Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
বাড়ির বাগানেই একফালি জমিতে সুন্দর একটা লাইব্রেরি গড়ে তোলা হয়েছে। পড়ার ঘরকে ঘিরে রেখেছে সবুজ বাগান, পদ্মপুকুর, আর পাখিদের কলতান
library

Green Library: সবুজ পাঠাগার

বাড়ির বাগানেই একফালি জমিতে সুন্দর একটা লাইব্রেরি গড়ে তোলা হয়েছে। পড়ার ঘরকে ঘিরে রেখেছে সবুজ বাগান, পদ্মপুকুর, আর পাখিদের কলতান

‘হবিট’-এর সেই বাড়ি থেকে অনুপ্রাণিত

‘হবিট’-এর সেই বাড়ি থেকে অনুপ্রাণিত

নবনীতা দত্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০২১ ০৬:৫০
Share: Save:

মুর্শিদাবাদের লালবাগে প্রায় সাড়ে আট কাঠা জমির উপরে বসতবাড়ি। সবুজঘেরা সেই বাড়িতেই বড় হয়ে ওঠা তৃষিত সেনগুপ্তর। ছোটবেলা থেকেই তিনি দেখেছেন, বাড়ি থেকে দূরে বাগানের মাঝে একটা ঘর যেন নির্বাসিত। সেখানে পড়ে থাকে ভাঙা সাইকেল, সিমেন্টের বস্তা, বেলচা, গাছে জল দেওয়ার সামগ্রী। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই ঘর ভরে ওঠে নানান বর্জ্যে। এক সান্ধ্য আড্ডায় মায়ের সঙ্গে গল্পকথায় উঠে আসে তাঁর মায়ের ইচ্ছেজগৎ, ‘‘যদি একটা ঘরভর্তি বই থাকত, বেশ হত। সারা দিন ওখানে বসে শুধু বই পড়ে যেতাম।’’ মায়ের কথা কানে যেতেই মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে যায়। ঠিক করেন ওই পরিত্যক্ত ঘরই করে তুলবেন তাঁদের স্বপ্নের পাঠাগার।

তত দিনে তৃষিত ঢুকে পড়েছেন ‘হবিট’-এর জগতে। সবুজে ঢাকা সুন্দর ছোট ছোট বাড়ি, তাদের গোলাকার দরজা মনে গেঁথে যায় তাঁর। মায়ের ইচ্ছে, ‘হবিট’ সিরিজ়ের অনুপ্রেরণা আর নিজের পরিকল্পনায় বাগানের মাঝেই গড়ে তুললেন একটা লাইব্রেরি।

পুরনো ঘর থেকেই নতুন ঘর তৈরির কাজ শুরু হল। ‘‘প্রথম দিকে বেশ অসুবিধে হয়েছিল। কারণ আমাদের এখানে দরজা সাধারণত আয়তাকার হয়। গোলাকার দরজা কেউ বানায় না। আর কাঠে গোলাকার কাঠামো তৈরি করা বেশ কঠিন আর খরচসাপেক্ষও। তার উপরে স্থানীয়রা এর আগে এ রকম কাজও করেননি। কিন্তু তখন আমার মাথায় জাঁকিয়ে বসেছে ‘হবিট’। আর স্থানীয় মিস্ত্রিরাও হাল ছাড়ল না। প্রথমে লোহার পাত দিয়ে গোলাকার রিং তৈরি হল। সেই পাত বরাবর ইটের গাঁথনি করে তার মধ্যে দরজা আর জানালা বসানো হল। সকলের চেষ্টায় তৈরি হল এই ঘরটা। তখন সদ্য চাকরি পেয়েছি। হাতে টাকাপয়সা তেমন নেই, তাই আর্থিক সহায়তা জোগান বাবা।’’ বললেন তৃষিত।

বই-চিত্র

বই-চিত্র

বাগানের মাঝে এমন নিরিবিলি ঘরে বই পড়ার আরাম আর কোথাও নেই। ফলে একে একে মূল বাড়ি থেকে বই এনে বোঝাই করে ফেললেন এই ঘরটি, তৈরি হল গ্রন্থাগার। লাইব্রেরির ভিতরের গঠনেও ছিমছাম ভাব বজায় রাখার চেষ্টা করেছেন তিনি। তৃষিতের কথায়, ‘‘ইচ্ছে ছিল, পাথরের আনইভন ভাবটা দেওয়ালে রাখব। একটা অসম্পূর্ণ গড়ন থাকবে। পাহাড়ে যেমন পাথরের ঘর-বাড়ি থাকে, ঠিক তেমনটা করার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু তার জন্য দরকার ছিল নানা আকারের পাথরের। এখানে তার জোগান পেলাম না। অবশেষে সে রকম ফিনিশ আসে, এমন টাইলসের শরণাপন্ন হলাম।’’ ঘরের একটা দেওয়ালে যেমন পাথরের গড়নের টাইলস, তেমন অন্য দেওয়াল ঢাকা পড়েছে বইয়ের সম্ভারে। ঘরের দেওয়ালের সঙ্গে মানিয়ে লাইব্রেরির মেঝে ঢাকা পড়েছে আর্দি রঙের কার্পেটে। বইয়ের তাকে হয়েছে পৃথিবীর ক্লাসিক বই থেকে শুরু করে মার্গসঙ্গীতের উপরেও নানা বই। গল্প, উপন্যাসের পাশাপাশি নানা বিষয়ে তাঁর আগ্রহ। তাই বইয়ের ব্যাপ্তিও কম নয়।

তবে এ ঘরে শুধু বই-ই পড়েন না তিনি, তার সঙ্গে বাঁশিও বাজান। সংগ্রহে রয়েছে নানা রকমের বাঁশি। ওকারিনা হুইসল ফ্লুটও রয়েছে তার মধ্যে। যেহেতু মূল বাড়ির থেকে লাইব্রেরিটা আলাদা, তাই এখানে তাঁকে কেউ বিরক্ত করার নেই। অখণ্ড মনোযোগে বই পড়া বা বাঁশি বাজানোও চলে অবসরে। পড়ার মাঝেই মন শান্ত রাখে সবুজ-আবহ।

সবুজ অবসরে জুটে যায় বিড়ালও

সবুজ অবসরে জুটে যায় বিড়ালও

প্যাটার্ন, কংক্রিট, স্ট্রাকচারাল জীবনের প্রতি খুব একটা আকর্ষণ নেই তৃষিতের। তার চেয়ে গাছপালা, ফুল-পাখির সঙ্গেই সখ্য তাঁর। তাই পাঠাগারকে ঘিরে ফেলেছেন সবুজ চাদরে। এক দিকে লাইব্রেরির ছাদে বিছিয়ে দিয়েছেন স্কাই ভাইন। হালকা ভায়োলেট ফুল আলো করে রাখে লাইব্রেরির দরজা। কখনও স্কাই ভাইন বদলে দেন ফ্লেম ভাইনের কমলা ফুলে। অন্য দিকে ঘরের জানালা খুললেই হাতছানি দেয় পদ্মপুকুর। ছোট চৌবাচ্চার মধ্যেই শাপলা ফুটে থাকে, পাশে পদ্ম। সেই জলে আবার খেলে বেড়ায় ছোট-ছোট মাছ। পুকুরপাড়ে মাছ ধরার জন্য ওঁত পেতে বসে থাকে পাড়াতুতো এক বিড়াল! বসে-বসে ব্যর্থ মনোরথে ধীর পায়ে বাগানে ঘুরে ফিরে যায় সে।

বাগানে আছে একটা বিশাল দেবকাঞ্চন ফুলের গাছ। সেই ফুলের বাহারে বছরের তিন-চার মাস গোলাপি বর্ণ ধারণ করে বাগান। গাছগাছালি ভরা লাইব্রেরিতে পাখিদের আনাগোনাও কম নয়। তাই কর্মসূত্রে বর্ধমানের কাটোয়ায় পোস্টিং হলেও সপ্তাহান্তে মুর্শিদাবাদে ছুটে যান তৃষিত। বাগান পরিচর্যায় বেলা গড়িয়ে যায়। আর সন্ধে নামার আগেই ঢুকে পড়েন লাইব্রেরিতে, ডুবে যান বইয়ের জগতে। বাগানঘেরা এই পাঠাগার যেন এক ‘সব পেয়েছি’র জগৎ। সেখানে ‘কত কী জানার, কত কী শেখার’, রয়েছে কত কী বাকি!

ছবি: তৃষিত সেনগুপ্ত

অন্য বিষয়গুলি:

library Garden
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy