নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।
করোনাভাইরাস রুখতে ভারত সবার আগে তৎপর হয়েছে বলে আজ দাবি করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আর তাঁর এই দাবি নিয়েই উঠছে বহু প্রশ্ন।
এ দিন জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে মোদী দাবি করেন, সংক্রমণ পরীক্ষা থেকে শুরু করে দ্রুত লকডাউনের ব্যবস্থা নেওয়া— সবেতেই বিশ্বের মধ্যে এগিয়ে ভারত। প্রশ্ন উঠেছে, যদি তা-ই হয়, তা হলে আজ কেন বিপদের মুখে দাঁড়িয়ে ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীরা? কেনই বা দেশের জনসংখ্যার তুলনায় টেস্ট-এর সংখ্যা এত কম? করোনা নিয়ে গোটা বিশ্বে আতঙ্ক ছড়ানোর পরেও কেন তবলিগি জামাতের বিদেশি সদস্যদের ঢুকতে এবং সমাবেশ করতে দেওয়া হল দিল্লিতে? কেনই বা বিদেশ থেকে আসা লোকেদের নামমাত্র পরীক্ষা করেই দেশের যত্রতত্র ঘুরতে দেওয়া হল? বিরোধীদের বক্তব্য, এই প্রশ্নগুলি আগেও ছিল, এখন আরও বেশি করে উঠছে।
এ দিন মোদী বলেন, ‘‘অন্যান্য দেশের তুলনায় আমরা অনেক আগে থেকে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছি। দেশে এক জন করোনা-আক্রান্ত ধরা পড়ার আগেই আক্রান্ত দেশগুলি থেকে আসা পর্যটকদের বিমানবন্দরে পরীক্ষা করা হয়েছে। করোনা আক্রান্তের সংখ্যা একশোয় পৌঁছনোর অনেক আগেই বিদেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের ১৪ দিনের কোয়রান্টিন বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল শপিংমল, ক্লাব, জিম।’’ এর পর বলেন, ‘‘যখন মাত্র ৫৫০ জন করোনা রোগী ছিলেন, আমরা ২১ দিনের জন্য সম্পূর্ণ লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিই। সমস্যার মূলোচ্ছেদ করতে আমরা সমস্ত সিদ্ধান্ত দ্রুত নিয়েছি।’’
বিরোধীদের বক্তব্য, দ্রুত পদক্ষেপ করা নিয়ে মোদীর দাবি সত্য নয়। ঘটনা হল, এখনও পর্যন্ত দেশে মোট করোনা পরীক্ষা হয়েছে ২ লাখ ৩১ হাজার ৯০২টি। প্রধানমন্ত্রীর দাবি, ভারতে একটিও সংক্রমণের ঘটনা না থাকার সময় থেকেই করোনা আক্রান্ত দেশগুলি থেকে আসা যাত্রীদের পরীক্ষা করা হয়েছে। ৩০ জানুয়ারি ভারতে প্রথম করোনা-আক্রান্ত রোগী চিহ্নিত হন। তার আগেই কুড়িটি দেশে করোনা ছড়ায়। সূত্রের মতে, সে সময় শুধু চিন এবং হংকং থেকে আসা যাত্রীদেরই পরীক্ষা করা হচ্ছিল। তা-ও নামমাত্র। মার্চের তৃতীয় সপ্তাহের আগে তাঁদের কোয়রান্টিনও করা হয়নি।
আরও পড়ুন: এ বার গোষ্ঠী সংক্রমণ রুখতে নজর বস্তিতে
আরও পড়ুন: ‘খেতে পাচ্ছি না, আরও ১৯ দিন কী ভাবে কাটাব’
আজ কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী টুইট করে বলেন, ‘‘ভারত টেস্ট কিট কিনতে দেরি করেছে এবং এখন কিট-এর আকাল দেশে। প্রতি দশ লাখে মাত্র ১৪৯ জনকে পরীক্ষা করা হয়েছে! আমরা এখন লাওস (১৫৭), নাইজার (১৮২) এবং হন্ডুরাসের (১৬২)-এর সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছি!’’ সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরির কথায়, ‘‘৩০ জানুয়ারি দেশে প্রথম করোনা আক্রান্তের খোঁজ মেলে। অথচ সরকার মার্চের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত কিছুই করেনি। সরকার দাবি করছে, বাইরে থেকে যাঁরা এসেছেন, তাঁদের পরীক্ষা করা হয়েছে অথবা কোয়রান্টিনে পাঠানো হয়েছে। তা হলে দিল্লিতে ধর্মীয় জমায়েত কী করে হল? ওই কারণে সংক্রমণ বহু গুণ বেড়েছে। ভারতে প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ার পরেও সরকার দু’মাস লাগিয়েছে সক্রিয় হতে।’’ চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সাজসরঞ্জাম এবং টেস্টিং কিট আমদানি করতেও ভারত দেরি করেছে বলে অভিযোগ তাঁর। নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ব্রহ্মা চালানির প্রশ্ন, কী ভাবে তবলিগি জামাতকে টানা ১৮ দিন দিল্লিতে সমাবেশ করার অনুমতি দিল কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকা দিল্লি পুলিশ?
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy