বিবেকানন্দ হোমিওপ্যাথি মেডিক্যাল কলেজ।—নিজস্ব চিত্র।
সরকারি অনুদান মিললেও বেহাল অবস্থায় চলছে সাঁইথিয়ার বীরভূম বিবেকানন্দ হোমিওপ্যাথি মেডিক্যাল কলেজের। ডাক্তার ও কর্মীদের বেতন, কলেজ ও হাসপাতালের রক্ষনাবেক্ষণ ও রোজের খরচ চালাতে গিয়েই হিমশিম খাচ্ছে রাজ্যের অন্য হোমিওপ্যাথি কলেজগুলির মতো এই কলেজটিও। অভাব আর অভিযোগ নিয়ে তাই রাজ্য সরকারের অধিগ্রহণের দিন গুনছে এই হোমিও-কলেজ।
সোমবার সাঁইথিয়া হোমিওপ্যাথি কলেজ পরিদর্শনে যান আয়ূসের স্বাধীন ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি ক্ষমতায় আসার পর, বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষদের সঙ্গে স্বাস্থ্য ভবনে বৈঠকে বসেন। মন্ত্রীর নিদেশেই ওই বৈঠকে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির কনভেনার করা হয় ডাইরেক্টর অফ হোমিওপ্যাথকে। মন্ত্রী নির্দেশ দেন, আয়ূসের অন্তর্গত সমস্ত বেসরকারি কলেজগুলির পরিকাঠামো, বেতন কাঠামো ও সমস্যা নিয়ে দু’মাসের মধ্যে রিপোর্ট দেওয়ার জন্য। এবং কলেজ গুলি নিজে পরিদর্শন করার কথাও বলেন। সোমবার আশিসবাবু বীরভূম বিবেকানন্দ হোমিওপ্যাথি মেডিক্যাল কলেজে ঘুরে দেখেন ও চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেন। খোঁজ নেন নানা সমস্যার বিষয়ে।
১০ বিঘে জায়গা জুড়ে সাঁইথিয়া হোমিওপ্যাথি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালটি ৬০ শয্যার হাসপাতাল ও কলেজটিকে বহু সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে। কর্মীদের বেতন শুধু নয়, রোগীদের খাবার, ওষুধ ও আনুসাঙ্গিক খরচ যোগাড় করতেও নিত্য অসুবিধার মধ্যে পড়তে হচ্ছে। নিরাপত্তার স্বার্থে পাঁচিল দেওয়ার প্রয়োজন থাকলেও সেটি এখনও করে উঠতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। সাঁইথিয়া কলেজের শিক্ষক ডাক্তার আজিজুর রহমান, বিষ্ণু প্রকাশ সরকার, কর্মী সুপ্রভাত সাহা, অরবিন্দ সরকাররা জানান, দীর্ঘদিন থেকে কলেজের সঙ্গে যুক্ত। কলেজ কর্তৃপক্ষের অনুরোধে আমরা ও অন্য চিকিৎসক, কর্মীরা কার্যত স্বেচ্ছাশ্রম দিই। উপযুক্ত পারিশ্রমিকের আশায় এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলাম। কিন্তু সম্মানজনক বেতন পাই না।
এ রাজ্যের সল্টলেকে কেন্দ্রীয় সরকারের একটি হোমিওপ্যাথি কলেজ ও ১২ টি হোমিওপ্যাথি মেডিকেল কলেজ রয়েছে। এর মধ্যে চারটি সরকারি, বাকি আটটি সরকার অনুমোদিত বেসরকারি। কিন্তু সরকারি নিয়ম নীতির বেড়াজাল এবং আর্থিক কারণে বেসরকারি কলেজগুলি ধুঁকছে। ইতিমধ্যে একটি বন্ধও হয়ে গেছে। বেসরকারি কলেজগুলি দীর্ঘ দিন অধিগ্রহনের দাবি জানিয়ে আসছে। এই সমস্ত কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবি, কলেজ গুলি সুস্থভাবে পরিচালনা করতে গেলে কম করে তিন থেকে সাড়ে তিন কোটি টাকা প্রয়োজন। সেখানে রাজ্য সরকার বছরান্তে মাত্র ৩০ থেকে ৪০ লক্ষ টাকা দিয়ে থাকে। বাকি টাকা নিতে হয় ছাত্রদের কাছ থেকে। তা যোগার করতে গিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষকে হিমসিম খেতে হয়। তাঁদের দাবি, “মোট রোগীর ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ হোমিওপ্যাথি চিকিৎসাধীন। অথচ, সরকার কোনওভাবেই এই কলেজ-হাসপাতালগুলির দিকে তাকাচ্ছে না।”
রাজ্যে ১২টি কলেজের মধ্যে দুটি কলেজে রয়েছে ৬০টি আসন, বাকি কলেজগুলিতে ৫০টি করে। ৬০ আসনের কলেজ দুটির একটি হল, সাঁইথিয়ার এই হোমিওপ্যাথি কলেজটি। জয়েন্ট এন্টান্স কাউন্সিলের উদাসিনতার কারণে বেসরকারি এই সব অধিকাংশ কলেজেই আসন খালি থেকে যায়। এই সব বেসরকারি কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবি, কাউন্সিলের নিয়মানুযায়ী সরকারি ও বেসরকারি সমস্ত কলেজেই জয়েন্ট পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তির নিয়ম। বেসরকারি কলেজগুলির জয়েন্ট কাউন্সিলের সিলেকশন বোর্ডকে আরোও দায়িত্বশীল হতে হবে। সাঁইথিয়া হোমিওপ্যাথি কলেজের অধ্যক্ষ তপন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “মে মাসে জয়েন্ট পরীক্ষা হয়। রেজাল্ট বেরতে বেরতে জুলাই গড়িয়ে যায়। কাউন্সিলিং হয় সেপ্টেম্বর মাসে। আসন খালি থাকার এটা একটা কারণ।”
সাঁইথিয়া হোমিওপ্যাথি কলেজ এমএসইর যে গাইড লাইন মেনে, সেই মতো ২৪ জন ফুল টাইম ডাক্তার, ৮ জন গেস্ট ডাক্তার, ৫০ বেডে ৪ জন নার্স এবং অন্যান্য কর্মী অন্তত ৫০ জন ও সেই মোতাবেক পরিকাঠামো রাখলেও রাজ্য সরকারের অধিগ্রহণের কোনও উদ্যোগ নেই। উলটে ডাক্তার ও কর্মীর বেতন, কলেজ ও হাসপাতালের রক্ষনাবেক্ষণ ও দৈনন্দিনের খরচ খরচা চালাতে গিয়ে রীতিমত হিমসিম খেতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে।
পরিদর্শন শেষে আশিসবাবু জানান, সরকার অনুমোদিত বেসরকারি কলেজ গুলির আর্থিক সাহায্যের ব্যাপারে তিনি রাজ্যের অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন। ইতিমধ্যে তিনি যে কমিটি করে দিয়েছেন, সেই কমিটিকে দু’মাসের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বলেও জানান তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy