জম্মু ও কাশ্মীর পুনর্গঠন বিল নিয়ে উত্তাল লোকসভাও। ছবি: টুইটার।
রাজ্যসভার পরে উত্তপ্ত হয়ে উঠল লোকসভাও। ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের সুপারিশ এবং জম্মু-কাশ্মীর পুনর্গঠন বিল পেশ হতেই তীব্র বিরোধিতা শুরু করল কংগ্রেস, ডিএমকে, তৃণমূল-সহ বিভিন্ন বিরোধী দল। শুরুতেই কংগ্রেসের দলনেতা অধীররঞ্জন চৌধুরীর সঙ্গে তুমুল বাগ্যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের। পরে আর এক কংগ্রেস সাংসদ মণীশ তিওয়ারির সঙ্গেও শাহ বিতণ্ডায় জড়ালেন। কাশ্মীরে ৩৭০ বহাল থাকার পক্ষে, না বিপক্ষে? অবস্থান স্পষ্ট করুক কংগ্রেস— চ্যালেঞ্জ ছোড়ার ভঙ্গিতে মণীশকে বললেন শাহ। নিয়ন্ত্রণরেখার ও পারে থাকা এলাকার বিষয়ে কংগ্রেসের প্রশ্নের জবাবে আরও আগ্রাসী ভঙ্গিতে শাহের জবাব— পাক অধিকৃত কাশ্মীরও আমাদের, আকসাই চিনও আমাদের।
সোমবার, জম্মু-কাশ্মীর থেকে ৩৭০ অনুচ্ছেদ প্রত্যাহার নিয়ে তোলপাড় হয়েছিল রাজ্যসভা। তার চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে লোকসভায় ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের সুপারিশ ও জম্মু-কাশ্মীর পুনর্গঠন বিল পেশ হতেই উত্তপ্ত হয়ে উঠল অধিবেশন। শুরুতেই অমিত শাহ বলেন, ‘‘আমি স্পষ্ট জানিয়ে দিই যে, জম্মু-কাশ্মীর ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এ নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কোনও আইনি জটিলতা নেই।’’ এর পরই, প্রথম প্রশ্ন ধেয়ে আসে কংগ্রেসের তরফে। সরকারের ভূমিকা নিয়ে একের পর এক প্রশ্ন তোলে কংগ্রেস। অধীররঞ্জন চৌধুরী বলেন, ‘‘নিয়ম ভেঙে জম্মু-কাশ্মীর ভাগ করা হচ্ছে। সিমলা চুক্তি ও লাহৌর চুক্তি সত্ত্বেও কীভাবে এটা অভ্যন্তরীণ বিষয় হল? ওই দুই চুক্তিই দ্বিপাক্ষিক ছিল। ১৯৪৮ সাল থেকেই বিষয়টি রাষ্ট্রপুঞ্জের নজরে রয়েছে। জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে এত বড় একটা পদক্ষেপের পিছনে কী প্রক্রিয়া ও কী নিয়ম মানা হয়েছে তা গোটা কংগ্রেস দল জানতে চায়। গোটা কাশ্মীর উপত্যকাকে কেন আপনারা কয়েদখানা বানিয়েছেন?’’
বিল নিয়ে কেন্দ্র সরকারকে আক্রমণ অধীররঞ্জন চৌধুরীর। ছবি: টুইটার।
অধীর চৌধুরীর মন্তব্য নিয়ে পালটা তোপ দাগেন অমিত শাহও। তিনি বলেন, ‘‘ গোটা দেশে আইন প্রণয়নের ক্ষমতা সংসদের রয়েছে। দেশের সংবিধান ও জম্মু-কাশ্মীরের সংবিধানেও সেই কথার উল্লেখ রয়েছে।’’ সুর চড়িয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘‘পাক অধিকৃত কাশ্মীর ও আকসাই চিনও ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ।’’ প্রসঙ্গত, এই দুটি জায়গা নিয়েই পাকিস্তান ও চিনের সঙ্গে দীর্ঘদিনের বিতর্ক নয়াদিল্লির।
আরও পড়ুন: রাজ্য নয় কাশ্মীর, আলাদা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল লাদাখ, পুরোপুরি বলবৎ সংবিধান
অমিতের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে ফের পাল্টা যুক্তি তুলে ধরে কংগ্রেস। মণীশ তিওয়ারি বলেন, ‘‘এই প্রথম দেখছি একটি রাজ্য ভেঙে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল তৈরি করা হচ্ছে। সংবিধানে বলা হয়েছে, কোনও রাজ্যকে ভাঙতে গেলে বা তার সীমানা বিন্যাস করতে গেলে সেখানকার বিধানসভায় আলোচনা করতে হবে। সংশ্লিষ্ট রাজ্যের মানুষের রায়ও নিতে হবে। কিন্তু, জম্মু-কাশ্মীরে বিধানসভা এখন নেই। সেখানে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি রয়েছে। অথচ, এখন সংসদকে জম্মু-কাশ্মীরের ভবিষ্যৎ স্থির করতে বলা হচ্ছে। অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে তেলঙ্গানা তৈরির আগে অন্ধ্রপ্রদেশ বিধানসভায় এ নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। ইউপিএ সরকার কোনও অসাংবিধানিক কাজ করেনি। ’’
এখানেই থামেননি মণীশ। ইতিহাস তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘‘১৯৫২ সাল থেকে যত বার নতুন রাজ্য হয়েছে বা রাজ্যের সীমানা নতুন করে বিন্যাস হয়েছে তত বার তা নিয়ে সেখানকার বিধানসভায় আলোচনা হয়েছে। এ ভাবে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করে করা হয়নি। বিধানসভার অনুমতি ছাড়া ধারা ৩৭০ প্রত্যাহার করা যায় না। এতে সংবিধানের ভুল ব্যাখ্যা হচ্ছে।’’ এর পর, বিশেষ অধিকার রয়েছে এমন অন্যান্য রাজ্যের উদাহরণও তুলে ধরেন তিনি। বলেন, ‘‘সংবিধানের আরও নানা অনুচ্ছেদে নাগাল্যান্ড, অসম, মণিপুর, সিকিম, অন্ধ্রপ্রদেশকেও বিশেষ অধিকার দেওয়া হয়েছে। ৩৭০ অনুচ্ছেদ প্রত্যাহার করে কি সে রাজ্যগুলিকেও ভিন্ন বার্তা দেওয়া হচ্ছে?’’
আরও পড়ুন: ‘বেআইনি’ বলে নিন্দায় পাকিস্তান, ৩৭০ নিয়ে বাকি সব দেশের মুখে কুলুপ
এ দিন বিলকে ঘিরে লোকসভায় মাঝেমাঝেই তুমুল হই হট্টগোল হয়। মণীশ তিওয়ারির বক্তব্য শেষ হওয়ার আগেই কংগ্রেসকে চ্যালেঞ্জের সুরে অমিত শাহ বলেন, ‘‘কংগ্রেস স্পষ্ট করুক তারা ৩৭০ অনুচ্ছেদ বহাল থাকার পক্ষে না বিপক্ষে?’’ এর উত্তরে মণীশ তিওয়ারি বলেন, ‘‘ জম্মু-কাশ্মীরের বিধানসভায় আলোচনা ছাড়া এই অনুচ্ছেদ এ ভাবে প্রত্যাহার করা যায় না।’’
অমিত শাহের বিলের বিরোধিতা করে তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তাতে দেশ উদ্বিগ্ন। একের পর এক প্রশ্নও তুলে ধরেন তিনি। বলেন, ‘‘জম্মু-কাশ্মীরকে কেন অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে? কেনই বা জম্মু-কাশ্মীরকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের তকমা দেওয়া হচ্ছে?’’ এর পর অবশ্য ওয়াকআউট করেন তৃণমূল সাংসদরা।
কংগ্রেসকে তীব্র আক্রমণ শানান কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জিতেন্দ্র তিওয়ারি। তিনি বলেন, ‘‘জিতেন্দ্র সিং, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ৩৭০ অনুচ্ছেদ প্রত্যাহারের দাবিতে প্রাণত্যাগ করেছিলেন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। এ বার তাঁকে শ্রদ্ধাঞ্জলি দেওয়া হল। একইসঙ্গে, সত্তর বছর আগের ঐতিহাসিক ভুলের প্রায়শ্চিত্তও হল। জওহরলাল নেহরুর জন্যই জম্মু-কাশ্মীরের এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। নেহরু ভিন্ন ভূমিকা নিলে দেশের ইতিহাস অন্যরকম হত। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হলেও, সর্দার বল্লভভাই পটেলকে জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে কোনও ভুমিকাই পালন করতে দেওয়া হয়নি।’’
আরও পড়ুন: শ্রীনগরে ঘাঁটি গেড়ে অজিত ডোভাল, উপত্যকা শান্তিপূর্ণ ও স্বাভাবিক, রিপোর্ট দিলেন কেন্দ্রকে
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy