মহারাষ্ট্রে মোট আক্রান্ত তিন লক্ষ ছাড়াল। গ্রাফিক-শৌভিক দেবনাথ।
দশ লাখ ছাড়িয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে চলেছে দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। গত দু’দিন রোজ নতুন সংক্রমণ হচ্ছিল ৩৫ হাজার মতো। রবিবার তা বেড়ে হল প্রায় ৩৯ হাজার! কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৩৮ হাজার ৯০২ জন নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন। ২৪ ঘণ্টার নিরিখে যা এখনও অবধি সর্বোচ্চ। এক দিনে এত সংখ্যক মানুষ এর আগে আক্রান্ত হননি। এ নিয়ে দেশে মোট আক্রান্ত হলেন দশ লক্ষ ৭৭ হাজার ৬১৮ জন। আক্রান্তের সঙ্গে সংক্রমণের হারও ঊর্ধ্বমুখী। প্রতিদিন যে সংখ্যক মানুষের টেস্ট হচ্ছে, তার মধ্যে যত শতাংশের রিপোর্ট কোভিড পজিটিভ আসছে, সেটাকেই বলা হচ্ছে ‘পজিটিভিটি রেট’ বা সংক্রমণের হার। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে সংক্রমণের হার ১০.৯ শতাংশ।
আক্রান্তের পাশাপাশি ধারাবাহিক ভাবে বাড়ছে মৃত্যু সংখ্যা। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুসারে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনার জেরে মৃত্যু হয়েছে ৫৪৩ জনের। এ নিয়ে দেশে মোট ২৬ হাজার ৮১৬ জনের প্রাণ কাড়ল করোনাভাইরাস। এর মধ্যে মহারাষ্ট্রেই মারা গিয়েছেন ১১ হাজার ৫৯৬ জন। মৃত্যুর তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা দিল্লিতে প্রাণ গিয়েছে তিন হাজার ৫৯৭ জনের। তামিলনাড়তে করোনা প্রাণ কেড়েছে দু’হাজার ৪০৩ জনের। গুজরাতে দু’হাজার ১২২ জনের। কর্নাটক (১,২৪০), উত্তরপ্রদেশ (১,১০৮) ও পশ্চিমবঙ্গে (১,০৭৬) মৃত্যুর সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে রোজদিন বাড়ছে। এর পর ক্রমান্বয়ে রয়েছে মধ্যপ্রদেশ (৭০৬), অন্ধ্রপ্রদেশ (৫৮৬), রাজস্থান (৫৫৩), তেলঙ্গানা (৪০৯), হরিয়ানা (৩৪৪), পঞ্জাব (২৪৬), জম্মু ও কাশ্মীর (২৩৬), বিহার (২০৮)। বাকি রাজ্যগুলিতে মৃতের সংখ্যা এখনও ১০০ পেরোয়নি। তবে শেষ ক’দিনে কর্নাটক ও অন্ধ্রপ্রদেশে দৈনিক মৃত্যু সংখ্যা বৃদ্ধি উদ্বেগ বাড়াচ্ছে বিশেষজ্ঞদের।
আক্রান্ত দ্রুত হারে বাড়লেও, ভারতে করোনা রোগীর সুস্থ হয়ে ওঠার পরিসংখ্যানটাও বেশ স্বস্তিদায়ক। আক্রান্ত হওয়ার পর এখনও পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন সাড়ে ছ’লক্ষেরও বেশি মানুষ। অর্থাৎ মোট আক্রান্তের ৬৩ শতাংশই সুস্থ হয়ে উঠছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ২৩ হাজার ৬৭২ জন সুস্থ হয়েছেন। এ নিয়ে মোট ছ’লক্ষ ৭৭ হাজার ৪২২ জন করোনার কবল থেকে মুক্ত হলেন।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
শুরু থেকেই মহারাষ্ট্রে বল্গাহীন ভাবে বেড়েছে সংক্রমণ। গোড়া থেকেই এই রাজ্য সংক্রমণের শীর্ষে রয়েছে। তার পর সময় যত গড়িয়েছে, এই রাজ্য নিয়ে সারা দেশের শঙ্কা বেড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় আট হাজারেরও বেশি নতুন সংক্রমণের জেরে সে রাজ্যে মোট আক্রান্ত তিন লক্ষ ছাড়াল। সাড়ে চার হাজারেরও বেশি বেড়ে তামিলনাড়ুতে মোট আক্রান্ত হলেন এক লক্ষ ২১ হাজার ৫৮২ জন। তুলনায় রাজধানী দিল্লিতে দৈনিক সংক্রমণে কিছুটা হলেও লাগাম পড়েছে। সেখানে মোট আক্রান্তের সংখ্যা এক লক্ষ ২১ হাজার ৫৮২ জন।
বিগত কয়েকদিনে কর্নাটকে দৈনিক সংক্রমণ হচ্ছে চার হাজারেরও বেশি। যার জেরে সংক্রমণ তালিকার চতুর্থ স্থানে উঠে এসেছে দক্ষিণের এই রাজ্য। সেখানে মোট আক্রান্ত ৫৯ হাজার ৬৫২ জন। গুজরাত (৪৭,৩৯০), উত্তরপ্রদেশ (৪৭,০৩৬), অন্ধ্রপ্রদেশে (৪৪,৬০৯), তেলঙ্গানা (৪৩,৭৮০) ও পশ্চিমবঙ্গে (৪০,২০৯) আক্রান্তের সংখ্যা রোজদিন উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে চলেছে। এর পর ক্রমান্বয়ে রয়েছে রাজস্থান (২৮,৫০০), হরিয়ানা (২৫,৫৪৭), বিহার (২৫,১৩৬), অসম (২২,৯১৮), মধ্যপ্রদেশ (২১,৭৬৩), ওড়িশা (১৬,৭০১), জম্মু ও কাশ্মীর (১৩,১৯৮), কেরল (১১,৬৫৯) ও পঞ্জাব (৯,৭৯২)। ছত্তীসগঢ়, ঝাড়খণ্ড, উত্তরাখণ্ড, গোয়া, ত্রিপুরার মতো রাজ্যে মোট আক্রান্ত এখনও ১০ হাজারের কম।
পশ্চিমবঙ্গেও রোজ দিন উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে কোভিডে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন দু’হাজারেরও বেশি (২,১৯৮)। যা এক দিনের নিরিখে সর্বোচ্চ। এই নিয়ে রাজ্যে করোনায় মোট আক্রান্ত হলেন ৪০ হাজার ২০৯ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ২৭ জনের। রাজ্যে এ পর্যন্ত রাজ্যে মোট মৃত্যু হল এক হাজার ৭৬ জনের।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
(চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হল— সেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দু’দিনের সংখ্যা এবং তার পরের দু’দিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবে— দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ৪৯৫৬। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ৫২৬৯। তার আগের দু’দিন ছিল ৩৯৭০ এবং ৪৯৮৭। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ৪৯৪৩ এবং ৫৬১১। ১৬ থেকে ২০ মে, এই পাঁচ দিনের গড় হল ৪৯৫৬, যা ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র আক্রান্তের সংখ্যার গড়। পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy