Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus Lockdown

সংক্রমণ বনাম জীবিকা: আজ থেকে লকডাউনের তৃতীয় দফায় দেশ

দু’দফায় ৪০ দিনের লকডাউনে হাঁপিয়ে ওঠা দেশের ঘরবন্দি দশার মেয়াদ বেড়েছে আরও দু’সপ্তাহ। আপাতত ১৭ মে পর্যন্ত।

ছবি: পিটিআই।

ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০২০ ০৪:৩০
Share: Save:

সংক্রমণের ছোবল এড়িয়ে জীবন বাঁচাতে আপাতত ঘরে ‘বন্দি’ থাকা ছাড়া উপায় নেই। কিন্তু জীবিকা বাঁচাতে জরুরি বাইরে পা রাখা। ভারসাম্যের এই সরু দড়ির উপরে হেঁটেই আজ, সোমবার থেকে তৃতীয় দফার লকডাউনে ঢুকে পড়ছে রাজ্য, সারা দেশও।

২৫ মার্চ থেকে ১৪ এপ্রিল। ১৫ এপ্রিল থেকে ৩ মে। দু’দফায় ৪০ দিনের লকডাউনে হাঁপিয়ে ওঠা দেশের ঘরবন্দি দশার মেয়াদ বেড়েছে আরও দু’সপ্তাহ। আপাতত ১৭ মে পর্যন্ত। তবে গ্রিন জ়োনগুলিতে কড়াকড়ি কিছুটা কম। তুলনায় অরেঞ্জ জ়োন আঁটোসাঁটো। রেড জ়োন আগের মতোই। নতুন করোনা রোগীর খোঁজ পাওয়া অনুযায়ী, এই জ়োন-মানচিত্রও বদলে যাবে প্রতি সপ্তাহে। নিয়মের কড়াকড়িও পাল্টাবে সেই অনুযায়ী।

ভারতে করোনা পরীক্ষা যত জনের হয়েছে, তা দেশের জনসংখ্যার তুলনায় নগণ্য। দৈনিক পরীক্ষার সংখ্যাও তা-ই। কিন্তু তাতেই রবিবার কেন্দ্রের সান্ধ্য বুলেটিন অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন করে ওই মারণ অতিমারিতে আক্রান্ত হয়েছেন ২৬৪৪ জন। মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৪০,২৬৩। গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ৮৩ জনের। আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যার হিসেবে দুটি-ই এখনও পর্যন্ত এক দিনে সব থেকে বেশি। এই পরিস্থিতিতে সারা দেশের দরজা হাট করে খুলে দেওয়া যে সম্ভব নয়, তা মানছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞেরা। কারণ, এই রোগের সঙ্গে যুদ্ধে পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখা আর যত বেশি সম্ভব করোনা-পরীক্ষাকেই ঢাল এবং তলোয়ার ভাবছেন তাঁরা। তাই সেই হিসেবে লকডাউন লম্বা হওয়া হয়তো অপ্রত্যাশিত নয়।

আরও পড়ুন: করোনায় প্রাণহানি পঞ্চাশ ছুঁল রাজ্যে

কিন্তু লকডাউন যত লম্বা হচ্ছে, মন্দার মেঘ তত জমাট বাঁধছে অর্থনীতির আকাশে। এমনিতেই গত বছর থেকে অর্থনীতির হাল করুণ। তার উপরে লকডাউনের জেরে প্রায় সমস্ত আর্থিক কর্মকাণ্ড চল্লিশ দিনেরও বেশি বন্ধ। অধিকাংশ কল-কারখানা তালাবন্দি। ফলে পেটে হাত পড়েছে খেটে খাওয়া শ্রমিক, দিন আনা-দিন খাওয়া দরিদ্রের। বহু লোকের কাজ গিয়েছে। যাচ্ছেও প্রতি দিন। যে দেশে ৯০ শতাংশের বেশি কর্মীর সংসার চলে অসংগঠিত ক্ষেত্রের রোজগারে, সেই দেশ দীর্ঘ দিন ঘরবন্দি থাকলে, অনাহারে মৃত্যুর সংখ্যা করোনায় প্রাণ হারানোর থেকে অনেক বেশি হতে পারে বলে বারবার সাবধান করছেন অর্থনীতিবিদেরা। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন থেকে কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তথা বিশ্ব ব্যাঙ্কের প্রাক্তন ভাইস প্রেসিডেন্ট কৌশিক বসু- সকলেরই পরামর্শ, “সরকারকে এ বার লকডাউন তুলতে হবে যতটা সম্ভব দ্রুত, কিন্তু সাবধানে। ঝুঁকি না-নিয়ে কিন্তু বুদ্ধি করে।”

আরও পড়ুন: হাসপাতালে ফুল না ছড়িয়ে পিপিই পাঠান, তির বিঁধছে টুইটার

নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমদের পরামর্শ, অবিলম্বে কাজ খোয়ানো শ্রমিক, বিপর্যস্ত দরিদ্র এবং বিধ্বস্ত ছোট-মাঝারি শিল্পের পাশে দাঁড়াতে ত্রাণ প্রকল্প ঘোষণা করুক সরকার। সরাসরি হাতে টাকা দিক গরিবের। এত দিনেও তা সে ভাবে করা হল না কেন, সে প্রশ্নও তুলছেন বিরোধীরা। অর্থনীতির চাকাকে ফের সচল করতে একের পর এক মন্ত্রকের সঙ্গে বৈঠক করছেন প্রধানমন্ত্রী। সরকারি সূত্রে ইঙ্গিত, ত্রাণ প্রকল্প আসছে শীঘ্রই।

কতটুকু ত্রাণ এল, খাদ থেকে অর্থনীতিকে টেনে তুলে কাজ ফেরানোর বন্দোবস্ত করা যাচ্ছে কি না, সোমবার থেকেই সেই অগ্নিপরীক্ষা কেন্দ্রের। আর একটু-একটু করে বাইরে পা বাড়ানো সাধারণ মানুষের পরীক্ষা সম্ভবত ভয় না-পেয়ে ভাইরাসের সঙ্গে ঘর করা।


(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Lockdown COVID-19
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE