উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে এনসেফ্যালাইটিসের উপসর্গ নিয়ে মৃত ইসলামপুরে মৌলানা মহম্মদ হুসেনের পরিবার। মঙ্গলবার বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।
মৃত্যু-মিছিল থামছেই না উত্তরবঙ্গে। খিঁচুনি-জ্বরে আর এক রোগীর মৃত্যু হল উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।
মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১২ টা নাগাদ তাঁর মৃত্যু হয়। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতের নাম মৌলানা মহম্মদ হুসেন (৭৫)। বাড়ি উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুরে আগুরসিয়া এলাকায়। শিলিগুড়ির একটি নার্সিংহোম থেকে সোমবার বিকেলে তাঁকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। নার্সিংহোমে এক দিনের চিকিৎসা খরচ ৩০ হাজার টাকা হয়েছে দেখে রোগীকে সেখান থেকে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতলে নিয়ে এসেছিলেন পরিবারের লোকেরা। রাতে রোগী কিছুটা ভাল ছিল বলে পরিবারের লোকদের দাবি। এ দিন বেলা ১২ টা নাগাদ এনসেফ্যালাইটিসের পরীক্ষার জন্য তাঁর সেরিব্রো স্পাইনাল ফ্লুইড (সিএসএফ) নেওয়ার কিছুক্ষণ পরেই রোগীর মৃত্যু হয়। ওই ঘটনার পরেই রোগীর পরিবারের দাবি, ওই রস সংগ্রহ করতে যাঁরা এসেছিলেন তাঁরা শিক্ষানবীশ বলেই মনে হচ্ছে। পিঠের দিকে শিরদাঁড়ার অংশ থেকে তা ঠিক ভাবে সংগ্রহ করতে পারছিলেন না। সেই কারণেই কোনও সমস্যা হওয়ায় রোগীর এই পরিণতি হল কি না তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পরিবারের লোকেরা।
মৃত্যুর কারণ হিসাবে চিকিৎসকরা অ্যাকিউট এনসেফ্যালাইটিস সিনড্রম এবং সঙ্গে হৃদরোগ থাকার কথা উল্লেখ করেছেন। মৃতের ছেলে মহম্মদ জেলেফ আখতার, জাফর হুসেনরা বলেন, “নার্সিংহোমে চিকিৎসা খরচ বেশি বলে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে এসেছিলাম। ভর্তির পর থেকে শুধু স্যালাইন দেওয়া হয়েছে। জুনিয়র চিকিৎসকরা দেখেছেন। তা ছাড়া বিশেষ কোনও চিকিৎসা করা হয়েছে বলে মনে হল না। রাতে বাবা কিছুটা সুস্থ ছিলেন। এ দিন বেলা ১২ টা নাগাদ পিঠের দিক থেকে শিরদাঁড়ার রস সংগ্রহ করার কিছুক্ষণের মধ্যেই মারা যান। কেন এমন হল বুঝতে পারছি না। যাঁরা ওই কাজ করতে এসেছিলেন তাঁরা ঠিক মতো করতে পারছিলেন না। তাতেই কোনও সমস্যা হল কি না পরিষ্কার নয়।” হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, শিক্ষানবীশদের দিয়ে সিএসএফ সংগ্রহের কাজ করানো হয় না। সংশ্লিষ্ট বিভাগের চিকিৎসকরাই করেন। হাসপাতালের সুপার সব্যসাচী দাস বলেন, “অভিযোগ ঠিক নয় বলেই মনে হচ্ছে। ঘটনাক্রমে হয়ত রোগীর সিএসএফ নেওয়া এবং তার পরেই রোগীর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু সিএসএফ নেওয়ার সময় কিছু ভুল হয়েছে বলে মৃত্যু হয়েছে এমন অভিযোগ ঠিক নয়।”
জ্বরে আক্রান্ত এক ব্যক্তিকে আনা হচ্ছে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে। —নিজস্ব চিত্র
গত জানুয়ারি মাস থেকে এই নিয়ে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১৪৯ জন রোগীর মৃত্যু হল। তার মধ্যে ৩৫ জন জাপানি এনসেফ্যালাইটিসে আক্রান্ত ছিলেন। গত জুলাই মাস থেকেই ১১২ জন মারা গিয়েছেন। জ্বর নিয়ে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফিভার ক্লিনিকে এ দিনও বিভিন্ন এলাকা থেকে অন্তত ৭০ জন রোগী এসেছেন। শিশু বিভাগে জ্বর নিয়ে এ দিন ৫ জনকে ভর্তি করানো হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য দফতর উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের অন্তত ১৯ জন চিকিৎসককে একযোগে বদলির নির্দেশ দেওয়া নিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন কর্তৃপক্ষ। কাকে ছাড়বেন আর কাকে ছাড়বেন না তা তারা পরিষ্কার বুঝে উঠতেই পারছেন না তাঁরা। যাদের বদলির নির্দেশ এসেছে সে সব ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রধানদের কাছে বিষয়টি পাঠানো হচ্ছে। ওই চিকিৎসক বদলি হয়ে গেলে বা পরিবর্তে অন্য চিকিৎসক এখানে এলে পরিষেবার ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা হবে না বলে বিভাগীয় প্রধানরা মনে করলে তবেই তাঁকে ছাড়পত্র দেওয়া যেতে পারে বলে কর্তৃপক্ষ মনে করছেন।
অন্যান্য হাসপাতাল এবং মেডিক্যাল কলেজ থেকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে ১৯ জনের মতো চিকিৎসক পাঠানো হলেও যে সমস্ত বিভাগ থেকে যত জন চিকিৎসক বদলি হচ্ছে পরিবর্তে ওই সমস্ত বিভাগে সেই মতো চিকিৎসক পাঠানো হচ্ছে না। এখনও পর্যন্ত কেউ আসেননি। তা ছাড়া এই চিকিৎসকদের যাওয়া এবং নতুন চিকিৎসকরা যোগ দিয়ে দায়িত্ব বুঝে নিতে বেশ কিছুদিন সময় লাগবে। এই ডামাডোল পরিস্থিতিতে পরিষেবা অনেকাংশে ব্যহত হবে বলেই মনে করছেন হাসপাতালের চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্য কর্মীদের অনেকে। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের শল্য বিভাগ থেকে ৩ জনকে বদলির নিদের্শ এসেছে। অথচ পরিবর্তে নতুন কোনও চিকিৎসক আসছে না এই বিভাগে। অথচ শল্য বিভাগে রোগীদের চিকিৎসা পরিষেবা দিতে এমনিতেই বিলম্ব হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ফাঁসিদেওয়ার লিউসিপাখরির বাসিন্দা খচা দাসের ছেলে নরেশ চন্দ্র দাস এ দিন অভিযোগ করেন, “পড়ে গিয়ে বাবার পা ভেঙে গিয়েছিল। সে কারণে ৩ মাস আগে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। অস্ত্রোপচার করতে চিকিৎসকরা দেরি করছিলেন। অনেক অনুরোধ করলে ২ মাস পর পায়ে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে।” এ দিন হাসপাতাল থেকে ছুটি দিলে তিনি বাবাকে বাড়ি নিয়ে যান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy