মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সব মিলিয়ে দু’শোরও বেশি চিকিৎসক রয়েছেন। অথচ রবিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চিকিৎসকদের দেখাই পেলেন না রোগীরা। হাসপাতালে ভর্তির পরেও যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে ট্রলি থেকে পড়ে মৃত্যু হল প্রসূতি ও তার ন’মাসের শিশুর। মেল মেডিসিন, ফিমেল মেডিসিন ও পেয়িং মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীদের দেখতেও কোনও চিকিৎসক হাজির ছিলেন না। শুধু তাই নয়, ওয়ার্ড থেকে এবং ওয়ার্ড মাস্টার অফিস থেকে চিকিৎসকদের কলবুক দিয়ে ডেকে পাঠানোর পরে চিকিৎসক রোগীদের দেখতে আসেননি বলে অভিযোগ।
সকাল থেকে অপেক্ষার করে দুপুর গড়িয়ে যাওয়ার পর চিকিৎসকরা ওয়ার্ডে না যাওয়ায় চিকিৎসাধীন রোগীদের পরিবারের লোক ক্ষোভে ফেটে পড়েন। শেষ পর্যন্ত রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান তথা রাজ্যের মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরীর হস্তক্ষেপে দুপুর তিনটে নাগাদ নবনিযুক্ত এক চিকিৎসককে পাঠিয়ে কোনও রকমে পরিস্থিতির সামাল দেন মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ। ডিউটি থাকা সত্ত্বেও চিকিৎসকেরা না আসায় ক্ষুব্ধ মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুবাবু। তিনি বলেন, “রোগীরা অসুস্থ হয়ে পড়ে থাকবেন। ডিউটি থাকার পরেও চিকিৎসকেরা আসবেন না, এটা মানা হবে না। এ দিন যাঁরা আসেনি, সকলকে অনুপস্থিত চিহ্নিত করা হচ্ছে। তাঁদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তা দেখা হচ্ছে।”
পরিস্থিতি চরমে ওঠে এ দিন দুপুর সাড়ে তিনটে নাগাদ। দুপুর দেড়টার সময় কালিয়াচকের শেরশাহী এলাকার বাসিন্দা ন’মাসের গর্ভবতী সাহেরা বিবিকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা সত্ত্বেও বিনা চিকিৎসায় তাঁকে ট্রলিতে ফেলে রাখা হয় বলে অভিযোগ। যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে ট্রলি থেকে প’ড়ে যান তিনি। তখনও চিকিৎসকের দেখা মেলেনি। আধ ঘণ্টা পড়ে থেকে মৃত্যু হয় সাহেরা ও তাঁর ন’মাসের শিশুর।
হাসপাতাল সূত্রে খবর, মেডিক্যাল কলেজ চালুর পর হাসপাতালের প্রতিটি বিভাগে চিকিৎসকদের নিয়ে আলাদা আলাদা ইউনিট গঠন করা হয়। প্রতিটি বিভাগে একাধিক ইউনিট এবং তাতে ৩-৪ জন করে চিকিৎসক রয়েছেন। মেডিসিন বিভাগ যেখানে দিনভরই চিকিৎসকদের দেখা মেলেনি বলে অভিযোগ, সেটি ইউনিট ১-এ। সেখানে চার জন চিকিৎসক রয়েছেন। বর্তমানে ওই ইউনিটের অধীনে ৭০ জনের বেশি রোগী ভর্তি রয়েছেন। অথচ এদিন ওই চার জন চিকিৎসকের এক জনও আসেননি বলে অভিযোগ।
হরিশ্চন্দ্রপুরের তুলসীহাটার ৮৭ বছরের বৃদ্ধ বৈদ্যনাথ গুপ্তকে অসুস্থতার জন্য গত শনিবার দুপুরে মেডিসিন বিভাগের পেয়িং বেডে ভর্তি করানো হয়। এদিন দুপুরে তাঁর ছেলে রমেশ গুপ্ত বলেন, “ভতির্র পর থেকে দুপুর অবধি বাবাকে কোনও চিকিৎসক দেখেননি। নার্সরা চিকিৎসকদের কলবুক দেন। তাও কেউ আসেননি।’’ এদিন হাসপাতাল থেকে ছাড়ার কথা থাকলেও চিকিৎসকেরা না আসায় অনেকেই রোগীকে বাড়ি নিয়ে যেতে পারেননি। সকাল থেকে যে ইউনিট-১ এর চিকিৎসকরা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আসেননি তা স্বীকার করেছেন হাসপাতালের সুপারও।
নার্সরা জানান, মেডিসিন বিভাগে ইউনিট ওয়ানের কোনও চিকিৎসক না আসায় সমস্যা পড়তে হয়েছে। বিষয়টি সুপার এবং ওয়ার্ড মাস্টারকে জানানো হয়েছে। রোগীর পরিবারের লোক এসে চিকিৎসকদের খোঁজ করেছেন। কলবুক দেওয়ার পরেও চিকিৎসকেরা আসেননি। এ দিন মালদহ মেডিক্যল কলেজ হাসপাতালের সুপার মহম্মদ আবদুর রসিদ শুধু বলেন, “নার্স ও ওয়ার্ড মাস্টার জানিয়েছেন, ইউনিট ১ এর কোনও চিকিৎসক আজকে রোগী দেখতে যাননি। পরে অন্য এক জন চিকিৎসককে সেখানে পাঠানো হয়।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy