রাহুল গাঁধী।—ফাইল চিত্র।
রাহুল গাঁধীকে তিনটি অস্ত্র দিয়ে কংগ্রেস নেতারা তাঁর হাতে ফের মোদী সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নেতৃত্ব তুলে দিতে চাইছেন।
তিন অস্ত্র হল— এক, মোদী সরকারের বিরুদ্ধে করোনা-সঙ্কট সামলাতে না-পারার অভিযোগ। দুই, লকডাউনের জেরে মানুষের রুটি-রুজির সমস্যা। তার মধ্যেই লাগাতার পেট্রল-ডিজেলের দাম বৃদ্ধি। তিন, লাদাখে ভারতের জমি চিনের দখল করে ফেলা এবং চিনের হাতে ভারতীয় সেনাদের মৃত্যু।
মোদী সরকারের বিরুদ্ধে রণকৌশল ঠিক করতে আজ কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে ফের দাবি উঠেছে, রাহুলকে সভাপতির পদে ফেরানো হোক। কংগ্রেস সূত্রের খবর, রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌতের সঙ্গে ছত্তীসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেল, যুব কংগ্রেস সভাপতি বি ভি শ্রীনিবাস এই দাবি তোলেন। তাঁদের প্রস্তাব ছিল, এআইসিসি-র ভার্চুয়াল অধিবেশন ডেকে রাহুলকে ফের সভাপতি করা হোক। কংগ্রেস অবশ্য সরকারি ভাবে জানিয়েছে, এ বিষয়ে আজ কোনও আলোচনা হয়নি। কিন্তু একই সঙ্গে ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা বলেছেন, ‘‘এটা কংগ্রেসের সব নেতা-কর্মীরই ভাবনা। রাহুল গাঁধী ও কংগ্রেস যথাযথ সময়ে এই বিষয়ে বিচার-বিবেচনা করবেন। আজ মূলত চিনা অনুপ্রবেশ, জ্বালানির দাম বৃদ্ধি, অতিমারির সঙ্কট নিয়েই আলোচনা হয়েছে।’’
প্রথমে করোনা, তার পরে চিন— যখনই কংগ্রেস মোদী সরকারের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলেছে, তখনই বিজেপি পাল্টা বলেছে, কেন কংগ্রেস এ সব প্রশ্ন তুলছে! এখন তো রাজনৈতিক ভেদাভেদ ভুলে দেশের ঐক্যবদ্ধ থাকার সময়। কংগ্রেস নেতৃত্বের মধ্যেও দ্বিধা ছিল, চিন নিয়ে এই মুহূর্তে সরকারের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুললে বিজেপি কংগ্রেসকে ‘দেশবিরোধী’ তকমা দেওয়ার চেষ্টা করবে। কিন্তু রাহুল প্রথম থেকেই কড়া সুর নেওয়ার পক্ষপাতী ছিলেন।
আজ কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে সনিয়া ও রাহুল দু’জনেই স্পষ্ট করে দিয়েছেন, কড়া বিরোধিতার প্রশ্নেই অনড় থাকবে দল। সনিয়া আজ দেশের আর্থিক সঙ্কট, করোনা অতিমারি ও চিনের সঙ্গে সীমান্তে সঙ্কটের জন্য মোদী সরকারের ‘অব্যবস্থা’-কেই দায়ী করেছেন। পেট্রল-ডিজেলের লাগাতার দাম বৃদ্ধি নিয়ে স্বাস্থ্যবিধি বজায় রেখে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদের সিদ্ধান্ত হয়েছে। রাহুল বলেন, ‘‘চিন বেপরোয়া ভাবে আমাদের জমি দখল করে রেখেছে। প্রধানমন্ত্রী আমাদের অবস্থান ভেস্তে দিয়ে ওদের অবস্থানই মেনে নিয়েছেন যে, ওরা ভারতের জমি দখল করেনি।’’ গোটা পরিস্থিতির জন্য বিদেশনীতিকে দায়ী করে রাহুলের অভিযোগ, মোদী প্রতিষ্ঠিত কূটনৈতিক কাঠামোটাই ভেঙে দিয়েছেন। পড়শি দেশের সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙে পড়েছে।
আজ বিজেপি ফের অভিযোগ তুলেছে, দেশের সামনে সঙ্কট দেখে কংগ্রেসের কেন বিকৃত সুখ হচ্ছে? বিজেপি মুখপাত্র সম্বিত পাত্রের প্রশ্ন, ‘‘সনিয়াজির কাছে জানতে চাই, যখন সেনাপ্রধান লেহ-তে গিয়ে সেনার মনোবল বৃদ্ধির চেষ্টা করছেন, তখন আপনারা কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক ডেকে কেন সেনার বিরুদ্ধে কথা বলছেন? কেন ভারতকে দুর্বল বলছেন?’’ কিন্তু নিজের অবস্থানে অনড় রাহুল প্রয়াত রাজীব গাঁধীর তোলা প্যাংগং হ্রদের ছবি টুইট করে প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘আমরা তো চিনের বিরুদ্ধে এককাট্টা। কিন্তু চিন কি আমাদের এলাকা দখল করেছে?’’
সদ্য পঞ্চাশে পা দিয়েছেন রাহুল। ২০১৪-য় কংগ্রেস তাঁকে ‘যুব আইকন’ হিসেবে তুলে ধরতে চেয়েছিল। তার পরে ২০১৯-এ রাহুল নিজেই রাফাল দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ‘দুর্নীতি বিরোধী’ অবস্থান নিয়েছিলেন। দুই চেষ্টাই ব্যর্থ হয়েছে। এ বার ‘পরিণত নেতা’ হিসেবে পঞ্চাশোর্ধ্ব রাহুলের ভাবমূর্তি মানুষ গ্রহণ করবে বলেই কংগ্রেসের আশা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy