Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪
Crime

গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিলেন রাজা, ৩৫ বছর পর দোষী সাব্যস্ত পুলিশ

উল্লেখযোগ্য ভাবে, রাজা মান সিংহ হত্যাকাণ্ডের রায় এমন সময় এল, যখন রাজস্থানে কংগ্রেসের সরকার টিকিয়ে রাখা নিয়ে টানাপড়েন চলছে।

এই জিপে চেপেই বেরিয়েছিলেন রাজা মান সিংহ। —ফাইল চিত্র।

এই জিপে চেপেই বেরিয়েছিলেন রাজা মান সিংহ। —ফাইল চিত্র।

সংবাদ সংস্থা
মথুরা শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০২০ ১৭:৫৬
Share: Save:

অপরাধ জগতে ওঠাবসা ছিল না কখনওই। বরং ‘রাজপাট’ সামলাতেই ব্যস্ত ছিলেন। কিন্তু রাজনীতির ময়দানে পা রাখতে গিয়েই বিপদ ডেকে এনেছিলেন তিনি। আর তাতেই পুলিশের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যেতে হয়েছিল তাঁকে। ৩৫ বছর আগের রাজস্থানের ভরতপুরের রাজা মান সিংহের সেই হত্যাকাণ্ডে, এত দিনে দোষী সাব্যস্ত হলেন ১১ জন পুলিশকর্মী। বুধবার তাঁদের সাজা ঘোষণা করবে আদালত।

১৯৮৫ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। তার জেরে মরুরাজ্যের রাজনীতি উথালপাথাল হয়ে যায়। পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে রাজ্যে তৎকালীন কংগ্রেস সরকারের মুখ্যমন্ত্রী শিবচরণ মাথুরকে ইস্তফা পর্যন্ত দিতে হয়। তার পর বিগত ৩৫ বছর ধরে মামলাটির শুনানি চলছিল। শেষমেশ মঙ্গলবার উত্তরপ্রদেশের মথুরা আদালত এই মামলায় রায় শোনাল।

শোনা যায়, সেইসময় রাজনীতিতে পা রাখতে যাচ্ছিলেন রাজা মান সিংহ। ’৮৫-র বিধানসভা নির্বাচনে ভরতপুরের ডিগ নির্বাচনী কেন্দ্র থেকে নির্দল প্রার্থী হিসেবে দাঁড়ানোর কথা ছিল তাঁর। এ নিয়ে কংগ্রেসের সঙ্গে আলোচনাও হয় তাঁর। তাঁর বিরুদ্ধে প্রার্থী দেবেন না বলে কংগ্রেস তাঁকে আশ্বস্ত করে। তা সত্ত্বেও অবসরপ্রাপ্ত আইএএস অফিসার ব্রিজেন্দ্র সিংহকে ওই কেন্দ্রের প্রার্থী করেন মুখ্যমন্ত্রী শিবচরণ।

আরও পড়ুন: ভারত মহাসাগরে চিনের বাড়াবাড়ি, আগামী বছরই সাবমেরিন ধ্বংসকারী বিমান হাতে পাচ্ছে ভারত​

২০ ফেব্রুয়ারি ব্রিজেন্দ্রর হয়ে ভরতপুরে প্রচারে যান শিবচরণ। তাতেই মেজাজ হারান রাজা মান সিংহ। জিপ চালিয়ে সভাস্থলে হাজির হন তিনি। যে হেলিকপ্টারে চেপে শিবচরণের ফিরে যাওয়ার কথা ছিল, জিপ নিয়ে সেটিতে দু’বার সজোরে ধাক্কা মারেন তিনি। তাতে হেলিকপ্টারটি মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

কপ্টারে ধাক্কা মেরে ফিরে যান তিনি। কিন্তু তত ক্ষণে এই ঘটনায় উত্তাল হয়ে উঠেছে ভরতপুরের পরিস্থিতি। তাঁকে গ্রেফতার করতে সক্রিয় হয় পুলিশ। তার মধ্যেই ২১ ফেব্রুয়ারি সকালে সহযোগীদের নিয়ে জিপে চেপে ফের বাইরে বেরোন তিনি। তিনি থানায় আত্মসমর্পণ করতে যাচ্ছিলেন বলে দাবি রাজা মান সিংহের পরিবারের।

জিপের ধাক্কায় ক্ষতিগ্রস্ত কপ্টার। —ফাইল চিত্র।

সেইসময় ভরতপুরে একটি বাজারের মধ্যে রাজা মান সিংহের লোকজনের সঙ্গে তৎকালীন ডেপুটি সুপার কান সিংহ ভাটির নেতৃত্বাধীন পুলিশ বাহিনীর সংঘর্ষ বাধে। দু’পক্ষই একে অপরকে লক্ষ্য করে এলোপাথাড়ি গুলি ছুড়তে শুরু করে। তাতে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় রাজা মান সিংহ এবং তাঁর সহযোগীদের।

আরও পড়ুন: গহলৌতের সহকারীকে সিবিআই জেরা, হাইকোর্টের রায় শুক্রবার​

প্রকাশ্য দিনের আলোয় পুলিশের গুলিতে রাজার মৃত্যুতে তেতে ওঠে ভরতপুর-সহ গোটা রাজস্থান। তাঁর আঁচ পৌঁছয় দিল্লিতেও। তার জেরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে রাজা মান সিংহের মৃত্যু দু’দিন পরই মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিতে হয় শিবচরণ মাথুরকে। ২৮ ফেব্রুয়ারি সিবিআইয়ের হাতে গোটা ঘটনার তদন্তভার গিয়ে পড়ে। ১৪ জন পুলিশকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়।

শুরুতে রাজস্থানের আদালতেই এই মামলার শুনানি চলছিল। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে পরে তা মথুরায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। গত তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে এই মামলায় ১৭০০-র বেশি শুনানি হয়েছে। তার পর এ দিন কান সিংহ-সহ এই ঘটনায় যুক্ত ১১ জনকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত। প্রমাণের অভাবে মুক্তি দেওয়া হয় তিন জনকে। আগামী কাল দোষীদের সাজা শোনানো হবে।

উল্লেখযোগ্য ভাবে, রাজা মান সিংহ হত্যাকাণ্ডের রায় এমন সময় এল, যখন রাজস্থানে কংগ্রেসের সরকার টিকিয়ে রাখা নিয়ে টানাপড়েন চলছে। মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে নিজের অনুগামী ১৮ জন বিধায়ককে নিয়ে রাজ্য থেকে সরে গিয়েছেন সচিন পাইলট। এই বিদ্রোহী বিধায়কদের মধ্যে রয়েছেন বিশ্বেন্দ্র সিংহও, যিনি সম্পর্কে রাজা মান সিংহের ভাইপো। দলবিরোধী কাজে লিপ্ত থাকার অভিযোগে তাঁকে ইতিমধ্যে সাসপেন্ডও করেছে কংগ্রেস।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy