দেশবাসীর উদ্দেশে ভাষণ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। মোবাইলে মগ্ন জবলপুরের এক বাসিন্দা। বৃহস্পতিবার। পিটিআই
করোনা যুদ্ধে দেশবাসীর কাছে সময় চাইলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আপাতত ১৪ ঘণ্টা। আগামী রবিবার সকাল ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত জনতা কার্ফুর ডাক দিলেন তিনি। সে-দিন জরুরি পরিষেবার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি ছাড়া আর সবাইকে ১৪ ঘণ্টা ঘরে থাকতে বলেছেন মোদী। অনেকেরই মতে, যে-গতিতে ভারতে করোনা সংক্রমণ ছড়াচ্ছে, তাতে আগামী দিনে চিন-ইটালির মতো দীর্ঘকালীন ‘লকডাউন’-এর পথে হাঁটতে হতে পারে গোটা দেশকে। রবিবার তারই মহড়া সেরে রাখতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী।
আজ রাত পর্যন্ত দেশে করোনায় মৃতের সংখ্যা ৪। আজ পঞ্জাবের হোসিয়ারপুরে মারা গিয়েছেন ৭০ বছরের এক বৃদ্ধ। আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ২০০। যদিও আজ বিকেলেই স্বাস্থ্য মন্ত্রকের কর্তারা দাবি করেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। অযথা উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই। কিন্তু মোদী স্পষ্ট বলেছেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক বলে যে-প্রচার চালানো হচ্ছে, বলা হচ্ছে করোনা থেকে কিছু হবে না— এমন ভাবা আদৌ ঠিক নয়। বরং ভীষণ ভাবে সতর্ক থাকা প্রয়োজন। তাঁর কথায়, ‘‘করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে দেশের লোকের কাছে আমি কিছু সপ্তাহ চাই। কিছু সময় চাই।’’
কালই জানানো হয়েছিল, আজ রাত ৮টায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। আজ দুপুরের পর থেকেই জল্পনা শুরু হয়, গোটা দেশে ‘লকডাউন’ বা সব কিছু বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা করতে পারেন তিনি। হোয়াটসঅ্যাপে ঘুরতে থাকতে ভুয়ো সরকারি নির্দেশিকা। শেষ পর্যন্ত লকডাউনের ঘোষণা হল বটে, তবে আংশিক। মোদীর কথায়, ‘‘এ হল জনতা কার্ফু। জনতার জন্য জনতার জারি করা যে কার্ফু।’’ তাঁর আবেদন, ২২ মার্চ সকাল ৭টা থেকে রাত ন’টা পর্যন্ত কেউ যেন এমনকি পাড়ার মোড়ের আড্ডাতেও না-যান। তবে পুলিশ, দমকল, স্বাস্থ্য, সংবাদমাধ্যম ইত্যাদি জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত মানুষজন কাজে যাবেন। তাঁদের সম্মান জানাতে সকলকে সে-দিন বিকেল ৫টায় বাড়ির দরজা, বারান্দা, জানালায় দাঁড়িয়ে পাঁচ মিনিট হাততালি দিতে বা ঘণ্টা বাজাতে অনুরোধ করেন মোদী।
কেন এই জনতা কার্ফু?
মোদী বলেন, ‘‘করোনার কোনও টিকা নেই। করোনাভাইরাসের কবল হওয়া দেশগুলিতে দেখা গিয়েছে, কিছু দিন পরে হঠাৎ করে ওই সংক্রমণের বিস্ফোরণ ঘটেছে। রোগীর সংখ্যা হঠাৎ এক ধাক্কায় বেড়ে গিয়েছে।’’ স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতে করোনা সংক্রমণ এখন দ্বিতীয় পর্যায়ে রয়েছে। কিন্তু তা যদি কোনও ভাবে চিন বা ইটালির মতো পরবর্তী ধাপে অর্থাৎ গোষ্ঠী সংক্রমণের পর্যায়ে চলে যায়, তা হলে ভারতের মতো বিপুল জনঘনত্ব ও দুর্বল স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর দেশে পরিস্থিতি সামলানো কঠিন হবে। কিন্তু কংগ্রেস নেতৃত্বের পাল্টা প্রশ্ন, এক দিন কার্ফু ডেকে কী লাভ হবে? সরকারের উচিত নিজেদের পরিকল্পনা দেশবাসীকে জানানো। যাতে মানুষ প্রস্তুত থাকতে পারে।
যদিও আজ বিকেলে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের যুগ্মসচিব লব আগরওয়াল বলেন, ‘‘এখনও দেশে গোষ্ঠী সংক্রমণের প্রমাণ মেলেনি। সে-ভাবে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়েনি। সংক্রমণ যাতে না-ছড়ায়, সেই জন্য সরকার তৎপর।’’ আজ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ৮২৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করেছে আইসিএমআর। কারও শরীরেই করোনাভাইরাস পাওয়া যায়নি। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের এক কর্তার বক্তব্য, দ্বিতীয় পর্যায়ে করোনা রোগীর সরাসরি সংস্পর্শে এলে বা করোনা তাণ্ডব চালিয়েছে, এমন দেশে সফর করলে সংক্রমণ হয়। কিন্তু তৃতীয় পর্যায়ে ওই দু’টি কারণ ছাড়াও আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
এরই মধ্যে করোনা চিহ্নিতকরণে বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে মতপার্থক্য বাড়ছে সরকারের। সরকার জানিয়েছে যে সব পরীক্ষাগারে এইচ১এন১ ভাইরাস চিহ্নিতকরণের পরিকাঠামো রয়েছে, তারাই প্রথম ধাপে করোনার পরীক্ষা করতে পারবে। কিন্তু সরকার চাইছে জনস্বার্থে বিনামূল্যে ওই পরীক্ষা করুক পরীক্ষাগারগুলি। অধিকাংশ বেসরকারি কেন্দ্র তাতে রাজি নয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy