স্বাস্থ্য কী ভাবে বজায় রাখতে হয়, মেদ ঝরানোর কায়দা-কানুন, কোনটা খাবেন কোনটা নয়— এ সবের পাঠ এখন জনসাধারণ জানতে পারেন সমাজমাধ্যমেই। ফিটনেস প্রশিক্ষক থেকে পুষ্টিবিদদের হাজারো টোটকা, পরামর্শে সকলেরই ধারণা— মেদ ঝরাতে, কমে যাওয়া ওজন বশে রাখতে গেলে প্রোটিন খেতেই হবে। বাদ যাক চিনি বা শর্করা। তবে প্রোটিন ছাড়া সুস্বাস্থ্য অসম্ভব।
কথাটা যে বেঠিক, তা কিন্তু নয়। মানবশরীরের অন্যতম উপাদানই হল প্রোটিন। শরীর সুস্থ রাখতে, ক্ষতিগ্রস্ত কোষ মেরামত করতে, পেশি সবল রাখতে প্রোটিন অপরিহার্য। ওজন ঝরাতেও অনেকে ‘প্রোটিন ডায়েট’ মেনে চলেন। প্রোটিনের প্রতি এত ঝোঁক দেখেই এখন কফি থেকে চকোলেট, ইয়োগার্ট, চিজ় কেক এমনকি আইসক্রিমেও প্রোটিন যোগ করছে বিভিন্ন সংস্থা। সেখানে দাবি করা হচ্ছে, খাবারে উচ্চ পর্যায়ের প্রোটিন মেশানো। ক্যালোরি, শর্করা নামমাত্র। ফলে অপরাধবোধে না ভুগেই সে সব খাওয়া চলে।
আরও পড়ুন:
ডাল, মাছ, মাংস, ডিম, পনির, চিজ়, সয়াবিনে প্রোটিনের চাহিদা মেটে। কিন্তু স্বাস্থ্য ভাল রাখতে প্রক্রিয়াজাত খাবারে যুক্ত করা বাড়তি প্রোটিন কি আদৌ দরকারি?
পুষ্টিবিদ শম্পা চক্রবর্তীর কথায়, এক জন প্রাপ্তবয়স্কের প্রতি কেজি ওজন পিছু ০.৮ গ্রাম প্রোটিনের দরকার হয়। ব্যায়াম, ওজন নিয়ে কসরত করলে প্রতি কেজি ওজন পিছু ১.৩ গ্রাম থেকে ১.৬ গ্রাম প্রোটিন খেতে পারেন। আবার এক জন দৌড়বিদের বাড়তি প্রোটিনের দরকার হতে পারে। বয়স, উচ্চতা, ওজন, কাজের ধরন অনুযায়ী এক জনের শরীরে প্রোটিনের মাত্রা নির্ধারিত হবে।
বাড়তি প্রোটিন খেলেই যে খুব উপকার হয়, তা-ও কিন্তু নয়। বরং এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। পুষ্টিবিদেরা বলছেন, শরীর ভাল রাখতে কার্বোহাইড্রেট, স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, ভিটামিন, খনিজ, ফাইবার— সমস্ত রকম খাবারই জরুরি। আর যে কোনও খাবারের মাত্রা থাকা দরকার।
খাবারে প্রোটিন
চা, কফি, আইসক্রিম, চিজ় কেক-সহ রকমারি খাবারে প্রোটিন যোগ করলেও তা কি স্বাস্থ্যকর? চিকিৎসকেরা বলেন, প্রক্রিয়াজাত খাবার যতটা কম খাওয়া যায়, ততই ভাল। যেমন প্রোটিন-দুধ। এতে প্রোটিনের মাত্রা দ্বিগুণ থাকলেও তা বিশেষ প্রক্রিয়ায় তৈরি করা হয়। দুধ থেকে জলীয় অংশ বাদ দিয়ে এতে গুঁড়ো মেশানো হয়। আবার অন্যান্য খাবারে বাড়তি প্রোটিন মেশাতে গিয়ে অন্য পুষ্টিগুণের সঙ্গেও আপস করা হয়। খাবার নিয়ে যাঁরা চর্চা করেন তাঁরা বলছেন, প্রোটিনের পুষ্টিগুণ কতটা মিলবে, তা নির্ভর করছে কোন সংস্থা কী ভাবে প্রোটিন যোগ করছে তার উপর।
তবে চিকিৎসকেরা প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে সব সময় টাটকা এবং স্বাস্থ্যকর খাবারেই জোর দেন। দই বা কেক খেয়ে প্রোটিনের চাহিদা পূরণের বদলে পুষ্টিবিদেরা বিভিন্ন রকম বাদাম, ছোলা, কাবুলি ছোলা, টোফু ইত্যাদিই খেতে বলছেন।