধসের পরেও প্রধানমন্ত্রী সেখানে যাননি। রাজ্য কংগ্রেসের বক্তব্য, “আমরা ঘূর্ণিঝড় পীড়িত পশ্চিমবঙ্গের পাশে রয়েছি। কিন্তু মোদীর এই দ্বিচারিতার নিন্দাও করছি। প্রধানমন্ত্রী বাংলায় পরিস্থিতি সমীক্ষা করতে গিয়েছেন। কিন্তু কর্নাটকে বন্যার সময় একবারও আসেননি। বাংলায় আগামী বছর ভোট রয়েছে। কিন্তু অন্য রাজ্যের মানুষ কষ্ট সহ্য করছেন।”
আরও পড়ুন: ক্ষতি অন্তত লক্ষ কোটি টাকা: মমতা ॥ হাজার কোটির প্রতিশ্রুতি প্রধানমন্ত্রীর
প্রধানমন্ত্রীর দফতর বা পিএমও অবশ্য এর পিছনে কোনও রাজনীতি দেখতে নারাজ। পিএমও-র কর্তাদের বক্তব্য, গত বছরও ফণী ঘূর্ণিঝড়ের সময় প্রধানমন্ত্রী রাজ্যের জন্য সাহায্যের হাত বাড়াতে চেয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী নিজে ২০১৯-এর মে মাসে ফণী-র সময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দু’বার ফোন করেছিলেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীকে ফোনে পাওয়া যায়নি। তিনি পরে ‘কল ব্যাক’-ও করেননি। তৃণমূলের পাল্টা অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী সে সময় মুখ্যমন্ত্রীর বদলে রাজ্যপালের সঙ্গে কথা বলতেই বেশি আগ্রহী ছিলেন। তা ছাড়া বুলবুল বা ফণী-র ক্ষয়ক্ষতির জন্য রাজ্যের দাবি মতো অর্থ কেন্দ্র দেয়ওনি।
আরও পড়ুন: হিসহিস করছিল যেন রাগী গোখরো, জমি আর চোখের নোনা জল একাকার
বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতাদের যুক্তি, প্রধানমন্ত্রী শুধু আজ পশ্চিমবঙ্গে যাননি। আমপান পরবর্তী পরিস্থিতি দেখতে ওড়িশাতেও গিয়েছেন। সেখানে কোনও ভোট নেই। গত বছর ওড়িশায় লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনের সময় অবশ্য সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক অভিযোগ করেছিলেন, বিজেপির শীর্ষনেতারা ভোটের সময় ওড়িশায় যান। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় তাঁদের দেখা মেলে না। মোদীর ওড়িশা সফর সেই অভিযোগের জবাব কি না, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy