প্রতিবাদ: রাস্তায় বিক্ষোভে শামিল মহিলারা। শুক্রবার শ্রীনগরে। ছবি: এপি।
কার্ফু জারি হয়েছিল রবিবার। তা কিছুটা শিথিল করে ১৪৪ ধারা জারি হওয়ায় আজ শ্রীনগরের রাস্তায় কিছু মানুষের আনাগোনা ছিল। দুপুরে অনেকে স্থানীয় মসজিদে গিয়ে নমাজ পড়েন। কিন্তু পাথর ছোড়া বা বিক্ষোভ প্রদর্শন হলেও মাত্রা ছাড়ায়নি। তবে মানুষ যে ক্ষুব্ধ, কথাবার্তাতেই সেটা স্পষ্ট। দোকান-বাজার আজও খোলেনি। আধাসেনা ছিল সমান তৎপর। জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যসচিব বিভিআর সুব্রহ্মণ্যম বলেন, ‘‘মানুষ স্থানীয় মসজিদে গিয়ে নমাজ পড়েছেন। সুযোগসন্ধানীরা যাতে গোলমাল করতে না-পারে, সেই জন্য কড়া পাহারা থাকলেও নমাজিদের আটকানো হয়নি।’’
সোমবার ইদ। তার আগে শুক্রবার দিনটি ছিল নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে পরীক্ষা। দিনের শেষে ভূস্বর্গের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্ষিপ্ত বিক্ষোভ ছাড়া মোটের উপরে দিনটি শান্তিতে কাটায় স্বস্তিতে নয়াদিল্লি। তবে দুই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা ও মেহবুবা মুফতিকে কোথায় আটক করে রাখা হয়েছে, জানানো হচ্ছে না।
উপত্যকায় কিছু এলাকায় আজ মোবাইল ও ইন্টারনেট পরিষেবা আংশিক ভাবে ফিরে এসেছিল। তবে দুপুরের পরে ফের তা বিচ্ছিন্ন করা হয়। কাশ্মীরে টানা পাঁচ দিন কার্ফু ও ১৪৪ ধারা জারি থাকলেও, জম্মুর বড় অংশ থেকে আজ তা তুলে নেওয়া হয়। চার দিন পরে স্কুল খুলেছে সাম্বা ও কাঠুয়ায়। গত কালই প্রবাসী কাশ্মীরিদের সঙ্গে কথা বলার জন্য শ্রীনগরের ডেপুটি কমিশনার দফতরে দু’টি হেল্পলাইন খোলা হয়েছিল। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা স্বজনদের সঙ্গে কথা বলতে আজ কয়েকশো লোকের লাইন পড়ে। ভিড়ের বহর দেখে সেনাদের ৩০০ ফোন দেওয়া হয়েছে।
কাল কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি আজাদের পরে আজ শ্রীনগর বিমানবন্দরে আটকে দেওয়া হয় সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি ও সিপিআই নেতা ডি রাজাকে। দলের অসুস্থ বিধায়ক ইউসুফ তারিগামিকে দেখতে শ্রীনগরে গিয়েছিলেন সীতারাম। কিন্তু বিমানবন্দর থেকে তাঁদের বেরোতে দেওয়া হয়নি। কয়েক ঘণ্টা পরে তাঁরা দিল্লির বিমানে ওঠেন।
আজ কার্ফুতে ঢিলে দিলেও শ্রীনগরের জামা মসজিদে নমাজ পড়ার অনুমতি দেয়নি প্রশাসন। তবে স্থানীয় মসজিদগুলিতে জমায়েতে ছাড় দেওয়া হয়। আজ শ্রীনগরের ইদগা এলাকা ঘুরে দেখেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। এর মধ্যেই স্বাধীনতা দিবসের আগে-পরে জলপথে জঙ্গি হানার আশঙ্কায় আজ সর্তক করা হয়েছে নৌবাহিনীকে। সতর্কতা জারি করা হয়েছে দিল্লি, মুম্বই ও গুজরাতে। কাশ্মীরের জেল থেকে আরও ২০ জনকে আজ আগরায় সরানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: ‘আমার চার বছরের মেয়ে এখন কাশ্মীরে, গত ৪৮ ঘণ্টা ওর গলা শুনিনি’
গত কালই প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছিলেন, কাশ্মীরিদের ইদ পালনে সহায়তা করবে প্রশাসন। আজ দুপুরে বৈঠকে বসেন রাজ্যপাল সত্যপাল মালিক ও ডোভাল। পরে বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমে রাজ্যপাল বলেন, ‘‘উপত্যকায় ইদ পালন হবে।’’ খাদ্যদ্রব্য, ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী সংগ্রহে যাতে সমস্যা না-হয়, সেই জন্য রোজ বিভিন্ন এলাকার ৩০০ জন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলতে ডেপুটি কমিশনারকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
উপত্যকার একাংশের দাবি— কাশ্মীরিদের মন নয়, জমি লুটতেই ৩৭০ তুলে নিয়েছে কেন্দ্র। শ্রীনগরের একটি মসজিদের সামনে ঝুলছে হাতে লেখা পোস্টার— ‘ভারতীয়দের জমি বেচবেন না, সোমবার ইদের নমাজের পরে মিছিলে যোগ দিন!’ পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘আজ কিছু হয়নি, কিন্তু ইদের দিন যে কী হবে!’’
বছর ৩২-এর তারিক আহমেদের কথায়, ‘‘মানুষ নজর রাখছেন। কত দিন কার্ফু চাপিয়ে রাখবে? বিক্ষোভ হবেই। আর লাঠি-গুলি চললে পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে, কেউ বলতে পারে না!’’ সরকারি কর্মী ওয়েসিস বলেন, ‘‘এ ভাবে কাশ্মীরবাসীকে দাবিয়ে রাখবে ভেবেছে ওরা? উল্টো ফল হবে এই কৌশলের।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy