ছবি রয়টার্স।
যদি ১০০ গ্রাম চরস বা হাশিশ সঙ্গে থাকে, তা হলে ৬ মাস পর্যন্ত জেল খাটতে হবে। কিন্তু পরিমাণ তার বেশি হলেই কারাবাসের সময়সীমা বেড়ে ১০ বছর হয়ে যাবে। তার সঙ্গে, ১০ হাজার টাকার জায়গায় জরিমানা দিতে হবে ১ লক্ষ টাকা।
গাঁজার ক্ষেত্রে নিয়ম অনেক শিথিল। ১ কেজি গাঁজা রাখলেও ৬ মাস জেল খেটে ছাড়া মিলতে পারে। ২০ কেজি পর্যন্ত গাঁজা কেনাবেচার অপরাধ করলে, তবেই ১০ পর্যন্ত জেল খাটতে হবে।
কেন এই তারতম্য?
৩৫ বছরের পুরনো ‘নারকোটিক ড্রাগস অ্যান্ড সাইকোট্রপিক সাবস্ট্যান্সেস’ ওরফে এনডিপিএস আইন অনুযায়ী, কেউ নিজের জন্য অল্প পরিমাণ মাদক কিনলে বা সঙ্গে রাখলে তার এক রকম শাস্তি। কিন্তু কেউ মাদক বা বেআইনি ড্রাগের ব্যবসা করলে তার আরও গুরুতর শাস্তি প্রয়োজন। সেই কারণেই পরিমাণ অনুযায়ী শাস্তির তারতম্য।
আরও পড়ুন: রিয়াকে ধ্বস্ত করে ‘সতীদাহের উল্লাস’
সুশান্ত সিংহ রাজপুতের বান্ধবী রিয়া চক্রবর্তীকে নারকোটিক্স কন্ট্রোল বুরো গ্রেফতারের পর ফের ১৯৮৫ সালের এনডিপিএস আইন খবরের শিরোনামে। রিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ও সুশান্ত ১৬৫ গ্রাম মারিহুয়ানা কিনেছিলেন। রিয়ার গ্রেফতারির পরে নেট-দুনিয়ায় প্রশ্ন উঠেছে, কয়েক গ্রাম মাদক কেনার অভিযোগে রিয়াকে গ্রেফতার করা হলে, কুম্ভমেলা-গঙ্গাসাগরে পুলিশ কী ব্যবস্থা নেবে? শিবরাত্রি বা হোলির সময়ও কি লক্ষ লক্ষ লোককে জেলে পুরতে হবে না?
রিয়ার বিরুদ্ধে এনডিপিএস আইনের যে সব ধারায় মামলা
• ৮(সি): ড্রাগ কেনা ও কাছে রাখা আইনত নিষিদ্ধ
• ২০(বি)(২): স্বল্প পরিমাণের মাত্রার তুলনায় বেশি পরিমাণ ক্যানাবিস রাখার অপরাধ
• ২২: আইন ভেঙে ড্রাগ রাখা বা কেনাবেচার শাস্তি
• ২৭এ: ড্রাগ সেবনের অপরাধ
• ২৮: আইন ভাঙার চেষ্টা করার অপরাধ
• ২৯: আইন ভেঙে ড্রাগ কেনাবেচা বা সেবনে মদত দেওয়া ও ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অপরাধ
অপরাধ প্রমাণ হলে শাস্তি
• অন্তত ১০ বছরের কারাদণ্ড, সর্বাধিক ২০ বছরের কারাদণ্ড, অন্তত ১ লক্ষ টাকা জরিমানা
২০১৯-এ কেন্দ্রীয় সামাজিক ন্যায় মন্ত্রকের সমীক্ষা অনুযায়ী, দেশের ১০ থেকে ৭৫ বছর বয়সিদের ২.৮৩% বা প্রায় ৩.১ কোটি মানুষ ভাঙ, গাঁজা বা চরস সেবন করেন। আবার আফিম গাছ থেকে তৈরি হেরোইনের নেশাগ্রস্ত মানুষের হার ১.১৪%। এর সবটাই অবশ্য সরকারি হিসেব। ভাঙ, গাঁজা, চরস সেবনে প্রথম সারির পাঁচটি রাজ্য উত্তরপ্রদেশ, পঞ্জাব, ওড়িশা, মহারাষ্ট্র ও ছত্তীসগঢ়। আইনজীবীদের মতে, ড্রাগের ব্যবহারের মতো এনডিপিএস আইনের অপব্যবহারের অভিযোগও যথেষ্ট। কারণ কাউকে ফাঁসাতে হলে তাঁর পকেটে গাঁজা-চরস মিলেছে বলে মামলা সাজানো পুলিশের কাছে সহজ বিষয়।
আরও পড়ুন: ইন্দ্রাণীর সঙ্গে একই জেলে রিয়া
সুশান্ত-রিয়া কাণ্ডের আগেও গত দু্’তিন বছরে এনডিপিএস আইন নিয়ে বিতর্ক হয়েছে। ২০১৮-র গোড়ায় যোগগুরু রামদেবের পতঞ্জলি সংস্থার সিইও আচার্য বালকৃষ্ণ মারিহুয়ানা বিক্রির আইনি অনুমোদন দেওয়ার দাবি তুলেছিলেন। যুক্তি ছিল, আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে গাঁজা গাছের বিভিন্ন অংশ চিকিৎসার প্রয়োজনে ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। তাই এর উপকারিতা ও ইতিবাচক ব্যবহার নিয়ে ভাবনাচিন্তা করা উচিত। গত লোকসভায় আম আদমি পার্টির সাংসদ ধর্মবীর গাঁধীও একই দাবিতে বারবার সরব হয়েছেন। তাঁরও দাবি ছিল, গাঁজা, আফিমের মতো মাদক বেচাকেনায় অপরাধের তকমা তুলে দেওয়া হোক। সরকার নিয়ন্ত্রিত পরিমাণে, নিজের ঠিক করা দামে এ সব বিক্রি করুক।
সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী বলেন, “ক্যানাবিস বা মারিহুয়ানার সব থেকে পরিচিত রূপ হল ভাং। শিবরাত্রি, হোলির মতো হিন্দুদের উৎসবে এর যথেচ্ছ ব্যবহার। এ দেশের প্রাচীন গ্রন্থে ভাংয়ের উপকারিতা, শিবঠাকুরের প্রিয় নেশা বলে তাঁকে ভাং নিবেদনের কথাও বলা হয়েছে। সে কারণেই অনেক রাজ্যে ভাং বেচাকেনায় কোনও আইনি নিষেধাজ্ঞা নেই। কিন্তু ক্যানাবিস স্যাতিভা নামের গাছের নানা অংশ থেকে তৈরি গাঁজা, চরস বা হাশিশ সেবন, বেচাকেনা বা তার ব্যবসায় আইনে শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে।” ধর্মবীরের যুক্তি, “গাঁজা, আফিমের মতো সাধারণ মানুষের ব্যবহারের মাদক আইনত নিষিদ্ধ করার ফলেই আরও ক্ষতিকারক সিন্থেটিক ড্রাগ বাজারে এসেছে। তৈরি হয়েছে ড্রাগ মাফিয়া চক্র। লাভের থেকে ক্ষতি হয়েছে বেশি। ড্রাগ সেবনকে আইনি সমস্যা হিসেব না-দেখে স্বাস্থ্যের সমস্যা হিসেবে দেখা দরকার।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy