করোনা রোগী বা সংক্রমিত বলে সন্দেহ, এমন সকলকে পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেওয়ার সুবিধা দেওয়া হয়েছে।—ছবি সংগৃহীত।
বিহারের বিধানসভা নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশন ৬৫ বছরের উপরে সকলকেই পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেওয়ার সুযোগ তৈরি করে দিল। করোনা রোগী বা সংক্রমিত বলে সন্দেহ, এমন সকলকে পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেওয়ার সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এটা নিয়ে কোনও রাজনৈতিক দলেরই আপত্তি নেই। কিন্তু ৬৫ বছরের উপরে সকলকেই পোস্টাল ব্যালটে ভোটের সুযোগ দেওয়া নিয়ে রাজনৈতিক শিবিরের প্রশ্ন— এতে অবাধ ভোট নিশ্চিত করা যাবে তো?
আইন মন্ত্রক আজ এ বিষয়ে সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। কেন্দ্রের যুক্তি, নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করেই এই সিদ্ধান্ত। কিন্তু নির্বাচন কমিশন কেন রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই এই সিদ্ধান্ত নিল, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূলের মধ্যেও এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনা শুরু হয়েছে। অক্টোবর-নভেম্বরে বিহারে ভোট। তার পরে ২০২১-এই পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা ভোট। তৃণমূল সূত্রের খবর, দলের মধ্যে এ নিয়ে আলোচনার পরে নির্বাচন কমিশনের কাছেও এ বিষয়ে চিঠি পাঠানো হতে পারে।
করোনা অতিমারির পরে প্রথম ভোট হতে চলেছে বিহারের বিধানসভা নির্বাচন। অক্টোবর-নভেম্বরে নির্ধারিত নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া হবে কি না, তা নিয়ে জল্পনা চলছিল। কিন্তু আজ আইন মন্ত্রক যে ভাবে করোনা-আক্রান্ত ও সংক্রমিত বলে সন্দেহভাজনদের পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে, তাতে স্পষ্ট ভোট পিছোচ্ছে না। গত অক্টোবরে কেন্দ্র ৮০ বছরের বেশি বয়স্ক মানুষদের জন্য পোস্টাল ব্যালটে ভোটের সুবিধার কথা ঘোষণা করেছিল। এ বার তা কমিয়ে ৬৫ বছর করায় তৃণমূলের পাশাপাশি কংগ্রেস, বাম শিবিরেও প্রশ্ন উঠেছে।
কংগ্রেস নেতা বিবেক তঙ্খা আজ বলেন, ‘‘পোস্টাল ব্যালটে ভোটের কারচুপি করা সহজ। কারণ ভোটারদের ঠিকানা, কোন বাড়িতে বয়স্ক ভোটার রয়েছে, তা জানা কঠিন নয়। সে কারণেই এত দিন শুধু ভোটের কাজে নিযুক্ত বা সেনা-আধাসেনায় কর্মরত সরকারি কর্মীদের জন্য পোস্টাল ব্যালটের বন্দোবস্ত ছিল। আমার ধারণা ভোটারদের অন্তত ১০ থেকে ১৫ শতাংশের বয়স ৬৫ বছরের বেশি। সংখ্যাটা নেহাত কম নয়।’’
তৃণমূল জানিয়েছে, এই বিষয়টি খতিয়ে দেখে দলের বিশদ বক্তব্য জানানো হবে। তবে তৃণমূল সূত্রের খবর, করোনা-আক্রান্তদের ক্ষেত্রে পোস্টাল ব্যালটের সুযোগ দেওয়া নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু তাঁদের বাইরে ৬৫ বছরের বেশি সকলের জন্যই পোস্টাল ব্যালটের ব্যবস্থা হলে, অবাধ ভোটদান নিশ্চিত করা কত দূর সম্ভব, তা নিয়ে সংশয় থাকছে। কোটি কোটি বয়স্ক ভোটারদের ভোট কাদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে, তা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হবে। তা ছাড়া কারও সঙ্গে আলোচনা না-করে নির্বাচন কমিশন এই সিদ্ধান্ত নিতে পারে না বলেও তৃণমূল নেতাদের মত।
আরও পড়ুন: সাংবাদিক শুনে সিট থেকে তুলে নিয়ে গেলেন পুলিশ অফিসার
সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি আগেই নির্বাচন কমিশনের এই ‘একতরফা’ সিদ্ধান্ত নিয়ে আপত্তি তুলে মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের কাছে চিঠি পাঠিয়েছিলেন। তাঁরও বক্তব্য ছিল, এর ফলে ভোটে কারচুপি বাড়বে। শাসক দলের সুবিধা হবে।
কিন্তু উপ-নির্বাচন কমিশনার চন্দ্রভূষণ কুমার ইয়েচুরিকে পাল্টা চিঠিতে জানিয়েছেন, জনপ্রতিনিধিত্ব আইন অনুযায়ী কমিশন সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে এই সিদ্ধান্ত নিতে পারে। করোনা অতিমারির পরে তৈরি অভূতপূর্ব পরিস্থিতি দেখেই ৬৫ বছরের বেশি সকলকে পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে— যাতে বয়স্কদের ভিড়ে লাইন দিতে না-হয়, আবার তাঁদের ভোটাধিকারও প্রয়োগ হয়। ইয়েচুরির অভিযোগ, রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই কেন এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হল, তার কোনও জবাব অবশ্য কমিশনের চিঠিতে নেই। ইয়েচুরির যুক্তি, এটা কোনও একটি রাজ্যের ভোটের প্রশ্ন নয়। গোটা দেশের বিষয়। সে কারণেই জাতীয় স্তরে আলোচনার দরকার ছিল।
তৃণমূল, সিপিএম, কংগ্রেস যখন নির্বাচন কমিশনের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলছে, তখন খানিকটা অপ্রত্যাশিত ভাবেই বিষয়টির মধ্যে ঢুকে পড়ে এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। একই সঙ্গে তিনি টুইট করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি আর্জি জানিয়েছেন, তিনি যেন ‘সাইলেন্ট বা সায়েন্টিফিক’ রিগিংকে ব্যর্থ করেন এবং হিংসা পরিত্যাগ করেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy