শোপিয়ানে আম জনতার সঙ্গে অজিত ডোভাল। ছবি: টুইটার থেকে
অবশেষে শ্রীনগরের চিত্রটা প্রকাশ্যে আসতে শুরু করল। আর তাতেই আঁচ পাওয়া গেল প্রতিবাদ-বিক্ষোভ শুরু হয়ে গিয়েছে উপত্যকায়। বিক্ষিপ্ত, বিচ্ছিন্ন হলেও পরিস্থিতিটা তেমনই। বিরোধীদের আশঙ্কা ছিলই। বুধবার দেখা গেল ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করেই শ্রীনগরের রাস্তায় প্রতিবাদ-বিক্ষোভে শামিল কাশ্মীরের সাধারণ নাগরিক। সেই বিক্ষোভকে ঘিরেই সংঘর্ষ। ঘটল প্রাণহানির ঘটনাও। গুলিবিদ্ধ এবং আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি অনেকে। গ্রেফতারও হয়েছেন শতাধিক।
এটা তো শুধু শ্রীনগরের চিত্র। উপত্যকার বাকি অংশের ছবিটা ঠিক কেমন, তা যদিও এখনও স্পষ্ট নয়। এখনও বন্ধ ল্যান্ডলাইন, মোবাইল, ইন্টারনেট, ব্রডব্যান্ড, কেবল পরিষেবা। সেগুলি চালু হলে এই প্রতিবাদ-বিক্ষোভ যে আরও বাড়বে, এমন আশঙ্কাই দানা বেঁধেছে পুলিশ-প্রশাসনের অন্দরে।
মঙ্গলবারই জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা কেন্দ্রকে পাঠানো রিপোর্টে জানিয়েছিলেন, জম্মু-কাশ্মীরে শান্তি ও স্বাভাবিক পরিস্থিতি বজায় রয়েছে। ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদকে স্বাগত জানিয়েছেন কাশ্মীরবাসী। তখনই অনেকে আঁচ করেছিলেন, এই শান্তি চিরস্থায়ী না-ও হতে পারে। তাঁর আঁচ পাওয়া গেল এ দিনই। ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করেই এ দিন দফায় দফায় বিক্ষোভ-মিছিল হয়েছে শ্রীনগরে। পুলিশ-সেনা জওয়ানদের লক্ষ্য করে পাথর ছোড়া এবং পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছে একাধিক দলের।
পুলিশ সূত্রে খবর, একটি দলের সঙ্গে পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হয়। তার মধ্যেই এক জনকে তাড়া করে পুলিশ। সেই তাড়া খেয়েই ঝিলম নদীতে ঝাঁপ দেন ওই যুবক। পরে তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার হয়। ওই সংঘর্ষে পুলিশের বিরুদ্ধে গুলি চালানোর অভিযোগও উঠেছে। সংবাদ সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অন্তত ৬ জনের দেহে গুলির ক্ষত রয়েছে। এ ছাড়া আহত অনেকে।
আটকে পড়া পর্যটক ও যাত্রীদের ভিড় জম্মু স্টেশনে। ছবি: পিটিআই
আরও পডু়ন: শেষযাত্রায় সুষমা স্বরাজ, লোদীঘাটে শেষকৃত্য
অন্তত ১০০ জন বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাঁদের মধ্যে একাধিক রাজনৈতিক দলের নেতাও রয়েছেন বলে পুলিশ সূত্রে খবর। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশকর্তা এই গ্রেফতারির খবর স্বীকারও করে নিয়েছেন। এমনটাই জানাচ্ছে সংবাদ সংস্থা। তবে ধৃতদের মধ্যে হেভিওয়েট কোনও রাজনৈতিক নেতা-নেত্রী আছেন কি না, সে বিষয়ে কিছু জানাতে রাজি হননি ওই পুলিশকর্তা।
এর মধ্যেই বুধবার শোপিয়ানে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ সময় কাটান জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (এনএসএ) অজিত ডোভাল। সেখানকার বাসিন্দাদের সঙ্গে খাওয়াদাওয়াও করেন। অর্থাৎ তিনি বোঝানোর চেষ্টা করেছেন উপত্যকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। এর পর শোপিয়ানেই সিআরপিএফ-এর একটি ক্যাম্পে যান এনএসএ। জম্মু-কাশ্মীর এবং লাদাখে জওয়ানরা যে ভাবে কাজ করেছেন, তার কোনও তুলনা হয় না— বলেন ডোভাল।
NSA Ajit Doval eating lunch with Kashmiri locals in Shopian of South Kashmir this afternoon. Normalcy being slowly restored in the valley. What a remarkable gesture by the NSA! Interacting with people on ground and checking on their safety, security and well being! #Peace pic.twitter.com/MqVmhu1B2h
— Aditya Raj Kaul (@AdityaRajKaul) August 7, 2019
অন্য দিকে প্রাক্তন আইএএস অফিসার শাহ ফয়সল কাশ্মীরের সামগ্রিক অবস্থার বর্ণনা দিয়ে ফেসবুকে একটি পোস্ট করেছেন। তিনি লিখছেন, ‘‘শ্রীনগরে জিরো ব্রিজ থেকে বিমানবন্দর, সব জায়গায় কার্যত কার্ফুর চেহারা নিয়েছে। রোগী এবং কার্ফু পাসধারী ছাড়া কাউকে ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। জম্মু-কাশ্মীর পুলিশকে নিষ্ক্রিয় করে নিরাপত্তার ভার তুলে নিয়েছে সেনা। শ্রীনগরের বাইরে অন্য জেলাগুলিতে ১৪৪ ধারা আরও কঠোর। রাজ্যের ৮০ লক্ষ মানুষ এই রকম পরিস্থিতি আগে কখনও দেখেনি।’’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘‘স্যাটেলাইট ফোন ছাড়া টেলি যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ। কেবল পরিষেবা বন্ধ থাকলেও ডিরেক্ট টু হোম (ডিটুএইচ) যাঁদের রয়েছে, তাঁরা টিভি দেখতে পারছেন। তবে অধিকাংশেরই এখনও স্পষ্ট ধারণা নেই, ঠিক কী হয়েছে। জাতীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের শ্রীনগরের বাইরে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। বড় কোনও সংঘর্ষের ঘটনার খবর পাওয়া না গেলেও রামবাগ, নতিপোরা, ডাউনটাউন, কুলগাম, অনন্তনাগের মতো জায়গায় বিক্ষিপ্ত বিক্ষোভ-পাথর ছোড়ার মতো ঘটনার খবর এসেছে।’’
উপত্যকার সমস্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ থাকলেও কোনও না কোনও ভাবে অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের মত তুলে ধরতে পারছেন। যেমন এর আগে ওমর আবদুল্লা বা মেহবুবা মুফতিও এই যোগাযোগহীন অবস্থায় টুইট করেছেন। তেমন ভাবেই ফেসবুকে লিখেছেন ফয়সলও।
আরও পড়ুন: আইনজীবী থেকে দুঁদে রাজনীতিক, বিপদে পড়লে সাহায্যের জন্য সদাপ্রস্তুত ছিলেন ‘সুপারমম’
তবে এত কড়াকড়ির মধ্যেও বুধবার থেকে কিছুটা হলেও ছন্দে ফিরতে শুরু করেছে শ্রীনগর। অনেককেই রাস্তায় বেরোতে দেখা গিয়েছে দৈনন্দিন কাজকর্মে বেরোতে। যদিও সেই সংখ্যাটা খুবই কম। কিছু দোকানপাটও খুলেছে শ্রীনগরে। রাস্তায় যাঁরা বেরিয়েছিলেন, তাঁদের কয়েক জনের বক্তব্যে বোঝা গিয়েছে, রীতিমতো ক্ষোভে ফুঁসছেন কাশ্মীরিরা। লালচকের বাসিন্দা এক ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ার সঈদ খানকে প্রশ্ন করতেই ফুঁসে উঠলেন, ‘‘এখন আর আমাদের মতামত নিয়ে কী হবে? সব কিছু শেষ।’’
একই সঙ্গে তার সংযোজন, ‘‘২০১৬ সালের পর থেকে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছিল। বিচ্ছিন্নতাবাদীরা জেলে ছিলেন। কোনও ধর্মঘট ছিল না। কমে এসেছিল পাথর ছোড়া, বিক্ষোভের ঘটনা। স্কুল-কলেজ, দোকানপাট খোলা থাকত। পর্যটকদের আনাগোনাও বেড়েছিল। সবাই খুশি ছিল। তার পর একটা কলমের খোঁচায় প্রতিটি কাশ্মীরি, যাঁরা তাঁদের সঙ্গে ছিলেন, তাঁদেরও খেপিয়ে তুলেছেন। জানি না, আমরা কখন এই সিদ্ধান্তের ফলশ্রুতি থেকে মুক্তি পাব।’’
#WATCH Jammu and Kashmir: Latest visuals from Srinagar as people move about for essential work. pic.twitter.com/KOAunoNRPi
— ANI (@ANI) August 7, 2019
এর মধ্যেই বুধবারও শ্রীনগর জম্মু-কাশ্মীর সচিবালয়ে জাতীয় পতাকা এবং কাশ্মীরের পতাকা পাশাপাশি উড়তে দেখা যায়। এত দিন পর্যন্ত ভারতের ত্রিবর্ণ পতাকা ছাড়াও জম্মু-কাশ্মীরের জন্য আলাদা পতাকা ছিল। কিন্তু ৩৭০ ধারা রদের পর থেকে ভুস্বর্গের জন্য আলাদা আর কোনও পতাকা থাকার কথা নয়।
Latest visuals from Civil Secretariat in #Srinagar, where #JammuAndKashmir flag along with Tricolor flies atop the building. https://t.co/ezTUyumVix
— ANI (@ANI) August 7, 2019
সব মিলিয়ে এখনও থমথমে গোটা উপত্যকা। নিরপত্তার চাদরে মুড়ে কার্যত দুর্ভেদ্য দুর্গ করে তোলা হয়েছে। এই পরিস্থিতি আরও কত দিন চলবে, এবং কবে স্বাবাভিক পরিষেবা চালু হবে, আপাতত সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন কাশ্মীরবাসী। অন্য দিকে কার্ফু তোলার পর কী পরিস্থিতি দাঁড়াবে, এবং সেই অনুযায়ী প্রতিরোধের ব্লু প্রিন্টও তৈরি করতে শুরু করে দিয়েছেন পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা।
অন্য দিকে বুধবারই জম্মু কাশ্মীর এবং লাদাখের লেফটেন্যান্ট গভর্নরের নামও ঘোষণা হতে পারে বলে জানা গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy