গীতাঞ্জলি ও রথীন্দ্রনাথ দাস।
দেশ জুড়ে গণপ্রহার আর গণপ্রহারের আতঙ্ক চেপে বসেছে। কখনও শিশু চোর, কখনও বা শুধুই চোর সন্দেহে গণপিটুনির ঘটনা ঘটছে। এ বার বাঘ সংরক্ষণের বার্তা দিতে বেরিয়ে একই ধরনের বিপদের মুখে পড়লেন কলকাতার এক বাঙালি দম্পতি।
শনিবার মধ্যপ্রদেশের সাতপুরা টাইগার রিজার্ভের কাছে একটি গ্রামের বাসিন্দারা তাঁদের ‘কিডনি চোর’ সন্দেহে আটকে হেনস্থা করলেও শেষ পর্যন্ত মারধর থেকে রেহাই পেয়েছেন ওই দম্পতি। ঘটনার পরেই মধ্যপ্রদেশ থেকে বেরিয়ে মহারাষ্ট্রে ঢুকেছেন তাঁরা। রবিবার সন্ধ্যায় তাঁরা মহারাষ্ট্রের মেলঘাট টাইগার রিজার্ভে পৌঁছেছেন।
বন্যপ্রাণী, বিশেষত বাঘ সংরক্ষণ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন কলকাতার বাসিন্দা রথীন্দ্রনাথ দাস এবং তাঁর স্ত্রী গীতাঞ্জলি দাস। জঙ্গল রক্ষা এবং বাঘ সংরক্ষণের বার্তা দিতেই ১৫ ফেব্রুয়ারি কলকাতা থেকে রওনা হন তাঁরা। মোটরবাইকে স্ত্রীকে নিয়ে বিভিন্ন রাজ্য এবং বাঘের বাসস্থান সংলগ্ন এলাকায় সচেতনতার বার্তা প্রচার করছেন তাঁরা।
রথীনবাবু জানান, শনিবার দুপুরে তাঁরা সাতপুরা টাইগার রিজার্ভের কাছে একটি গ্রামে পৌঁছন। দীর্ঘ ক্ষণ মোটরবাইক চালিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়ায় কিছু ক্ষণ বিশ্রাম নিতে গ্রামের কাছে একটি গাছের তলায় থেমেছিলেন। তার পরে গ্রামবাসীদের কারও কাছ থেকেই রাস্তা জেনে নিয়ে পরবর্তী গন্তব্যে পাড়ি দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। সেই সময় ওই গাছের তলায় সাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল এক কিশোর। রথীনবাবু সেখানে গিয়ে দাঁড়াতেই কিশোরটি দৌড়ে কাছের একটি বাড়িতে ঢুকে যায়। কিছু ক্ষণের মধ্যেই প্রায় ২৫০ মহিলা-পুরুষ তাঁদের ঘিরে ফেলেন। ‘‘ওঁরা বলছিলেন, আমরা নাকি কিডনি চোর! কিডনি চোর ঘুরে বেড়াচ্ছে, এমন নাকি খবর রয়েছে। সঙ্গে স্ত্রী থাকায় আরও বিপন্ন বোধ করছিলাম,’’ বললেন রথীনবাবু।
আরও পডু়ন: এমএ পাশ, পেটের দায়ে পালিশ করেন জুতো
বন্যপ্রাণপ্রেমী দম্পতির ধারণা, মোটরবাইক আরোহীদের যে-পোশাক ও হেলমেট তাঁরা পরে ছিলেন, বোধ হয় তাতেই বিপত্তি বেড়েছে। ‘‘বিশেষ করে গ্রামের মহিলারা খুব উত্তেজিত ছিলেন। তাঁরাই মারধর শুরু করতে উস্কানি দিচ্ছিলেন পুরুষদের। এমনকি আমার সঙ্গে যে এক জন মহিলা আছেন, ওঁরা তা-ও বিশ্বাস করছিলেন না,’’ বললেন রথীনবাবু। শেষ পর্যন্ত গ্রামের এক যুবককে তিনি কোনও মতে তাঁদের এই যাত্রার উদ্দেশ্য বুঝিয়ে উঠতে সমর্থ হন। সেই যুবকই গ্রামবাসীদের শান্ত করেন। তাঁদের রাস্তা দেখিয়ে দেন কিছু বাসিন্দা। বাইকে বিভিন্ন রাজ্য ও দেশে ঘুরে বেড়ানো এই দম্পতি বলছেন, এমন বিপদের মুখে আগে পড়েননি তাঁরা।
এই বিপদেও হাল ছাড়ছেন না দু’জনে। বলছেন, ‘‘যে-শপথ নিয়ে বেরিয়েছি, তা শেষ করেই ফিরব।’’ মূল লক্ষ্যের সঙ্গে অন্য এক ব্রতের সঙ্কল্পও করেছেন ওই দম্পতি। শুরু করেছেন গুজবে কান না-দেওয়ার বার্তা প্রচার। রবিবার যাত্রাপথে বোর টাইগার রিজার্ভ সংলগ্ন একটি গ্রামে দাঁড়িয়েছিলেন তাঁরা। এই ধরনের গুজব যাতে ছড়ানো না-হয় বা তাতে কেউ যাতে কান না-দেন, সেটা ওই গ্রামের বাসিন্দাদের বুঝিয়েছেন দাস দম্পতি। কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত করছেন এই সচেতনতার বিষয়টিকেও। ‘‘আমরা বলছি, সন্দেহভাজন কাউকে দেখলে থানায় খবর দিন। কিন্তু মারধর করবেন না,’’ বললেন রথীনবাবু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy