Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
P V Narasimha Rao

এতদিন পর নরসিংহ রাওকে শ্রদ্ধার্ঘ সনিয়া-রাহুলের, পিছনে কি অন্য রাজনীতি?

আচমকা নরসিংহ রাওয়ের প্রতি গাঁধী পরিবারের আচরণে এই পরিবর্তন নিয়ে নানা জল্পনা শুরু হয়েছে।

নরসিংহ রাওকে নিয়ে সনিয়া ও রাহুলের চিঠিতে জল্পনা। —ফাইল চিত্র।

নরসিংহ রাওকে নিয়ে সনিয়া ও রাহুলের চিঠিতে জল্পনা। —ফাইল চিত্র।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০২০ ১৮:২০
Share: Save:

দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে সক্রিয় যোদ্ধা ছিলেন তিনি। একনিষ্ঠ কর্মী ছিলেন কংগ্রেসের। তা সত্ত্বেও দলের সদর দফতরে জায়গা হয়নি তাঁর দেহাবশেষের। জীবিত থাকা অবস্থায় তো বটেই, মৃত্যুর পরও কংগ্রেসের কাছ থেকে প্রাপ্য সম্মান পাননি পিভি নরসিংহ রাওসনিয়া গাঁধীর সঙ্গে তাঁর মতভেদকেই এর জন্য দায়ী করে থাকেন অনেকে। বলা হয়, সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে মতভেদের জেরেই কংগ্রেসের একটি অংশ তাঁর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন। কিন্তু সেই অবস্থান থেকেই এ বার একেবারে ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেল কংগ্রেস। জন্মশতবার্ষিকীতে নরসিংহ রাওয়ের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ অর্পণ করলেন স্বয়ং কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী এবং রাহুল গাঁধী। তাঁর যোগ্য নেতৃত্বের জন্যই অত্যন্ত সঙ্কটপূর্ণ সময় কাটিয়ে ভারত ঘুরে‌ দাঁড়িয়েছিল বলে মেনে নিলেন তাঁরা।

১৯২১ সালের ২৮ জুন অবিভক্ত অন্ধ্রপ্রদেশে জন্মগ্রহণ করেন পিভি নরসিংহ রাও। যে লকনেপল্লিতে তাঁর জন্ম, সেটি বর্তমানে তেলঙ্গানার অংশ। সেখানকার প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব টানা এক বছর ধরে পিভি নরসিংহ রাওয়ের জন্মশতবার্ষিকী পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাতে চিঠি লিখে তেলঙ্গানা প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বকে অভিনন্দন জানিয়েছেন সনিয়া ও রাহুল গাঁধী। চিঠিতে সনিয়া লেখেন, ‘‘দীর্ঘ সময় ধরে রাজ্য ও জাতীয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকার পর ভয়ঙ্কর অর্থনৈতিক সঙ্কট যখন দেশকে গ্রাস করেছে, সেই সময় প্রধানমন্ত্রী হন নরসিংহ রাও। তাঁর সাহসী নেতৃত্বে ভর করেই এমন বহু সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে সফল হয়েছিল ভারত। ১৯৯১-এর ২৪ জুলাই তাঁর সরকার যে বাজেট পেশ করে, তাতেই দেশের অর্থনৈতিক সংস্কারের পথ প্রশস্ত হয়েছিল।’’

রাহুল গাঁধী লেখেন, ‘‘আজকের দিনে (২৪ জুলাই) অর্থনৈতিক সংস্কারের পথে যাত্রা শুরু হয়েছিল ভারতের। দেশের অর্থনীতির উদারীকরণে পিভি নরসিংহ রাও এবং মনমোহন সিংহ, দু’জনেরই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। আশা করি এই অনুষ্ঠান যুবসমাজকে দেশের উন্নয়নের ইতিহাস এবং তার কারিগরদের জানতে উৎসাহিত করবে। আমরা এমন একজন মানুষের উত্তরাধিকার বহন করছি, আধুনিক ভারতের রূপরেখা তৈরিতে যাঁর অবদান অনস্বীকার্য। কৈশোরে কংগ্রেসে যোগ দেওয়া থেকে বৃহত্তম গণতন্ত্রের প্রধানমন্ত্রী পদে উপনীত হওয়া, এই দীর্ঘ যাত্রাপথ তাঁর দৃঢ় মানসিকতাকেই প্রতিফলিত করে।"

আরও পড়ুন: উপর থেকে চাপ আসছে, তাই অধিবেশন ডাকছেন না রাজ্যপাল, অভিযোগ গহলৌতের​

১৯৯১ সালে দেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন নরসিংহ রাও। গাঁধী পরিবারের বাইরে তিনিই প্রথম, যিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পুরো কার্যকালের মেয়াদ পূরণ করতে পেরেছিলেন। শোনা যায়, রাজীব গাঁধীর মৃত্যুর পরেও নরসিংহ রাওয়ের সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল সনিয়া গাঁধীর। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী পদে বসার পর থেকে ১০ নম্বর জনপথে নরসিংহ রাওয়ের যাতায়াত ক্রমশ কমতে শুরু করে। আগে খুঁটিনাটি ব্যাপরে সনিয়ার পরামর্শ নিলেও, ধীরে ধীরে তা কমিয়ে ফেলেন নরসিংহ রাও। এতে দু’পক্ষের মধ্যে অবিশ্বাসের দেওয়াল উঠতে শুরু করে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে, নরসিংহ রাও তাঁকে ঝেড়ে ফেলতে উদ্যত হয়েছেন বলে মনে হতে থাকে সনিয়া ও তাঁর সমর্থকদের। যে কারণে অনিচ্ছা সত্ত্বেও সনিয়া কংগ্রেসের রাশ নিজের হাতে তুলে নেন।

কিন্তু দু’পক্ষের মধ্যে তিক্ততা কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে, রাজনৈতিক কানাঘুষো পেরিয়ে তা প্রথম সর্বসমক্ষে প্রকট হয়ে ধরা দেয় ২০০৪ সালে। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রায় ১৪ দিন হাসপাতালে ভর্তি থাকার পর সে বছর ২১ ডিসেম্বর শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন নরসিংহ রাও। সেই সময় দিল্লিতে কংগ্রেসের সদর দফতরের বাইরে তাঁর দেহাবশেষ রাখা হয়। সেখান থেকেই তাঁকে শ্রদ্ধা জানান সনিয়া, মনমোহনরা। সেই থেকে এত দিন কখনওই নরসিংহ রাওয়ের জন্মবার্ষিকী পালন করতে দেখা যায়নি কংগ্রেসকে। ইন্দিরা গাঁধী, রাজীব গাঁধীর জন্মবার্ষিকীতে যেমন দলের তরফে শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন করা হয়, নরসিংহকে নিয়ে তার কোনওটাই হয়নি। এ ব্যাপারে একমাত্র ব্যাতিক্রম ছিলেন মনমোহন সিংহ। এত দিন ধরে নিয়মিত দিল্লির অন্ধ্র ভবনে গিয়ে নরসিংহ রাওকে শ্রদ্ধা জানিয়ে এসেছেন তিনি। এমনকি নরসিংহ রাওকে পথপ্রদর্শক এবং ভারতের উদার অর্থনীতির জনক বলেও একাধিক বার উল্লেখ করেছেন তিনি।

তাই আচমকা নরসিংহ রাওয়ের প্রতি গাঁধী পরিবারের আচরণে এই পরিবর্তন নিয়ে নানা জল্পনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি, শুধুমাত্র গাঁধী পরিবারকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হওয়ার জন্য কংগ্রেসকে এমনিতেই নিশানা করে বিজেপি। তা নিয়ে কংগ্রেসের একাংশও গাঁধী পরিবারের উপরে বিরক্ত। তার মধ্যেই গত ২৮ জুন ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে নরসিংহ রাওকে শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাতেই বোধোদয় হয় কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বের। সর্দার পটেলের পর নরসিংহ রাওকে নিয়েও বিজেপি পালে হাওয়া লাগানোর চেষ্টা করছে বলে ধারণা জন্মায় তাঁদের। তাই দলের পরামর্শেই দেরি করে হলেও, সনিয়া ও রাহুল নরসিংহ রাওকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।

আরও পড়ুন: করোনায় মৃত্যু হল কলকাতা পুলিশের এক আধিকারিকের​

তবে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের অন্য একটি অংশের দাবি, তেলঙ্গানা এবং অন্ধ্রপ্রদেশে ক্রমশ ঘাঁটি গড়তে শুরু করেছে বিজেপি। তাতেই নরসিংহ রাওকে নিয়ে সেখানকার মানুষদের যে আবেগ, তা ধরে রাখতে মরিয়া হয়ে উঠেছে কংগ্রেস নেতৃত্ব।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy