গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
লকডাউন ঘোষণার আড়াই মাস পরেও দিল্লিতে করোনাভাইরাস সংক্রমণ দ্রুতগতিতে বেড়ে চলেছে। গত ১০ দিনে সেখানে নতুন করে ১০ হাজার ৪৭৫ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে মঙ্গলবারই ১ হাজার ৩৬৬ জন নতুন কোভিড-১৯ রোগী চিহ্নিত হয়েছেন। এই আবহে বুধবার দিল্লির উপমুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসৌদিয়া জানিয়েছেন, জুলাই মাসে পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ হতে পারে ধরে নিয়ে সম্ভাব্য ক্ষতি নিয়ন্ত্রণের প্রস্তুতি শুরু করেছেন তাঁরা।
এ দিন মণীশ বলেন, ‘‘আমাদের পুরো পরিকাঠামোই এখন ব্যবহার করা হচ্ছে। পরিস্থিতি এখনও পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণে। তবে ক্ষতি হচ্ছে এবং আমরা তা কমানোর চেষ্টা চালাচ্ছি।’’ দিল্লির বিপর্যয় মোকাবিলা কর্তৃপক্ষের (ডিডিএমএ) আধিকারিক এবং কেন্দ্রের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের পরে মঙ্গলবার তিনি জানিয়েছিলেন, আগামী ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে দেশের রাজধানী অঞ্চলে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে পাঁচ লক্ষ ছুঁতে পারে। সে ক্ষেত্রে দিল্লিবাসীর জন্য হাসপাতালগুলিতে অন্তত ৮০ হাজার বেডের প্রয়োজন হবে। যদিও মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল জানিয়েছেন, গত কয়েক মাসের প্রবণতা বলছে, করোনা আক্রান্তদের অন্তত ৫০ শতাংশ দিল্লির বাইরে থেকে এসেছেন। ফলে জুলাই মাসে বেডের চাহিদা দেড় লক্ষে পৌঁছতে পারে। তবে আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুতহারে বাড়লেও দিল্লিতে এখনও গোষ্ঠী সংক্রমণ শুরু হয়নি বলে দাবি করেছেন সিদৌদিয়া। যদিও দিল্লির বিশিষ্ট চিকিৎসক এবং ‘প্রোগ্রেসিভ মেডিকোজ অ্যান্ড সায়েন্সিস্ট ফোরাম’-এর সভাপতি হরজিৎ সিংহ ভাট্টি এ দিন বলেন, ‘‘ছবিটা খুবই খারাপ। আসন্ন বিপদের গুরুত্ব কেউ অনুধাবন করেছেন বলে তো মনে হচ্ছে না!’’
সরকারি পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, এ দিন দিল্লিতে করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছেছে ৩১ হাজার ৩০৯-এ। গত ১ জুন তা ছিল ২০ হাজার ৮৩৪। গত আড়াই মাসে করোনা আক্রান্তের সংখ্যাবৃদ্ধির হার পর্যালোচনা করে দিল্লি সরকারের অনুমান, আগামী সোমবার আক্রান্তের সংখ্যা ৪৪ হাজারে পৌঁছবে। জুলাইয়ের প্রথম দিনেই এক লক্ষ পেরিয়ে মাসের ১৫ তারিখে তা পৌঁছবে ২ লক্ষ ২৫ হাজারে। গত ১ এপ্রিল দিল্লিতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল মাত্র ১৫২। মাত্র ১৫ দিনেই আরও ১ হাজার ৪২৬ জন নতুন আক্রান্তের সন্ধান মিলেছিল। ১ মে সেই সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে পৌঁছয় ৩ হাজার ৭৩৮-এ। অগ্রগতির সেই ধারা মেনেই মে মাসের ১৫ তারিখে আক্রান্তের সংখ্যা হয় ৮ হাজার ৮৯৫। এর পর ১ জুনের সমীক্ষা জানায়, ১১ হাজার ৯৩৯ জন নয়া আক্রান্তের সংযোজনের ফলে সংখ্যা ২০ হাজার ৮৩৪-এ পৌঁছেছে। জুনের প্রথম ১০ দিনেই আক্রান্তের সংখ্যা ৩১ হাজার ৩০৯ ছোঁয়ায় স্পষ্ট, দিল্লিতে জুনের প্রথম পক্ষকাল নয়া রেকর্ড গড়তে চলেছে।
আরও পড়ুন: ভারতে এই প্রথম সুস্থ হয়ে ওঠার সংখ্যা পেরিয়ে গেল সক্রিয় করোনা রোগীর সংখ্যাকে
পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে কেজরীবাল এ দিন কেন্দ্রের সঙ্গে সঙ্ঘাতের পথ থেকে সরে আসার বার্তা দিয়েছেন। ‘সেল্ফ কোয়রান্টিন’ থেকে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা, তাঁর সরকার কোভিড-১৯ সংক্রমণ ঠেকাতে লেফটেন্যান্ট গভর্নর অনিল বৈজলের নির্দেশ মেনেই কাজ করবে। কেজবীবালের কথায়, ‘‘এখন রাজনীতির সময় নয়, মতপার্থক্যের সময়ও নয়।’’ দ্রুতহারে করোনা সংক্রমণ দেখে কেজরীবাল সরকার দিল্লির কিছু সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালকে শুধুমাত্র দিল্লিবাসীর চিকিৎসার জন্য সংরক্ষিত রাখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বৈজল সোমবার সেই সিদ্ধান্ত খারিজ করে দেন। এ নিয়ে ফের সঙ্ঘাতের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল। কিন্তু আম আদমি পার্টির প্রধান এ দিন স্পষ্ট করে দিয়েছেন, কেন্দ্রের প্রতিনিধির সঙ্গে ঝগড়া করে তিনি করোনাকে জিততে দিতে চান না। তাঁর দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী দিল্লির করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঘটনাগুলির মধ্যে সক্রিয় করোনা রোগীর সংখ্যা প্রায় ১৮ হাজার। এঁদের মধ্যে ১ হাজার ৯০০ জন গত আট দিন ধরে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ১৫ হাজার জনের ‘হোম আইসোলেশনে’ চিকিৎসা চলছে। এখনও বিভিন্ন হাসপাতালে ৪ হাজার বেড খালি রয়েছে বলে জানান তিনি। এমস কর্তৃপক্ষ এ দিন জানিয়েছেন, করোনা পরিস্থিতিতে মোট ৫৫ হাজার জনকে টেলি-কনসালট্যান্সি পরিষেবা দেওয়া হয়েছে। করোনা আক্রান্ত নন, এমন ১০ হাজার ৬০৯ জন রোগীর লকডাউন পর্বে চিকিৎসা হয়েছে।
আরও পড়ুন: এ বার ফিরতে পারে হাম, পোলিও, রুবেলার মহামারি, বিপন্ন আট কোটি শিশু, হুঁশিয়ারি হু, ইউনিসেফের
করোনা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় এ দিন ফের জামা মসজিদ বন্ধ রাখার কথা ঘোষণা করেছেন শাহি ইমাম সৈয়দ আহমেদ বুখারি। প্রায় দু’মাস বন্ধ থাকার পরে সোমবারই দরজা খুলেছিল সাড়ে তিনশো বছরের প্রাচীন এই মসজিদের। বুখারি এ দিন বলেন, ‘‘রমজান মাসেও এখানে নমাজ পাঠ বন্ধ রাখা হয়েছিল। সরকার আনলক-১ পর্বে কিছু বিধিনিষেধ শিথিল করাতেই আমরা মসজিদ খুলেছিলাম। কিন্তু বতর্মান পরিস্থিতিতে আমাদের অনুরোধ, এলাকার অন্য মসজিদগুলিও যেন বন্ধ রাখা হয়। জমায়েত না-করে বাড়িতেই সকলে নমাজ পড়ুন।’ কোভিড-১৯ আক্রান্ত বুখারির সচিব আমানুল্লা মঙ্গলবার রাতেই দিল্লির সফদরজং হাসপাতালে মারা যান। তার পরেই দ্রুত এই সিদ্ধান্ত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy