Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

ভোলবদল হাসপাতালের, মিলছে উন্নত পরিষেবা

স্বাস্থ্য পরিষেবার চেহারাই বদলে গিয়েছে টালিগঞ্জের এমআর বাঙুর হাসপাতালে। সরকারি, বেসরকারি এবং প্রশাসনের বিভিন্ন মহলের সমন্বয়ে গত কয়েক বছরে এটা সম্ভব হয়েছে। এক ছাতার নীচে, স্বল্প মূল্যে রোগীরা পেতে পারেন ওষুধ, সিটি স্ক্যান, রক্তের নানা পরীক্ষা, ইউএসজি, ইসিজি, এন্ডোস্কপি, এমনকী ডায়ালিসিস-এর সুযোগ। কুকুরে কামড়ালে ২৪ ঘণ্টাই ইঞ্জেকশন দেওয়ার সুযোগ। হাসপাতাল সূত্রে খবর, সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে ডিজিট্যাল এক্সরে এবং এমআরআইয়ের সুযোগ পাওয়া যাবে। রয়েছে হাসপাতালের নিজস্ব ‘ব্লাড ব্যাঙ্ক।’

বদলে গিয়েছে বাঙুর হাসপাতাল।

বদলে গিয়েছে বাঙুর হাসপাতাল।

দেবাশিস দাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:২১
Share: Save:

স্বাস্থ্য পরিষেবার চেহারাই বদলে গিয়েছে টালিগঞ্জের এমআর বাঙুর হাসপাতালে। সরকারি, বেসরকারি এবং প্রশাসনের বিভিন্ন মহলের সমন্বয়ে গত কয়েক বছরে এটা সম্ভব হয়েছে।

এক ছাতার নীচে, স্বল্প মূল্যে রোগীরা পেতে পারেন ওষুধ, সিটি স্ক্যান, রক্তের নানা পরীক্ষা, ইউএসজি, ইসিজি, এন্ডোস্কপি, এমনকী ডায়ালিসিস-এর সুযোগ। কুকুরে কামড়ালে ২৪ ঘণ্টাই ইঞ্জেকশন দেওয়ার সুযোগ। হাসপাতাল সূত্রে খবর, সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে ডিজিট্যাল এক্সরে এবং এমআরআইয়ের সুযোগ পাওয়া যাবে। রয়েছে হাসপাতালের নিজস্ব ‘ব্লাড ব্যাঙ্ক।’

দক্ষিণ শহরতলির টালিগঞ্জ, যাদবপুর থেকে শুরু করে ক্যানিং, গোসাবা, কুলতলি, বাসন্তী-সহ সুন্দরবনের বিভিন্ন দ্বীপের বাসিন্দাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা এই হাসপাতালের উপরে নির্ভরশীল। কুলতলি থেকে আসা রোগীর আত্মীয় মনোজকুমার জানা বলেন, “ছোটবেলা থেকে বাড়ির কেউ অসুস্থ হলে এই হাসপাতালেই নিয়ে আসি। শুধু হাসপাতালের চেহারা বদলায়নি পরিষেবার মানও অনেক উন্নত হয়েছে।”

রোগীর আত্মীয়রা জানান, এই ধরনের পরিষেবা বাঙুর হাসপাতালে সুলভে মিলছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, অনেকগুলি পরিষেবা পিপিপি (পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ) মডেলে চলছে। তবে এক ছাতার নীচে এই সব ব্যবস্থা চালু করতে স্বাস্থ্য ভবনের সবুজ সঙ্কেত পেতে অনেক ঘাম ঝরাতে হয়েছে বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান। স্বাস্থ্যভবনের কর্তাদের একাংশের যুক্তি ছিল শুধু একটি জেলা হাসপাতালে এত কিছুর অনুমতি দিলে অন্য জেলা হাসপাতালগুলির কর্তৃপক্ষ ক্ষুণ্ণ হতে পারেন। তবে শেষ পর্যন্তঅনুমতি মেলে।

হাসপাতালের সুপার সোমনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, “সিংহভাগ কৃতিত্বই রাজ্যের মন্ত্রী এবং আমাদের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান অরূপ বিশ্বাসের।” অরূপবাবু বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী দেশের মধ্যে রাজ্যকে স্বাস্থ্যে এক নম্বর করার কথা বলেছেন। আমি সেই কাজই করেছি।”

তৈরি হয়েছে ৪০টি কেবিনের অত্যাধুনিক শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ‘বার্ন ইউনিট’। আগুনে পোড়া রোগীদের জন্য আলাদা অপারেশান থিয়েটার। সেখানে প্লাস্টিক সার্জারির সুবিধাও আছে। হাসপাতাল সূত্রের খবর, এই বার্ন ইউনিটটি, এসএসকেএম হাসাপতালের সঙ্গে যৌথ ভাবে পরিচালিত হচ্ছে। বদলে গিয়েছে বাঙুরের শিশু ওয়ার্ডের চেহারাও।

৪২ শয্যার এই ওয়ার্ডটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। সদ্যোজাতদের জন্য ৫০টি শয্যার অত্যাধুনিক ওয়ার্ডও রয়েছে। রয়েছে নিওনেটাল কেয়ার অ্যাম্বুল্যান্সও। চিকিৎসকদের মতে, সদ্যোজাতদের এই ওয়ার্ডটির সঙ্গে যে কোন বেসরকারি হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের তুলনা করা যায়।

হাসপাতালে রয়েছে উন্নতমানের ১৩টি কেবিন। এই হাসপাতালে একটি ২৪ শয্যার ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) রয়েছে। কর্তৃপক্ষের দাবি, রাজ্যের কোনও জেলাস্তরের হাসপাতালে এত বড় সিসিইউ নেই। উন্নত হয়েছে বাঙুরের জরুরি পরিষেবাও। জরুরি বিভাগে প্রথমে রোগীকে ১০ শয্যার অবজার্ভেশন ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা হয়। হাসপাতাল সূত্রে খবর, খুব শীঘ্র অবজার্ভেশন ওয়ার্ডের আরও ১০টি শয্যার ব্যবস্থা হবে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার মুখ্য স্বাস্থ্যআধিকারিক অসীম দাসমালাকার বলেন, “হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আন্তরিক প্রচেষ্টাতেই একটি জেলা হাসপাতালকে এই চেহারায় আনা গিয়েছে।”


সেজে উঠেছে হাসপাতাল চত্বর। ছবি:শুভাশিস ভট্টাচার্য

বদলে গিয়েছে হাসাপাতাল চত্বরের পরিবেশও। চত্বর পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য কর্তৃপক্ষ চেষ্টা চালান। সাজানো হয়েছে বাগান, জলাশয়ও। ওয়ার্ডগুলি আগের তুলনায় অনেক বেশি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। টাইলস, রঙিন ম্যুরালে সজ্জিত হয়েছে দেওয়াল। সহকারী সুপার সেবন্তী মুখোপাধ্যায় বলেন, “ব্যাঙ্কের সহায়তায় বাগান রক্ষণাবেক্ষণ করা হচ্ছে। জেলা পরিষদের বন বিভাগ থেকে গাছ আনা হচ্ছে। মৎস্য দফতর থেকে রঙিন মাছ এনে এখানকার জলাশয়ে ছাড়া হয়েছে। নজরদারিও চলছে।” রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথি বলেন, “রাজ্যের সব ক’টি জেলা হাসপাতালে উন্নয়নের কাজ চলছে। বাঙুরের ক্ষেত্রে সেই কাজের গতিটা একটু বেশি। তাই নির্ধারিত সময়ের আগেই উন্নত চেহারাটা দেখা যাচ্ছে।”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE