Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Pulwama Attack

জবাব দিন মমতা, রাহুল, পাক মন্ত্রীর পুলওয়ামা-মন্তব্যের জেরে দাবি বিজেপির

রাহুলের প্রশ্ন ছিল, পুলওয়ামায় হামলার খবর পাওয়ার পরেও প্রধানমন্ত্রী কেন উত্তরাখণ্ডের অরণ্যে কয়েক ঘণ্টা ধরে তথ্যচিত্রের শ্যুটিং করেছিলেন।

গ্রাফিক: তিয়াসা দাস।

গ্রাফিক: তিয়াসা দাস।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০২০ ১৬:৫২
Share: Save:

পুলওয়ামা সন্ত্রাস নিয়ে ফের ‘ফ্রন্টফুটে’ বিজেপি। ‘সৌজন্য’, পাকিস্তানের মন্ত্রী ফাওয়াদ আহমেদ চৌধুরীর ‘স্বীকারোক্তি’।

বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা ইতিমধ্যেই পুলওয়ামা নিয়ে কংগ্রেস, তৃণমূল-সহ বিরোধীদের খোঁচা দিতে শুরু করেছেন। বিজেপির দাবি, লোকসভা ভোটের আগে কাশ্মীরে সিআরপিএফ কনভয়ে পাক জঙ্গিরাই হামলা চালিয়েছিল কি না, তা নিয়ে যাঁরা সংশয় প্রকাশ করেছিলেন তাঁদের ক্ষমা চাইতে হবে। সনিয়া ও রাহুল গাঁধীর পাশাপাশি তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও রয়েছেন বিজেপির নিশানায়।

বিজেপি আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য শুক্রবার টুইটারে লেখেন, ‘পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সাফল্যের কথা জানাতে গিয়ে তাঁর মন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী পুলওয়ামার ভূমিকা স্বীকার করেছেন। এ বার অরবিন্দ কেজরীবাল, রাহুল গাঁধী, ফারুক আবদুল্লা, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, রামগোপাল যাদব এবং অন্য যাঁরা পাকিস্তানীদের পক্ষে গলা ফাটিয়েছিলেন, তাঁদের জবাব দেওয়ার পালা’।

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর টুইটারে লেখেন, ‘পাকিস্তান স্বীকার করেছে পুলওয়ামায় ওরাই হামলা চালিয়েছিল। কংগ্রেস এবং অন্য যারা ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলেছিল, এ বার তাদের দেশের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে’।

সনিয়া ও রাহুলের নামের ইঙ্গিত করে বিজেপি নেতা সুব্রহ্ম্যণম স্বামীর টুইট, ‘পাকিস্তান মেনে নিল, পুলওয়ামা সন্ত্রাস তারাই স্পনসর করেছে। অথচ টিডিকে (তাড়কা, অর্থাৎ সনিয়া) এবং বাম্বিনো (ইতালীয় ভাষায় শিশুপুত্র, অর্থাৎ রাহুল) সমেত কংগ্রেস নেতারা বলেছিলেন, ভোটে জেতার জন্য বিজেপি হামলা চালিয়েছে। মানসিক দৈন্য একেই বলে’।

যদিও সনিয়া, রাহুল বা কংগ্রেসের শীর্ষ নেতারা সে সময় সিআরপিএফ কনভয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুললেও বিজেপির বিরুদ্ধে পুলওয়ামা সন্ত্রাসে জড়িত থাকার অভিযোগই তোলেননি। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের উল্লেখ করে রাহুল প্রশ্ন তুলেছিলেন, ২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি জঙ্গি হামলায় ৪০ জন সিআরপিএফ জওয়ানের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পরেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কেন উত্তরাখণ্ডের জিম করবেট জাতীয় উদ্যানে কয়েক ঘণ্টা ধরে তথ্যচিত্রের শ্যুটিং করেছিলেন?

মমতাও সরাসরি পুলওয়ামা সন্ত্রাস ঘিরে বিজেপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তোলেননি কখনওই। সে সময় তাঁর অভিযোগ ছিল, পুলওয়ামা হামলার সুযোগ নিয়ে লোকসভা ভোটের আগে দেশে সাম্প্রদায়িক বিভাজনের চেষ্টা চালাচ্ছে বিজেপি। বরং একদা বিজেপি ঘনিষ্ঠ মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনার প্রধান রাজ ঠাকরে লোকসভা ভোটের প্রাক্কালে পুলওয়ামায় পাক ফিদায়েঁ হানা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছিলেন এবং লোকসভা ভোটের আগে পুলওয়ামার ধাঁচে আরও হামলা হতে পারে বলে ‘পূর্বাভাস’ দিয়েছিলেন।

আরও পড়ুন: কাশ্মীরের কুলগামে বিজেপির ৩ যুব নেতাকে গুলি করে মারল জঙ্গিরা

চলতি বছর পুলওয়ামা নাশকতার প্রথম বর্ষপূর্তিতে শহিদ সিআরপিএফ জওয়ানদের শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকার ও শাসকদলকে তিনটি প্রশ্ন করেন রাহুল— হামলা থেকে কে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে? হামলার তদন্তের রিপোর্টের কী হল? এই হামলা সম্ভব হয়েছে নিরাপত্তায় গাফিলতির জন্য। কাকে এর জন্য দায়ী করা হয়েছে? পাশাপাশি, জঙ্গিদের মদত দেওয়ার অভিযোগে ধৃত জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের ডিএসপি দেবেন্দ্র সিংহের কী ভূমিকা ছিল এবং তার সঙ্গে পুলওয়ামায় হামলাকারী জঙ্গিদের যোগাযোগ ছিল কি না, তা-ও জানতে চেয়েছিল কংগ্রেস-সহ বিরোধীরা। তার সদুত্তর মেলেনি এখনও। যদিও অমিত এ দিন রাহুলের সেই টুইট-মন্তব্য তুলে ধরেছেন।

বৃহস্পতিবার পাক পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ‘ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি’তে সে দেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ফাওয়াদ বলেছিলেন, ‘‘আমরা ভারতে (হিন্দুস্তান) ঢুকে মেরেছি। পুলওয়ামায় আমাদের ওই সাফল্য, ইমরান খানের আমলে গোটা দেশের সাফল্য। আমরা সকলেই তার শরিক।’’ এর পরেই বিজেপি মুখপাত্র নেমে পড়েন রাজনৈতিক তরজায়। তিনি বলেন, ‘‘বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া সন্ত্রাসবাদের শিকড় রয়েছে পাকিস্তানে। কিন্তু রাহুল গাঁধী ও তার সহযোগীরা পুলওয়ামার মতো ঘটনাতেও মোদী-ইমরান ‘ম্যাচ ফিক্সিং’ খোঁজেন।’’

আরও পড়ুন: পাকিস্তানকে কালো তালিকায় চায় ভারত, পুলওয়ামা মন্তব্যের ‘সাফাই’ ইমরানের মন্ত্রীর

যদিও পরিস্থিতি প্রতিকূল বুঝে এ দিনই বয়ান বদলান ফাওয়াদ। তিনি এ দিন বলেন, ‘‘পুলওয়ামায় গত বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি জঙ্গি হানার কথা আমি বলতে চাইনি। ২৬ ফেব্রুয়ারি ভারতীয় বায়ুসেনার হামলার (বালাকোটে) পরে পাক বিমানবাহিনীর সফল প্রত্যাঘাতকেই ইমরান সরকারের সাফল্য হিসেবে তুলে ধরতে চেয়েছি।’’ পাক মন্ত্রীর এই বয়ান বদলকে অবশ্য প্রকাশ্যে তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে না বিজেপি। রাজনীতির কারবারিদের একাংশ বলছেন, বিহারে দু’দফার ভোট এখনও বাকি। প্রচারে ফের পুলওয়ামাকেই ‘হাতিয়ার’ করতে পারে টিম মোদী।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE