এনসেফ্যালাইটিসে মৃত্যু নিয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই অবস্থান বদলে ফেললেন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নতুন সুপার সব্যসাচী দাস! কিন্ত তাতেও মৃতের সংখ্যা নিয়ে ধন্দ কাটছে না।
শনিবার উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দার্জিলিঙের সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়ার সামনে বসে সব্যসাচীবাবু বলেছিলেন, জানুয়ারি থেকে ২৬ জুলাই পর্যন্ত এনসেফ্যালাইটিসের উপসর্গ থাকা রোগে ২০৩ জন মারা গিয়েছেন।
আর রবিবার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব, স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সমস্ত বিভাগীয় প্রধানদের নিয়ে বৈঠকের পরে সব্যসাচীবাবু বলেন, “তথ্য বিশ্লেষণে ভুল হয়েছিল। এই হাসপাতালে জানুয়ারি থেকে ২৬ জুলাই পর্যন্ত এনসেফ্যালাইটিসের উপসর্গ থাকা ১২০ জন মারা গিয়েছেন।” রবিবার ওই উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হওয়া আরও ২ জনের মৃত্যু হয়েছে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে।
এ দিন সুপারের এই বিবৃতির পরেও কিন্তু মৃতের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি কাটেনি। রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথীর দেওয়া হিসেব বলছে, গত জানুয়ারি থেকে ২৬ জুলাই পর্যন্ত গোটা উত্তরবঙ্গে ১০৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। রবিবার বিশ্বরঞ্জনবাবু বলেন, “আমার কাছে যে হিসেব রয়েছে, সেটাই ঠিক। আর কে কোথায় কী বলছেন, আমি জানি না।”
মৃতের সংখ্যা নিয়ে এক এক দিন এক এক জন স্বাস্থ্য অধিকর্তার এক এক ধরনের বিবৃতি দেওয়ায় বিরোধীরা তথ্য গোপনের অভিযোগ তুলতে শুরু করেছেন। এ দিন পশ্চিম মেদিনীপুরের নারায়ণগড়ে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, “এনসেফ্যালাইটিসে মৃত্যুর সংখ্যা গোপনের অভিযোগে স্বাস্থ্য-কর্তাদের নয়, সাসপেন্ড করা উচিত মন্ত্রী থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যভবনে যাঁরা বসেন তাঁদের।” একই সঙ্গে তাঁর কটাক্ষ, “স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী গেলেন আর তার পরেই কাগজে দেখছি, এনসেফ্যালাইটিস কমে যাচ্ছে! কারণ উনি সংখ্যা কমিয়ে এনসেফ্যালাইটিস নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন। নাম কেটে দিলেই হল আর কী!”
স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবশ্য দাবি, “তথ্য গোপনের যে অভিযোগ উঠছে, তা ঠিক নয়। প্রশ্নও নেই। তা গোপন করা হচ্ছেও না।” মৃতের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি কাটাতে স্বাস্থ্য দফতর ঠিক করেছে আজ, সোমবার থেকে স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথীই কেবল মাত্র মৃতের হিসেব দেবেন। স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা এ দিন বলেন, “যাতে বিভিন্ন রকম তথ্য বিভিন্ন জন না বলেন, সে জন্য স্বাস্থ্য অধিকর্তাকেই তথ্য জানানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য তাঁর কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। যা বলার তিনিই বলবেন।”
উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব এ দিন বলেন, “সমস্ত তথ্য পাওয়ার পর মুখ্যমন্ত্রী রোগ নিয়ন্ত্রণে যাবতীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন।” তিনি জানান, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শীঘ্রই আরও ২টি ভেন্টিলেটর আনা হবে। দুই জন নোডাল অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে। ২৪ ঘণ্টা প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরি খোলা রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বাড়তি টেকনিশিয়ানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ২০ জন বাড়তি নার্সিং স্টাফও আনা হচ্ছে।
গৌতমবাবুর দাবি, স্বাস্থ্য দফতরের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে মুখ্যমন্ত্রী নিজে নজর দেওয়ায় জেলা হাসপাতালগুলির পরিকাঠামো আগের চেয়ে অনেক উন্নত হয়েছে। জেলাগুলিতে যে স্বাস্থ্য পরিষেবা বর্তমানে রয়েছে, তাতেই এনসেফ্যালাইটিসের রোগীদের চিকিৎসা করা সম্ভব। মন্ত্রী জানিয়েছেন, এ সব কারণে রেফার করতে হলে নির্দিষ্ট কারণ দেখিয়ে করতে হবে। কোচবিহার, জলপাইগুড়ি এবং আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আপৎকালীন পরিস্থিতি না হলে রেফার করা যাবে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy