ছাড়পত্র পেল না কোভ্যাক্সিন।
অপেক্ষার অবসান। কোভিড-টিকার সুখবর দেশবাসীর জন্য বয়ে আনল নতুন বছরের প্রথম দিনই। যে সম্ভাবনার কথা খুব জোরালো ভাবে শোনা যাচ্ছিল গত কয়েক দিন ধরে।
শুক্রবার জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োগের জন্য অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং ব্রিটিশ-সুইডিশ সংস্থা অ্যাস্ট্রাজ়েনেকার কোভিশিল্ড প্রতিষেধককে সবুজ সঙ্কেত দিল সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ কমিটি। সূত্রের মতে, এর পরে নিয়ন্ত্রক ড্রাগস কন্ট্রোলার জেনারেল অব ইন্ডিয়ার (ডিসিজিআই) চূড়ান্ত ছাড়পত্র পাওয়া কার্যত সময়ের অপেক্ষা।
তবে, এ দিন গভীর রাতে শেষ হওয়া বৈঠকে দৌড়ে থাকা আর এক প্রতিষেধক কোভ্যাক্সিন-এর বরাতে ছাড়পত্র জোটেনি। তার জন্য আরও তথ্য জমা দিতে বলা হয়েছে নির্মাতা ভারত বায়োটেক-আইসিএমআর জুটিকে।
সূত্রের খবর, প্রতিষেধক ব্যবহারের প্রাথমিক ছাড়পত্র চলে আসায় দ্রুত ৩০ কোটি দেশবাসীর গণ-টিকাকরণ অভিযান শুরুর পরিকল্পনা করছে মোদী সরকার। শনিবার পশ্চিমবঙ্গ-সহ সারা দেশে টিকা দেওয়ার মহড়া বা ‘ড্রাই রান’ হওয়ার কথা। সেখানে প্রস্তুতি কতটা নিখুঁত, তা দেখে নেওয়ার পরেই স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পরামর্শ মেনে গণ-টিকাকরণের দিন ও পদ্ধতি ঘোষণা করতে চলেছে কেন্দ্র।
দেশের নজরে টিকা
পরিচয়: এজ়েডডি১২২২ বা চ্যাডক্স১ এনকোভ-১৯। ভারতীয় নাম কোভিশিল্ড।
যাদের তৈরি: অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও ব্রিটিশ-সুইডিশ সংস্থা অ্যাস্ট্রাজ়েনেকা। ভারতে এই টিকা উৎপাদনে যুক্ত সিরাম ইনস্টিটিউট।
কী ধরনের টিকা: অ্যাডিনোভাইরাস ভেক্টর ভ্যাকসিন। মডিফায়েড বা পরিবর্তিত অ্যাডিনোভাইরাসকে (ক্ষতিকর নয়) বাহক করে মানবদেহে স্পাইক প্রোটিন ঢুকিয়ে করোনা-প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করা হয়।
কী ভাবে দেওয়া হবে:
ইন্ট্রামাসকুলার ইঞ্জেকশন। অর্থাৎ পেশিতে দেওয়া হবে। নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে দু’টি ডোজ় নিতে হবে।
ট্রায়াল রিপোর্ট: এ দেশের ১৪টি সাইটে ১৮-৯০ বছর বয়সি ১৬০০ স্বেচ্ছাসেবকের উপরে পরীক্ষা হয়েছে। ২৯ দিনের ব্যবধানে দু’টি ডোজ় দেওয়া হয়েছিল। ওষুধের পরিমাণ ছিল ০.৫ মিলি। প্রায় ৭০ শতাংশ কার্যকারিতা প্রমাণিত হয়েছে।
কেন সকলের নজর:
• অক্সফোর্ডের টিকা সাধারণ রেফ্রিজারেটরেও ভাল থাকবে। সংরক্ষণের জন্য ফাইজ়ারের টিকার মতো মাইনাস ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের প্রয়োজন নেই।
• সংরক্ষণ প্রক্রিয়া সহজ হওয়ায় দাম কম। ডোজ় প্রতি দাম ৩-৪ ডলার।
• জানুয়ারির মধ্যে ১০ কোটি টিকা উৎপাদন করার আশ্বাস। ভারতকে তৈরি টিকার ৫০% দেওয়া হবে বলে কথা দিয়েছেন সিরামের কর্ণধার আদার পুনাওয়ালা।
• অক্সফোর্ডের বিজ্ঞানীদের দাবি, নতুন অতিসংক্রামক করোনা-স্ট্রেনকেও কাবু করতে সক্ষম এই টিকা।
ধাপে ধাপে প্রতিষেধক
প্রথম ধাপ ১ কোটি — স্বাস্থ্যকর্মী
দ্বিতীয় ধাপ ২ কোটি — পুরকর্মী, পুলিশ, আধাসেনা
তৃতীয় ধাপ ২৬ কোটি— বয়স্ক ব্যক্তি। মূলত যাঁদের বয়স পঞ্চাশের বেশি।
চতুর্থ ধাপ ১ কোটি— বয়স পঞ্চাশের কম, কিন্তু কিডনি, হার্ট, ফুসফুসের সমস্যায় দীর্ঘদিন ভুগছেন।
ব্রিটেন ও আর্জেন্টিনার পরে যে কোভিশিল্ড এ দিন ভারতে অনুমোদন পেল, তা উৎপাদনের মূল দায়িত্বে রয়েছে পুণের সিরাম ইনস্টিটিউট। আগে থেকে টিকা তৈরি শুরুর পাশাপাশি এখন দ্রুত উৎপাদন বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তারা। তবে এই বিপুল জনসংখ্যার দেশে সবার প্রতিষেধক পেতে কত সময় লাগবে, তা স্পষ্ট হবে এ বিষয়ে বিস্তারিত সরকারি ঘোষণা সামনে আসার পরই।
বৃহস্পতিবারই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং ডিসিজিআইয়ের প্রধান ভি জি সোমানির ইঙ্গিত ছিল, নতুন বছরের শুরুতেই টিকা-সুখবর পেতে পারেন দেশবাসী। আজ দুপুর ১২টায় পূর্ব নির্ধারিত ভাবে ভারত বায়োটেক-আইসিএমআর এবং অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজ়েনেকার দুই প্রতিষেধককে জরুরি ভিত্তিতে ছাড়পত্র দেওয়ার আবেদন খতিয়ে দেখতে বৈঠকে বসে ডিসিজিআই-এর অধীনস্থ বিষয়ভিত্তিক বিশেষজ্ঞ কমিটি। এ দেশে কোনও ওষুধ বা টিকার অনুমোদনে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয় যারা। প্রায় ছ’ঘণ্টা বৈঠকের পরে প্রথম সবুজ সঙ্কেত আদায় করে নেয় কোভিশিল্ডই। সূত্রের দাবি, কমিটি এ বার চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য তাকে ডিসিজিআই-এর কাছে পাঠিয়েছে।
জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োগের জন্য কোভিশিল্ড।
পশ্চিমি দুনিয়ায় প্রয়োগ শুরু হয়ে গিয়েছে ফাইজ়ার-বায়োএনটেকের প্রতিষেধকেরও। কিন্তু এ দিন বৈঠকে তারা নিজেদের দাবি পেশ করেনি। সূত্রের খবর, কিছু দিন সময় চেয়েছে। তবে এমসের ডিরেক্টর রণদীপ গুলেরিয়ার আশা, ভারত বায়োটেকের দেশীয় প্রতিষেধক কোভ্যাক্সিন খুব দ্রুত অনুমোদন পেয়ে যাবে। তাঁর কথায়, ‘‘ভারত বায়োটেক এ দেশে বড় সংখ্যক মানুষের উপরে টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করেছে। প্রথম ও দ্বিতীয় পর্বে ফল ভাল। তৃতীয় পর্বের আংশিক ফলও ইতিমধ্যে জমা পড়েছে। সম্পূর্ণ রিপোর্ট জমা হলে, ওই প্রতিষেধকও ছাড়পত্র পেতে পারে।’’ গুলেরিয়ার দাবি, আগামী দিনে কোভ্যাক্সিন এবং রুশ টিকা স্পুটনিক ভি ছাড়পত্র পেলে, দেশে প্রতিষেধকের ঘাটতি থাকবে না।
পরীক্ষামূলক প্রয়োগের ইতিবাচক ফল দেখে আগেই প্রায় ৬-৭ কোটি কোভিশিল্ডের উৎপাদন সেরে রেখেছে সিরাম। সূত্রের খবর, সবুজ সঙ্কেতের পরে তারা সেই গতি বাড়াবে। দেশীয় বাজারের কথা মাথায় রেখে চলতি মাসের মধ্যে অন্তত ১০ কোটি টিকা তৈরি রাখতে চাইছে তারা।
আরও পড়ুন: রেকর্ড জিএসটি আদায় ডিসেম্বরে, ১ লক্ষ ১৫ হাজার কোটি
কেন্দ্র শেষ পর্যন্ত কত কোভিশিল্ড নেবে, তা এখনো চূড়ান্ত না-হলেও, সিরামের সিইও আদার পুনাওয়ালা জানিয়েছেন, তাঁদের তৈরি টিকার অর্ধেকই ভারতে ব্যবহৃত হবে। তাঁর দাবি, সরকার যদি প্রচুর সংখ্যায় কোভিশিল্ড কেনে, তাহলে দাম পড়বে ৩-৪ ডলার। অর্থাৎ, ২২০-৩০০ টাকা। তবে কেউ চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে বাজার থেকে কিনলে, দ্বিগুণ দাম গুনতে হবে।
আজ ছাড়পত্র দেওয়ার দিনে প্রতিষেধক আমদানি-রফতানিতেই বিধিনিষেধ তুলে নিল কেন্দ্র। শুল্ক পর্ষদ সংশোধনী পেশ করে জানিয়েছে, কী সংখ্যায় করোনা প্রতিষেধক আমদানি ও রফতানি করা হবে, তার উপরে নিষেধাজ্ঞা থাকছে না। পর্ষদের বক্তব্য, ‘‘এই টিকার সংরক্ষণ ও স্থানান্তকরণে নিয়ন্ত্রিত তাপমাত্রা প্রয়োজন। বিষয়টির সঙ্গে একাধিক সংস্থা জড়িত। ফলে, এই ধরনের প্রতিষেধক দ্রুত গন্তব্যে পাঠিয়ে দেওয়া জরুরি। তাই শুল্ক দফতর যাতে দ্রুত নিয়মকানুন জরিপ করে তা ছেড়ে দিতে পারে, তা নিশ্চিত করতেই ওই সিদ্ধান্ত।’’
আরও পড়ুন: এই তো সূর্য উঠল: ২০২১-কে স্বাগত জানিয়ে মোদীর কবিতা
কোভিশিল্ডের পিছনে অক্সফোর্ডের মতো নামী বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার ছাপ রয়েছে। সংরক্ষণের ক্ষেত্রেও তা ফাইজ়ারের টিকার মতো কঠিন ও ব্যয়সাধ্য নয়। এই সমস্ত কারণও এ দিনের প্রথম ছাড়পত্রের পিছনে কাজ করেছে বলে ধারণা অনেকের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy