কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন।—ছবি পিটিআই।
টানা ২১ দিন ঘরবন্দি থাকলে গরিব মানুষ, দিনমজুরের পেট চলবে কী করে— এই প্রশ্নের মুখে আজ ‘প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ যোজনা’ ঘোষণা করল নরেন্দ্র মোদী সরকার। কিন্তু তাতে আখেরে গরিবদের কতটা সুরাহা হবে, এই যোজনার কতটা নতুন মোড়কে পুরনো প্রকল্প, প্রশ্ন তুলল বিরোধীরা।
এ দিন কল্যাণ যোজনার কথা ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন জানান, পিএম-কিসান প্রকল্পে যে চাষিরা অর্থসাহায্য পান, তাঁদের প্রথম কিস্তির ২ হাজার টাকা এপ্রিলের গোড়াতেই দিয়ে দেওয়া হবে। এখন কথা হল, এই টাকা তো তাঁদের এমনিতেই পাওয়ার কথা। একটু আগে দেওয়া হচ্ছে এই যা।
বাংলার তৃণমূল সরকার একে ‘তঞ্চকতা’ আখ্যা দিয়েছে। রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী-কিসান যোজনায় যে টাকা পাওয়ার কথা, সেটাই চাষিরা পাবেন। তাঁদের জন্য আলাদা কিছু কেন্দ্র করছে না। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে বাংলার কৃষকদের জন্য এর চেয়ে অনেক বেশি সহায়তার ব্যবস্থা রাজ্যের আছে।’’
এ দিন একশো দিনের কাজে গড় দৈনিক মজুরি ২০ টাকা করে বাড়ানোর বলেছেন নির্মলা। ঘটনা হল, প্রতি বছরই মূল্যবৃদ্ধির কথা মাথায় রেখে এপ্রিলে মজুরি বাড়ানো হয়।
প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ যোজনা
• রেশনে তিন মাস নিখরচায় মাসে মাথাপিছু ৫ কেজি চাল বা গম, পরিবার-পিছু ১ কেজি ডাল পাবেন ৮০ কোটি গরিব।
• ৮.৭ কোটি চাষিকে পিএম-কিসান প্রকল্পের প্রথম কিস্তির ২ হাজার টাকা এপ্রিলের গোড়ায়।
• ১৩.৬২ কোটি পরিবারের জন্য ১০০ দিনের কাজে গড় দৈনিক মজুরি ২০ টাকা বাড়বে (রাজ্যে ১৩ টাকা বেড়ে ২০৪ টাকা)।
• ৩ কোটি গরিব প্রতিবন্ধী, বয়স্ক, বিধবার জন্য ১ হাজার টাকা, দু’কিস্তিতে।
• ২০.৪ কোটি মহিলার জনধন অ্যাকাউন্টে মাসে ৫০০ টাকা, তিন মাস।
• ৮.৩ কোটি বিপিএল পরিবারকে আগামী ৩ মাস নিখরচায় গ্যাস সিলিন্ডার।
• ৬৩ লক্ষ মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে বন্ধক ছাড়া ঋণ ১০ লক্ষ টাকা থেকে বেড়ে ২০ লক্ষ।
• ১০০ বা তার কম কর্মী আছে এবং ৯০%-র বেতন ১৫ হাজারের নীচে, এমন ৪ লক্ষ সংস্থার ৮০ লক্ষ কর্মীর বেতনের ২৪% তিন মাস পিএফে দেবে কেন্দ্র।
• পিএফ থেকে ফেরত-অযোগ্য অগ্রিমের ৭৫% বা তিন মাসের বেতনের মধ্যে যার পরিমাণ কম, সেই অর্থ তোলা যাবে।
• ৩.৫ কোটি নির্মাণ কর্মীর সুরাহায় কল্যাণ তহবিলের ৩১ হাজার কোটি টাকা খরচের নির্দেশ রাজ্যকে।
করোনা চিকিৎসার সময় দুর্ঘটনা ঘটলে সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ২২ লক্ষ ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, টেকনিশিয়ান, ওয়ার্ড-বয়, সাফাই কর্মী, আশা-কর্মীদের জন্য ৫০ লক্ষ টাকার বিমা।
প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ যোজনার আওতায় আগামী তিন মাস গরিব মানুষের জন্য নিখরচায় বাড়তি চাল-ডাল-গম; গরিব মহিলা, বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধীদের টাকা; গরিব পরিবারের জন্য নিখরচায় গ্যাস; ছোট সংস্থার কর্মীদের পিএফ-এর দায় নেওয়া— ইত্যাদি সুরাহা আজ ঘোষণা করেছে কেন্দ্র। পাশাপাশি, করোনা-আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় নিযুক্ত সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মোট ২২ লক্ষ ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্য কর্মী, টেকনিসিয়ান, ওয়ার্ড-বয়, সাফাই কর্মচারী, আশা-কর্মীদের জন্য ৫০ লক্ষ টাকার বিমাও ঘোষণা করা হয়েছে।
নির্মলার দাবি, সব মিলিয়ে ১ লক্ষ ৭০ হাজার কোটি টাকা খরচ হবে। কিন্তু এই অঙ্ক কোথা থেকে এল, কোন খাতে কত টাকা খরচ হবে, তার ব্যাখ্যা মেলেনি। টাকার সংস্থান কোথা থেকে হবে, বাড়তি খরচের জন্য সরকার ধার করবে কি না, বা রাজকোষ ঘাটতি কতটা বাড়বে, তারও জবাব মেলেনি।
তবে মোদীর দাবি, এই প্যাকেজের ফলে গরিব ও অশক্তদের জীবন ও খাদ্য-নিরাপত্তা সুনিশ্চিত হবে। তাঁর টুইট: ‘এই কঠিন সময়ে গরিবরা যাতে সব রকম সাহায্য পান, সেটা নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য।’
কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী বৃহস্পতিবার সকালেই প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে পিএম-কিসান প্রকল্পের চাষি, মহিলা, বয়স্ক, বিধবা, মনরেগা-কর্মীদের অ্যাকাউন্টে ৭,৫০০ টাকা করে দেওয়ার সুপারিশ করেছিলেন। সরকারি ঘোষণার পরে রাহুল গাঁধী একে ঠিক দিকে প্রথম পদক্ষেপ বলে সাধুবাদ জানালেও, কংগ্রেসের মতে, গরিবরা খুব সামান্যই টাকা পাবেন।
কংগ্রেস নেতা রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা বলেন, ‘‘সভানেত্রী মোট ৭৫০০ টাকা দেওয়ার কথা বলেছিলেন। সেখানে কেন্দ্র মহিলাদের তিন মাস ধরে মাসে মাত্র ৫০০ টাকা করে দিচ্ছে। এতে কী লাভ হবে? গরিব বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধীদের জন্য মাত্র ১ হাজার টাকাতেই বা কী লাভ হবে?’’
সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির যুক্তি, নিজেদের রাজ্যে ফিরতে বাধ্য হওয়া শ্রমিকদের জন্য তো কোনও সুরাহাই মিলল না। কংগ্রেস, সিপিএমের মতে, যেখানে আয়ের পথ বন্ধ, সেখানে মাসে মাথা পিছু ৫ কেজি চাল বা গম ও পরিবার পিছু মাত্র ১ কেজি ডাল একেবারেই যথেষ্ট নয়। উজ্জ্বলা যোজনায় ৮.৩ কোটি বিপিএল পরিবারকে ৩ মাস নিখরচায় গ্যাস সিলিন্ডার দেবে কেন্দ্র। গরিব পরিবারগুলি তিন মাসে একটি সিলিন্ডারও ব্যবহার করে কি না সন্দেহ। নির্মাণকর্মীদের কল্যাণ তহবিল থেকে রাজ্যকে খরচ করতে বলেই দায় সেরেছে কেন্দ্র। ওই তহবিলে কেন্দ্রের কোনও টাকা নেই।
কেন্দ্রের আর্থিক প্যাকেজে অসংগঠিত ক্ষেত্রের ৮ কোটি ব্যবসায়ী এবং ১০ কোটি শ্রমিকের মতো ‘প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের’ কোনও সুরাহা হবে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রথম মোদী সরকারের অর্থসচিব সুভাষচন্দ্র গর্গ। তাঁর মতে, এঁদের জন্য ১ লক্ষ কোটি টাকা সাহায্যের প্রয়োজন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy