Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

বন্ধু হলেও অর্থনীতির ঝিমুনি কাটাতে নির্মলার নীতি ভুল, জেএনইউ-এ গিয়ে সাফ কথা অভিজিতের

শুক্রবারই মোদী সরকারের মন্ত্রী পীযূষ গয়াল অভিজিৎকে ‘বাম ঘেঁষা’ বলে কটাক্ষ করেছেন।

নির্মলার সীতারামনের সমালোচনায় অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: টুইটার।

নির্মলার সীতারামনের সমালোচনায় অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: টুইটার।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০১৯ ০৩:৫২
Share: Save:

শনিবার সকালে লাইব্রেরি ক্যান্টিনে তখন চায়ের কাপে ধোঁয়া উঠছে। ব্রহ্মপুত্র হস্টেলে টেবল টেনিস খেলে ক্যান্টিনে ঢুকলেন সদ্য নোবেল-জয়ী। বাইরে ছাত্রছাত্রীদের উৎসাহী ভিড়। অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় বার হতেই নিজস্বীর আবদার করলেন এবিভিপি-র স্বঘোষিত সমর্থক ঋষিরাজ রথী।

শুক্রবারই মোদী সরকারের মন্ত্রী পীযূষ গয়াল অভিজিৎকে ‘বাম ঘেঁষা’ বলে কটাক্ষ করেছেন। সেই নোবেল-জয়ীর সঙ্গেই নিজস্বী সোশ্যাল মিডিয়ায় দিয়ে ঋষিরাজের মন্তব্য, ‘‘এটা মতাদর্শের বিষয় নয়। হৃদয়ের আবেগের বিষয়। জেএনইউ-এর দু’জনকে এক সেলফিতে আসতে কেউ আটকায় না।’’

নোবেল জয়ের পরে দেশের মাটিতে পা রেখে অভিজিৎ প্রথমেই ছুটলেন তাঁর এমএ পড়াশোনার ক্যাম্পাস জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে দাঁড়িয়ে তাঁর নোবেল পাওয়াকে নিছক ‘বেড়ালের ভাগ্যে শিকে ছেঁড়া’ বলে আখ্যা দিলেন। মনে করিয়ে দিলেন, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ও তিনি একই সময়ে জেএনইউ-এ পড়েছেন। ১৯৮৩ সালে অভিজিৎ যখন এমএ পাশ করেন, তখন এমফিল করছেন নির্মলা। পরে এক সাক্ষাৎকারে অভিজিতের মন্তব্য, ‘‘নির্মলা আমার বন্ধু ছিলেন। সুন্দর ব্যক্তিত্ব, বুদ্ধিমতী নির্মলার রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি আমার সম্পূর্ণ বিপরীত ছিল না।’’

সরকারের পক্ষ থেকে এখনও কেউ তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁকে শুভেচ্ছা জানাননি। যদিও তা নিয়ে মাথা ঘামাতে নারাজ অভিজিৎ। তাঁর কথায়, ‘‘ওঁদের অনেক কাজ আছে।’’ তবে মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অভিজিতের সাক্ষাৎ হওয়ার কথা।

লোকসভা ভোটের আগে রাহুল গাঁধীর প্রকল্প ‘ন্যায়’-এর অন্যতম মস্তিষ্ক অভিজিৎকে কটাক্ষ করে পীযূষ বলেছেন, ‘‘ভারতের জনতা তাঁর ভাবনা খারিজ করে দিয়েছে।’’ এই প্রকল্পে দেশের জনসংখ্যার ২০ শতাংশ দরিদ্র পরিবারকে বছরে ৭২ হাজার টাকা করে দেওয়ায় প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। আজ অভিজিৎ জানান, মানুষ ন্যূনতম আয়ের ভাবনা খারিজ করেছে, এমন যুক্তি শুনে তিনি কিছুটা হলেও হতাশ। তবে ভোটাররা তাঁর কথায় কান দিয়েছিলেন সেটা শোনাও তৃপ্তিদায়ক। অভিজিৎ বলেন, ‘‘অর্থনীতি নিয়ে ভাবনার ক্ষেত্রে আমার কোনও পক্ষপাত নেই। বিজেপি সরকার যদি আমার কাছে জানতে চাইত যে, একটি নির্দিষ্ট আয়ের মানুষ জনসংখ্যার কতটা, আমি কি তাদের সত্যিটা কী তা বলতাম না?’’

অভিজিৎ একই সঙ্গে জানিয়েছেন, অতীতে মনমোহন সিংহ সরকারেরও সমালোচনা করেছেন তিনি। কংগ্রেস আমলেই জেএনইউ-এ উপাচার্যকে ঘেরাও করার দায়ে তাঁকে ১০ দিন কাটাতে হয়েছিল তিহাড় জেলে।

অভিজিৎকে পীযূষ বিদ্রুপ করায় আজ কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা বলেন, ‘‘সরকারের কাজ ভেঙে পড়া অর্থনীতিকে বাঁচানো। কমেডি সার্কাস চালানো নয়।’’ কিন্তু অর্থনীতির ঝিমুনি কাটাতে ‘বন্ধু’ নির্মলা কর্পোরেট কর ছাঁটাইয়ের যে দাওয়াই দিয়েছেন, তাকে খারিজ করে দিয়েছেন অভিজিৎ। তাঁর অভিযোগ, সরকার কর্পোরেট জগতের ‘প্রবল চাপ’-এর সামনে মাথা নত করেছে। অভিজিতের মতে, এই মুহূর্তে সমস্যা হল বাজারে চাহিদার অভাব। সে জন্য আমজনতার হাতে নগদ টাকা তুলে দেওয়া দরকার। তিনি বলেন, ‘‘নির্মলা বরং প্রথমে কর্পোরেট কর বাড়িয়েই স্মার্ট পদক্ষেপ করেছিলেন। কর্পোরেট কর কমানোয় যে রাজস্ব ক্ষতি হবে, তা একশো দিনের কাজ প্রকল্পে খরচের দ্বিগুণ। এখন দরকার একশো দিনের কাজে খরচ বাড়ানো, চাষিদের বেশি সহায়ক মূল্য দেওয়া। তা হলে বাজারে চাহিদা বাড়ত।’’

অর্থনীতির ঝিমুনি কাটাতে কেন্দ্র ভুল নীতি নিচ্ছে বলে অভিযোগ করে অভিজিতের বক্তব্য, মূল্যবৃদ্ধি কমেছে ঠিকই, কিন্তু কৃষিপণ্যের সহায়ক মূল্য বাড়েনি। পাশাপাশি কৃষিপণ্য রফতানি কমেছে। চাষিরা মার খেয়েছেন। তাঁদের হাতে খরচ করার মতো টাকা নেই। এর আগে নোটবন্দির ফলেও নগদের অভাবে কেনাকাটা কমেছিল।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy