কিছু ক্ষেত্রে হ্যাঁ, কিছু ক্ষেত্রে না। আধার নিয়ে নির্দিষ্ট পথ বেঁধে দিল সুপ্রিম কোর্ট।
এখন থেকে ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট খোলা ও মোবাইলের সংযোগের জন্য আধার বাধ্যতামূলক নয়। সেই সঙ্গে আদালতের রায়— স্কুল-কলেজে ভর্তি, সিবিএসই, নিট, ইউজিসি-র পরীক্ষায় বসার জন্যও আধার বাধ্যতামূলক করা যাবে না। তবে প্যান কার্ডের সঙ্গে আধার-এর সংযোগ করতে হবে। প্যান কার্ড পেতেও আধার দিতে হবে। আয়কর রিটার্ন ফাইল করতে আধার প্রয়োজন হবে। যে কোনও সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পেতেও আধার বাধ্যতামূলক থাকবে। আবার আধার না থাকলেও, কাউকে বঞ্চিত করা যাবে না। সেক্ষেত্রে আধার তৈরি না হওয়া পর্যন্ত বিকল্প পরিচয়পত্র মানতে হবে।
এত দিন মোবাইলে বারবার হুঁশিয়ারি মিলত, মোবাইলের সঙ্গে আধার নম্বর যোগ করুন। একই হুঁশিয়ারি আসছিল ব্যাঙ্ক থেকেও— অ্যাকাউন্ট চালু রাখতে হলে আধার দিতে হবে। অ্যাকাউন্টে রান্নার গ্যাস বা অন্য কোনও সরকারি ভর্তুকি আসুক বা না আসুক। নতুন অ্যাকাউন্ট খুলতে হলে তো আধার ছাড়া চলবেই না।
আজ তাতে বাদ সাধল সুপ্রিম কোর্ট। মোদী সরকার অবশ্য এতে খুশি নয়। অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি ইঙ্গিত দিয়েছেন, মোবাইল সংযোগ ও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের ক্ষেত্রে আধার বাধ্যতামূলক করতে প্রয়োজনীয় আইন আনা হতে পারে বা আইন সংশোধন করা হতে পারে। ব্যাঙ্কে জালিয়াতি, প্রতারণা রুখতেই আর্থিক নয়ছয় প্রতিরোধ আইনে সংশোধন করে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলায় আধার বাধ্যতামূলক করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। এতে নীরব মোদী-মেহুল চোক্সীদের আটকানো গিয়েছিল কি না, তা নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন উঠেছে।
সিবিএসই, নিট, ইউজিসি-র পরীক্ষায় বসতেও আধার দরকার পড়বে না, বলে রায় আদালতের। স্কুলও ভর্তির সময় আধার চাইতে পারবে
না। সিবিএসই স্কুলগুলিতে এখন ছাত্রছাত্রীদের আধার চাওয়া হচ্ছে। ফলে ছোটদেরও আধার কার্ড তৈরি করাতে হচ্ছে। শীর্ষ আদালতের রায়, অভিভাবকরাই সম্মতি দিতে পারেন, শিশু বা নাবালকদের আধার তৈরি হবে কি না। কিন্তু কারও ১৮ বছর বয়স হলে সে চাইলে আধার ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে যেতে পারে। তবে আধার
না থাকলে কোনও শিশুকে সরকারি সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। আধার বাধ্যতামূলক করা যাবে না সর্ব শিক্ষা অভিযান ও শিক্ষা প্রকল্পে।
মোবাইলের সংযোগ চালু রাখতে বা নতুন সিম কার্ডেও আধার দরকার নেই। অন্য সচিত্র পরিচয়পত্র দিলেও চলবে। সন্ত্রাসবাদী বা অপরাধীদের বেনামে মোবাইল সংযোগ পাওয়া রুখতে আধার বাধ্যতামূলক করা হয়। সুপ্রিম কোর্টের রায়, কিছু লোক সিম কার্ডের অপব্যবহার করছে বলে গোটা দেশের লোকের ব্যক্তিগত জীবনে নাক গলানো যায় না। এই পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের যুক্তি, ব্যাঙ্ক ও মোবাইল সংস্থাগুলি ইতিমধ্যেই বহু মানুষের আধার নম্বর সংগ্রহ করে ফেলেছে। এখন সুপ্রিম কোর্ট সেই ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছে। অথচ আধার আইনে বিনা অনুমতিতে আধার তথ্য রাখা অপরাধ। তাই নতুন আইনের কথা ভাবতে হতে পারে। শুধু ব্যাঙ্ক নয়, মোবাইল ওয়ালেট সংস্থা বা পেমেন্টস ব্যাঙ্কগুলিও কেওয়াইসি-র জন্য আধার চাইত। আজকের রায়ে তারাও আধার চাইতে পারবে না।
প্রান্তিক মানুষের সামাজিক সুরক্ষায় আধারের উপযোগিতা স্বীকার করেছে আদালত। সরকারি ভর্তুকির সুবিধা পেতে যে কারণে আধার লাগবে। আবার একই সঙ্গে, কোনও শিশু বা কোনও পিছিয়ে থাকা শ্রেণির মানুষ যাতে কেবল আধার না থাকার কারণে সামাজিক সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত না হন, তা-ও নিশ্চিত করতে বলেছে আদালত। বলে দিয়ে মনে করিয়েছে, খুব সামান্য সংখ্যক কিছু মানুষ বাদ পড়ে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন, এই আশঙ্কার বশে বিরাট সংখ্যক মানুষকে নিশ্চিত সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা অর্থহীন।
কোর্ট-কথা
• সেরা হওয়ার চেয়ে অদ্বিতীয় হওয়া ভাল। কারণ, সেরা মানে আপনি এক নম্বর। আর অদ্বিতীয় মানে আপনিই এক ও একমাত্র।’
• সাম্প্রতিক বছরগুলিতে দেশে-বিদেশে সব চেয়ে চর্চিত শব্দ হল ‘আধার’। শব্দটা বললে লোককে আর অভিধান হাতড়াতে হয় না। সে বুঝে যায়, এ হল এমন
একটি কার্ড যার সাহায্যে কাউকে চিহ্নিত করা যায়।
• আধার প্রকল্পে নাগরিকদের অন্তর্ভুক্তির জন্য যৎসামান্য বায়োমেট্রিক ও জনপরিসংখ্যানগত তথ্য সংগ্রহ করছে ইউআইডিএআই। পুরোটাই
হচ্ছে বৃহৎ জনস্বার্থে। আমরা মনে করি, সংগৃহীত তথ্যের পর্যাপ্ত রক্ষাকবচ রয়েছে।
• ৩ শতাংশের জন্য বাকি ৯৭ শতাংশকে আধারের সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা সম্ভব নয়। স্নানের জল ফেলে দেওয়ার সময়ে তো বাচ্চাটাকেও ফেলে দেওয়া যায় না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy