Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

জ্বরে আক্রান্ত এ বার পোল্যান্ডের পর্যটকও

এবার জ্বরে আক্রান্ত এক বিদেশি পর্যটককে ভর্তি করানো হল উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। জ্বর হওয়ায় মঙ্গলবার পোল্যান্ডের বাসিন্দা ২৯ বছরের ক্রিস্তোফ স্যেেক নকশালবাড়ি হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে নিয়ে যান স্থানীয় কয়েক জন বাসিন্দা। সেখান থেকে তাঁকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে রেফার করা হয়।

উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে পোল্যান্ডের পর্যটক।

উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে পোল্যান্ডের পর্যটক।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৫ ০২:৫৫
Share: Save:

এবার জ্বরে আক্রান্ত এক বিদেশি পর্যটককে ভর্তি করানো হল উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। জ্বর হওয়ায় মঙ্গলবার পোল্যান্ডের বাসিন্দা ২৯ বছরের ক্রিস্তোফ স্যেেক নকশালবাড়ি হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে নিয়ে যান স্থানীয় কয়েক জন বাসিন্দা। সেখান থেকে তাঁকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে রেফার করা হয়। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার বিকেলের পর ওই পর্যটককে সেখানে ভর্তি করিয়ে দেন পুলিশ এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের কয়েক জন।

বুধবার তাঁর বুকের এক্সরে এবং রক্ত পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ সমীর ঘোষ রায় বলেন, ‘‘দিল্লি এবং কলকাতার পোল্যান্ডের দূতাবাস থেকে ওই যুবকের ব্যাপারে জানতে ফোন এসেছিল। তাঁদের বিস্তারিত জানানো হয়েছে। তাঁরা জানিয়েছেন ওই যুবকের মা আসবেন। তাঁকে নিয়ে যাবেন। সেই পর্যন্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তাঁকে রাখতে।’’ তিনি জানান, শিলিগুড়িতে থাকা পোল্যান্ডের একটি ধর্মীয় সংস্থার প্রতিনিধিরা হাসপাতালে এসেছিলেন। তাঁরা ওই যুবককে নিয়ে যেতে চেয়েছেন। বিষয়টি পোল্যান্ড দূতাবাসকে জানানো হয়েছে। তাঁরা অনুমতি দিলে পুলিশের উপস্থিতিতে যুবককে তাদের হাতে তুলে দেওয়া যেতে পারে বলে জানানো হয়েছে।’’

এ বছর ফের উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় ছড়াচ্ছে এনসেফ্যালাইটিস। সেই সঙ্গে ডুয়ার্সে বিশেষ করে আলিপুরদুয়ারের কিছু এলাকায় ম্যালেরিয়াও দেখা দিয়েছে। গত দুই বছর এই সময় ডেঙ্গির প্রকোপও ছড়িয়েছিল শিলিগুড়ি শহরে। সব মিলিয়ে এ বছরের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে আজ, বৃহস্পতিবার শিলিগুড়ি সার্কির্ট হাউজে বৈঠক ডেকেছেন রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী। মালদহ এবং দক্ষিণ দিনাজপুর বাদ দিয়ে উত্তরবঙ্গের ৫টি জেলার মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিক এবং জেলা হাসপাতালগুলির সুপারদের বৈঠকে থাকতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে কালিম্পং, কার্শিয়াং, মালবাজার, দিনহাটা, তুফানগঞ্জ, মেখলিগঞ্জ, মাথাভাঙা, ইসলামপুর হাসপাতালের সুপারদেরও ডাকা হয়েছে।

রবীন্দ্রমঞ্চে পুরসভার তরফে জেই নিয়ে প্রশিক্ষণ শিবির।

গত জানুয়ারি মাস থেকে এ দিন পর্যন্ত উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে খিঁচুনি জ্বর নিয়ে ২৪ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। তার মধ্যে জেই আক্রান্ত ১০ জন। চলতি মাসে গত ১৫ দিনে ১১ জন মারা গিয়েছেন। তাঁর মধ্যে ৭ জন জেই। খিঁচুনি জ্বর নিয়ে মঙ্গলবার রাত থেকে এ দিন দুপুর পর্যন্ত আরও অন্তত ৪ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। শিশু বিভাগে ভর্তি রয়েছে ৫ জন। দুই জনের অবস্থা সঙ্কটজনক। পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে রাখা হয়েছে তাঁদের। সিসিইউতে রয়েছেন কয়েক জন। মহিলা মেডিসিন বিভাগের কাছে অর্থোপেডিক বিভাগের একাংশে জেই এবং এইএস রোগীদের জন্য আলাদা করে ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানে এ দিন মেডিসিন বিভাগ থেকে কয়েক জনকে স্থানান্তরিত করা হয়।

ওই ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে জেই আক্রান্ত মেখলিগঞ্জের নিজ তরফের বাসিন্দা আবু তালেবকে। তাঁর অবস্থা সঙ্কটজনক। তবে সিসিইউতে জায়গা না থাকায় ওয়ার্ডেই রাখা হয়েছে তাঁকে। সিসিইউতে জায়গা না মেলায় উদ্বিগ্ন তাঁর ভাই আব্দুল মালেক। তিনি বলেন, ‘‘সিসিইউতে জায়গা নেই। এমন হলে কী ভাবে চলবে? শুনছি এই রোগে আক্রান্ত হয়ে অনেকেই আসছেন। পর্যাপ্ত জায়গার ব্যবস্থা না থাকলে তো তা বিপজ্জনক।’’ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে সিসিইউতে ১০টি শয্যা রয়েছে। সেখানে অন্তত ৮টি ভেন্টিলেটর রয়েছে। সেখানে জেই বা এইএস ছাড়াও অন্য রোগী রয়েছেন। জেই বা এইএসের রোগী রাখতে যে বিশেষ ওয়ার্ড করা হয়েছে সেখানেও প্রয়োজনে ভেন্টিলেটরের ব্যবস্থার কথা ভাবা হয়েছে।

বুধবারই শিলিগুড়িতে পৌঁছন স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী। এসেছেন স্বাস্থ্য সচিব সঙ্ঘমিত্রা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। এ দিন বিকেলে চা বাগানগুলির স্বাস্থ্য ব্যবস্থার পরিস্থিতি নিয়ে জলপাইগুড়ির জেলাশাসক, মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক, দার্জিলিং জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক, মহকুমাশাসকের সঙ্গে বৈঠক করেন। ছিলেন টি বোর্ডের আধিকারিকেরাও। পরে ফাঁসিদেওয়ার বিডিও এবং ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিকের সঙ্গে ওই ব্লকের ৪টি পঞ্চায়েত এলাকায় কালা জ্বর নির্মূল করতে বেলে মাছি ঠেকানোর পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেন। ফাঁসিদেওয়ার ওই গ্রামগুলিতে ওই মাছি দেখা যায়। এই মাছি ঠেকাতে বাড়ির মেঝে এবং দেওয়াল বিশেষ ভাবে তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়। বিশেষ করে এই এলাকার চা বাগানগুলির শ্রমিকদের বাড়িগুলিতে এ ধরনের মাছি জন্মানোর প্রবণতা দেখা গিয়েছে। ওই মাছিদের জন্ম ঠেকাতে মেঝে এবং দেওয়ালের খানিকটা এমন ভাবে তৈরির পরিকল্পনা করা হয় যাতে ফাটল না হয়।

এলাকার মুন্নি গ্রামে একটি মডেল প্রকল্প করা হয়েছিল। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তরফে আধিকারিকরা তা ঘুরে দেখেও গিয়েছিলেন। পুরো এলাকায় ওই পরিকল্পনা রূপায়ণে অর্থ অনুমোদন হয়েছে। বিধাননগর-১, বিধাননগর-২, হেটমুড়ি সিংহিঝোরা এবং ঘোষপুকুর এলাকায় অন্তত ৫ হাজার বাড়িতে ওই কাজের পরিকল্পনা রয়েছে।

ছবি: সন্দীপ পাল ও বিশ্বরূপ বসাক।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE