—ফাইল চিত্র।
‘তথ্য নেই’ বিবৃতিতে মুখ পুড়েছে বুঝে পরিস্থিতি সামাল দিতে মাঠে নামল শ্রম মন্ত্রক। পরিযায়ী শ্রমিকদের পরিসংখ্যান রাখার দায় তারা কার্যত চাপাল রাজ্যগুলির উপরে। কিন্তু শ্রমিক সংগঠন থেকে সমাজকর্মী- বিভিন্ন মহলের জিজ্ঞাসা, “লকডাউনে সারা দেশের সমস্ত মৃত পরিযায়ী শ্রমিকের খবর সরকারের ঘরে না-থাকতে পারে। কিন্তু যাঁদের কথা ইতিমধ্যেই জানা গিয়েছে, তাঁদের ক’জনকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার চেষ্টা করেছে তারা?” কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের কাছে এই তথ্য না-থাকাই বরং বেআইনি বলে ট্রেড ইউনিয়নের দাবি।
লকডাউনের সময়ে কাজ খুইয়ে বাড়ির পথ ধরা কত জন পরিযায়ী শ্রমিক রাস্তাতেই মারা গিয়েছেন, সেই বিষয়ে কোনও তথ্য না-থাকার কথা সোমবার সংসদে কবুল করেছে কেন্দ্র। জানিয়েছে, তেমন তথ্য রাখার রেওয়াজ না-থাকায় মৃতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রশ্ন নেই। কোভিডের জেরে কত জন পরিযায়ী কর্মী কাজ হারিয়েছেন, সেই সম্পর্কেও সরকারের ঘরে পরিসংখ্যান না-থাকার কথা মেনে নিয়েছে শ্রম মন্ত্রক।
সংসদে এ হেন মন্তব্য ঘিরে প্রশ্ন উঠেছে, এক জন মৃত সম্পর্কেও কোনও তথ্য কি সরকারের কাছে নেই? রেলের হিসেব অনুযায়ী, শ্রমিক স্পেশ্যাল ট্রেন চালুর পর থেকে মে-র শেষ পর্যন্ত ট্রেনে-রেললাইনে-স্টেশন চত্বরে মারা গিয়েছেন ৮০ জন পরিযায়ী শ্রমিক কিংবা তাঁদের পরিবারের সদস্য। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে মৃত্যু মিছিলের যে সবিস্তার খবর বিভিন্ন সময়ে বেরিয়েছে, একাধিক ট্রেড ইউনিয়নের মতে, শুধু সেগুলি যোগ করলেই সেই সংখ্যা ২০০-র বেশি। বেশ কিছু নাম-তথ্য-পরিসংখ্যান পাওয়া সম্ভব বিভিন্ন রাজ্যের কাছ থেকে। বিশেষত, কিছু ক্ষেত্রে মৃতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিয়েছে যারা। তাহলে ‘তথ্য নেই’ বলার যৌক্তিকতা কী?
আরও পড়ুন: করোনা আক্রান্ত নিতিন গডকড়ী, টুইট করে জানালেন নিজেই
তথ্যের অধিকার আইনে এই সম্পর্কিত পরিসংখ্যান রেলের কাছে জানতে চেয়েছিলেন প্রতীচী ট্রাস্টের গবেষক তথা সমাজকর্মী সাবির আহমেদ। তিনি বলেন, “ওই প্রশ্নের উত্তরে মৃত কয়েক জনের নাম, ঠিকানাও দিয়েছিল মধ্য রেল। সুতরাং সেটুকু তো অন্তত সরকারের ঘরে আছে। তা ছাড়া, হাইওয়ে কিংবা রেললাইন-ট্রেন-স্টেশনে কারও অস্বাভাবিক মৃত্যু হলে, তাঁর খুঁটিনাটি তথ্য থাকে হাইওয়ে অথরিটি এবং রেল মন্ত্রকের কাছে। তাই শ্রম মন্ত্রকের পক্ষেও তা পাওয়া কঠিন নয়।”
বুধবার শ্রমমন্ত্রী সন্তোষ গঙ্গোয়ারের দাবি, শ্রম কেন্দ্র ও রাজ্যের যৌথ এক্তিয়ারভুক্ত। পরিযায়ী শ্রমিক সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় আইনের অধিকাংশই কার্যকর করে রাজ্য। অর্থাৎ, পরিসংখ্যান রাখার দায়ও তাদেরই। তবু লকডাউনের সময়ে বাড়ি ফেরা শ্রমিকদের সংখ্যা রাজ্যগুলির কাছ থেকে জেনে রাখার চেষ্টা করেছেন তাঁরা। কিন্তু শ্রমিক সংগঠন সিটু-র সাধারণ সম্পাদক তপন সেনের কথায়, “১৯৭৯ সালের আন্তঃরাজ্য পরিযায়ী শ্রমিক আইন অনুযায়ী, যে রাজ্য থেকে কর্মী যাচ্ছেন এবং যে রাজ্যে যাচ্ছেন, প্রত্যেকের সম্পর্কে বিশদ তথ্য থাকার কথা উভয়ের কাছে। তা ছাড়া, যে সংস্থায় তাঁরা কর্মরত, ফি বছর রিটার্নে প্রত্যেক কর্মী সম্পর্কে তথ্য জমা দেওয়ার কথা তাদের। আর যেহেতু এটি কেন্দ্রীয় আইন, তাই পুরো বিষয়টি ঠিক ভাবে কার্যকর হচ্ছে কি না, তা দেখার দায় কেন্দ্রের। সুতরাং তথ্য নেই বলার আইনি এক্তিয়ারই শ্রমমন্ত্রীর নেই।”
আরও পড়ুন: দিল্লি হিংসায় চার্জশিট পুলিশের, ১৫ জন অভিযুক্তের মধ্যে নেই উমর, শরজিলের নাম
উত্তরপ্রদেশের আউরিয়ায় হওয়া দুর্ঘটনায় বিভিন্ন রাজ্যের মৃত পরিযায়ী শ্রমিকদের পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিল কেন্দ্র। তার মধ্যে ছিলেন এ রাজ্যের ছ’জন। এ ছাড়া, রাজ্য প্রশাসনিক সূত্রের খবর, পরিযায়ী শ্রমিকদের বিষয়ে রাজ্যের পদক্ষেপের বিবরণ সুপ্রিম কোর্টকে মিলিত ভাবে দিয়েছিল স্বরাষ্ট্র এবং শ্রম দফতর। সিটুর রাজ্য সম্পাদক তথা রাজ্যের প্রাক্তন শ্রমমন্ত্রী অনাদি সাহুর অবশ্য অভিযোগ, “কেন্দ্র তো বটেই, পরিযায়ী শ্রমিকদের দায় গোড়া থেকে ঝেড়ে ফেলতে চেয়েছে রাজ্যও। শুরুতে রাজ্য প্রশাসনের তরফে বলা হয়েছিল, পশ্চিমবঙ্গ থেকে ভিন্ রাজ্যে যাওয়া কর্মীর সংখ্যা ২ লক্ষ।পরে হলফনামায় সংখ্যাটা অনেক বেশি ছিল। এখন কেন্দ্রই বলছে, তা অন্তত ১৩ লক্ষ।”
ইউটিইউসির সাধারণ সম্পাদক অশোক ঘোষের প্রশ্ন, “মোদী সরকারের দাবি, কাজ হারানো পরিযায়ী কর্মীদের এক বড় অংশ নাম লিখিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ রোজগার অভিযানে। তাঁদের দক্ষতা মাপতে ওয়েবসাইট চালু করেছে কেন্দ্র। এই কর্মীদের পাশে দাঁড়াতেই নাকি চালু করা হয়েছে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্প। তা হলে কাজ হারানো কর্মীর সংখ্যা সম্পর্কে কেন্দ্র এখনও অন্ধকারে থাকে কী ভাবে?”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy