গত কয়েক দিনে ভারতে যে ভাবে নতুন সংক্রমণ বাড়ছে, তা গোটা করোনাকালে বিশ্বের কোনও দেশে হয়নি। গ্রাফিক- শৌভিক দেবনাথ।
গত কাল রাতেই আন্তর্জাতিক সমীক্ষায় দেশে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা পেরিয়ে গিয়েছিল ৪২ লক্ষ।
রাত পোহাতেই কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকও জানাল, দেশে সংক্রমিতের সংখ্যা ৪২ লক্ষ পেরিয়ে গিয়েছে। সঙ্গে গত কালের দৈনিক সংক্রমণের রেকর্ড (৯০,৬৩২) ভেঙে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে আক্রান্তের সংখ্যা ৯০,৮০২। মৃতের সংখ্যাও ছাড়িয়েছে ৭১ হাজারের গণ্ডি। গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ১০১৬ জনের।
তবে পাশাপাশি বেড়েছে সুস্থের সংখ্যাও। এখনও পর্যন্ত দেশে সুস্থ হয়ে উঠেছেন সাড়ে ৩২ লক্ষেরও বেশি মানুষ। সুস্থতার হার ৭৭.৩১%। বর্তমানে অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যা প্রায় ৯ লক্ষ। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, ‘টেস্ট-ট্র্যাক-ট্রিট’ নীতি মেনেই বেড়েছে সুস্থের সংখ্যা। কমেছে মৃত্যুহার (১.৭%)।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
দেশে মোট সংক্রমণের ৬০ শতাংশই প্রথম পাঁচটি রাজ্যে। এগুলি হল যথাক্রমে মহারাষ্ট্র (২১.৬%), অন্ধ্রপ্রদেশ (১১.৮%), তামিলনাড়ু (১১.০%), কর্নাটক (৯.৫%), উত্তরপ্রদেশ (৬.৩%)। অ্যাক্টিভ রোগীও সবচেয়ে বেশি মহারাষ্ট্রেই। তবে গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থতার নিরিখে দেশে প্রথম অন্ধ্রপ্রদেশ (১১,৯১৫)।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
করোনা-আক্রান্তের বিশ্ব ক্রমতালিকায় ব্রাজিলকে ছাপিয়ে সংখ্যার নিরিখে ভারত দু’নম্বরে উঠে আসার পরে কংগ্রেসের নিশানায় নরেন্দ্র মোদী সরকার। আজ তারা প্রশ্ন তুলেছে, কেন সরকার কোভিড নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ। প্রধানমন্ত্রীর জবাবদিহিও চেয়েছে কংগ্রেস। দলের মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালা জানিয়েছেন, সরকারি ঔদাসীন্য এবং নেতৃত্বদানে ব্যর্থতার জন্যই পরিস্থিতি সঙ্কটজনক। তাঁর মতে, বিশেষজ্ঞ এবং কংগ্রেসের তরফে বার বার সতর্ক করা হলেও অতিমারি পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণের বাইরে।
আরও পড়ুন: ছাড়পত্রের গেরোয় ভারতে আটকে অক্সফোর্ডের টিকা
আরও পড়ুন: শিক্ষানীতি নিয়ে কথা চান মোদী, কেন এড়ানো হল সংসদ, প্রশ্ন
করোনা পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানোর দাবি জানানো হলেও সরকারি উপেক্ষার জন্যই এই পরিস্থিতি বলে দাবি সুরজেওয়ালার। এই প্রসঙ্গেই তিনি বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী গোটা দেশকে জানান, (পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে) কী কৌশল নেওয়া হয়েছে? মোদীজি কি তাঁর ব্যর্থতার জবাব দেবেন?’’ অর্থনীতিকে সচল করতে কী দাওয়াই দেওয়া হবে, সেই প্রশ্নও ছুড়ে দিয়েছেন সুরজেওয়ালা। উত্তরোত্তর সংক্রমণ বৃদ্ধির জেরে এক বিরাট অংশের গ্রামীণ মানুষ অপ্রতুল চিকিৎসা ব্যবস্থার জেরে সমস্যায় পড়বেন বলেও তাঁর আশঙ্কা। তবে বিজেপি সভাপতি জে পি নড্ডা আজ জানিয়েছেন, ভয়াল ভাইরাসের থেকে ১৩০ কোটি মানুষকে রক্ষা করায় মোদী সরকারের প্রশংসায় পঞ্চমুখ গোটা বিশ্ব।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। )
করোনা পরীক্ষার সংখ্যা নিয়ে বিরোধীদের বিদ্রুপ উড়িয়ে তিনি জানান, এখন দেশে দৈনিক ১১ লক্ষেরও বেশি কোভিড পরীক্ষা করা হচ্ছে। তিন লক্ষ ভেন্টিলেটরের বন্দোবস্ত করা হয়েছে। দৈনিক সাড়ে চার লক্ষেরও বেশি পিপিই কিট তৈরি হচ্ছে দেশে। সরকারের গৌরবগাথা তুলে ধরতে ৩০টি দেশে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন সরবরাহের প্রসঙ্গও তুলে ধরেছেন নড্ডা।
আজ কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, বর্তমানে দেশে দৈনিক করোনা পরীক্ষার ক্ষমতা রয়েছে সাড়ে ১১ লক্ষেরও বেশি। এখনও পর্যন্ত দেশে প্রায় পাঁচ কোটি কোভিড পরীক্ষা করা হয়েছে। শুধু গত দু’সপ্তাহেই ১.৩৩ কোটি পরীক্ষা হয়েছে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের অ্যাডভাইজ়রিতে জানানো হয়েছে ‘টেস্টিং অন ডিমান্ড’ নীতি গ্রহণ করতে হবে।
করোনা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় যারা ভুয়ো খবর ছড়াচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আজ কড়া পদক্ষেপের নির্দেশ দিলেন পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অমরেন্দ্র সিংহ। সদ্য অবসর নেওয়া চিকিৎসকদের কাজের মেয়াদও ফের বাড়ালেন তিনি। সম্প্রতি কাজের মেয়াদ বাড়িয়ে ৩০ সেপ্টেম্বর করা হয়েছিল। আজ সেই মেয়াদ আরও তিন মাস অর্থাৎ ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
এ দিকে সময়মতো অ্যাম্বুল্যান্স না-মেলায় নাগপুরে মৃত্যু হল ৫৩ বছর বয়সি এক কোভিড রোগীর। এই ঘটনায় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে নাগপুর পুরসভা। ২৯ অগস্ট ওই ব্যক্তির শরীরে সংক্রমণ ধরা পড়ে। তার পর থেকে হোম আইসোলেশনে ছিলেন তিনি। শনিবার রক্তচাপ ও অক্সিজেনের মাত্রা ক্রমশ কমতে থাকায় পরিবারের লোকেরা অ্যাম্বুল্যান্সের হেল্পলাইন নম্বর ১০৮-এ ফোন করেন। আধ ঘণ্টা পরে অ্যাম্বুল্যান্স এলেও তাতে অক্সিজেন ছিল না। দীর্ঘক্ষণ পরে অক্সিজেনের বন্দোবস্ত করা হলেও বাঁচানো যায়নি ওই ব্যক্তিকে। আজ ২৫০ আইসিইউ বেড বাড়ানোর ঘোষণা করল বৃহন্মুম্বই পুরসভা (বিএমসি)। করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, ওড়িশার পর্যটন ও সংস্কৃতিমন্ত্রী জেপি পাণিগ্রাহী।
(চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হল— সেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দু’দিনের সংখ্যা এবং তার পরের দু’দিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবে— দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ৪৯৫৬। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ৫২৬৯। তার আগের দু’দিন ছিল ৩৯৭০ এবং ৪৯৮৭। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ৪৯৪৩ এবং ৫৬১১। ১৬ থেকে ২০ মে, এই পাঁচ দিনের গড় হল ৪৯৫৬, যা ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র আক্রান্তের সংখ্যার গড়। পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy