Advertisement
E-Paper

বৈশাখ বরণে চিনা খাবার! বাঙালির প্রিয় আম, কাসুন্দি, গন্ধরাজে ডুব দিল নুডল্‌স, ডিমসাম

চিনা খাবারে বাংলার স্বাদ! সে কি করে সম্ভব? সয়া সসের সঙ্গে কী ভাবে মিশবে বাংলার সর্ষেবাটা কিংবা ডিমসামে মিশবে লেবু দিয়ে মাখা ডাল-ভাত-আলুপোস্ত! নিদেন পক্ষে ঘি জবজবে গোবিন্দভোগ চালের পোলাও আর ফ্রায়েড রাইস চিলি চিকেন!

হিমসাগর আর গন্ধরাজ মিলেমিশে একাকার!

হিমসাগর আর গন্ধরাজ মিলেমিশে একাকার! — নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০২৫ ২০:৪৮
Share
Save

পয়লা বৈশাখের খাওয়াদাওয়া মানেই কি শুক্তো, ঘণ্ট, পাতুরি?

এ প্রশ্নের পাল্টা যুক্তি হতে পারে, কেন নয়? সারা বছর তো বাঙালি পাঁচ মুলুকের খাবার দাবারে মজেই থাকে। অন্তত বাংলা নববর্ষে কিছু বাঙালিয়ানা থাকুক পাতে। সে কথা ভেবেই তো বাংলার রেস্তরাঁয় পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে বাঙালি খাবারের সম্ভার। বাংলার রান্নাঘরের পুরনো স্মৃতি নতুন করে উসকে দেওয়ার তাগিদ। বাঙালিকে ‘বাঙালিয়ানা’ দিয়ে স্মৃতিকাতর করে তোলা। এত দিন সেই চেষ্টা মূলত বাঙালি রান্না দিয়েই করা হত। তবে এ বছর বৈশাখ বরণে শামিল হয়েছে বাঙালির প্রিয় চিনা খাবারও। পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে ক্যান্টনিজ় রেস্তরাঁ ইয়াচা এনেছে বিশেষ মেনু, যার পরতে পরতে লুকিয়ে আছে বাংলার চেনা স্বাদ-গন্ধ।

ইয়াচার নানা রঙের ডিমসাম।

ইয়াচার নানা রঙের ডিমসাম। — নিজস্ব চিত্র।

চিনা খাবারে বাংলার স্বাদ! সে কি করে সম্ভব? সয়া সসের সঙ্গে কী ভাবে মিশবে বাংলার সর্ষেবাটা কিংবা ডিমসামে মিশবে লেবু দিয়ে মাখা ডাল-ভাত-আলুপোস্ত? নিদেন পক্ষে ঘি জবজবে গোবিন্দভোগ চালের পোলাও আর ফ্রায়েড রাইস আর চিলি চিকেন? না, সরাসরি মিশবে না, কিন্তু না মিশেও মনে করিয়ে দেবে। ইয়াচার রন্ধনশিল্পী শ্রীকৃষ্ণ সে কথা মাথায় রেখেই তৈরি করেছেন পয়লা বৈশাখের ক্যান্টনিজ় মেনু।

স্বচ্ছ পুঁটুলি থেকে দেখা যাচ্ছে গোলাপি রঙের বাগদা চিংড়ির পুর।

স্বচ্ছ পুঁটুলি থেকে দেখা যাচ্ছে গোলাপি রঙের বাগদা চিংড়ির পুর। — নিজস্ব চিত্র।

ক্যান্টনিজ় হল চিনের একটি প্রাদেশিক রন্ধনশৈলী। ভারতে যেমন বিভিন্ন প্রদেশের খাবার বিভিন্ন রকম— বাঙালি, মরাঠি, দক্ষিণ ভারতীয়, রাজস্থানী, অসমিয়া। চিনেও ঠিক তেমনই। সেখানেও আছে সেজ়ুয়ান, ক্যান্টনিজ়, হুনান, শানডং ইত্যাদি নানা ধরনের প্রাদেশিক ধাঁচের খাবার দাবার। তার মধ্যেই ক্যান্টোনিজ় খাবার বিখ্যাত, তার স্বাদের তরতাজা ভাবের জন্য। ক্যান্টোনিজ় খাবারে পাশাপাশি দু’-তিন রকমের স্বাদ দিব্যি সহাবস্থান করতে পারে। আর সেই রন্ধনশৈলীকে কাজে লাগিয়েই বাংলা আর চিনকে মিলিয়ে দিয়েছে ইয়াচা। উল্লেখ্য, ইউরোপীয়দের জন্য একমাত্র ক্যান্টন বন্দরটিই উন্মুক্ত রাখা হয়েছিল চিনা রাজতন্ত্রের আমলে। ক্যান্টনিজ় খাবারে তাই মিশেছে ইংরেজ, ফরাসি রান্নার স্বাদও।

ঘি আর লবঙ্গের গন্ধ দেওয়া গোবিন্দভোগ চালের ভাতের সঙ্গে সয়া সসে ভাজা ভাত।

ঘি আর লবঙ্গের গন্ধ দেওয়া গোবিন্দভোগ চালের ভাতের সঙ্গে সয়া সসে ভাজা ভাত। — নিজস্ব চিত্র।

রয়েছে ঘি আর লবঙ্গের গন্ধ দেওয়া গোবিন্দভোগ চালের ভাতের সঙ্গে সয়া সসে ভাজা ভাত। দু’য়ে মিলেমিশে তৈরি হয়েছে ‘টুইন ট্রেজ়ার ফ্রায়েড রাইস’। আবার বাঙালির প্রিয় চিংড়িকে চিনের হুপাক রন্ধনশৈলীতে রাঁধা হলেও তাতে রয়েছে গন্ধরাজের স্বাদ এবং গন্ধ। ‘মেছো’ বাঙালির তৃপ্তির কথা ভেবে রাখা হয়েছে ভেটকি মাছ। সেই মাছ ভাপানো হচ্ছে লেমনগ্রাস সসে। তাতেও প্রাচীন বাংলায় প্রচলিত ‘গন্ধবেণা’ (লেমনগ্রাসের প্রাচীন বাংলা প্রতিশব্দ, রন্ধনশিল্পীরাই জানালেন)-র স্বাদ পাবেন বঙ্গজরা। রয়েছে গন্ধরাজ প্রন ডাম্পলিংও। আধা স্বচ্ছ ডিমসামের পুঁটুলিতে অস্পষ্ট ভাবে দেখা যাবে বাংলার প্রিয় বাগদা চিংড়ি।

কড়া এবং নরম পানীয়!

কড়া এবং নরম পানীয়! —নিজস্ব চিত্র।

আছে পানীয়ও। নরম এবং ‘কড়া’। ককটেলে কোথাও জিনের সঙ্গে মিশেছে রোদে শুকনো গন্ধরাজ আর আনারস, কোথাও টাকিলার সঙ্গে মিশেছে কাঁচা আম আর কাসুন্দি। পানপাতার সঙ্গে মেলানো হয়েছে ভদকা, হুইস্কিতে মিশেছে গ্রীষ্মের প্রিয় ফল লিচু! অ্যালকোহল না পোষালে অবশ্য নরম পানীয়তেও মিলবে এমন অদ্ভুত ফিউশন। একটির নাম বেঙ্গল ব্রিজ়। তার কথা না বললেই নয়। কাঁচা আম আর কাসুন্দির সঙ্গে ক্র্যানবেরির রস মিশিয়ে তৈরি সেই পানীয় প্রথম চুমুকেই মনে হবে মুখের ভিতর স্বাদের বিস্ফোরণ হচ্ছে।

শেষ পাতে গোল্ডেন সানসাইন গ্যাটো।

শেষ পাতে গোল্ডেন সানসাইন গ্যাটো। —নিজস্ব চিত্র।

শেষ পাতে মিষ্টি। বাঙালির মিষ্টির রকমের শেষ নেই। ক্যান্টোনিজ় মেনুতে অবশ্য একটিই মিষ্টি রেখেছে ইয়াচা। নাম গোল্ডেন সানসাইন গ্যাটো। তবে একটিই ভরিয়ে দেবে মন। এই মিষ্টির দু’টি ভাগ। এক দিকে হিমসাগর আমের মতো দেখতে আইসক্রিম। চামচে করে কেটে মুখে তুললেও আমের সেই চেনা স্বাদ পাবেন। অন্য দিকে গন্ধরাজ মুজ় তার ভিতরে সাদা চকলেটের বলের ভিতরে আমের জেলি। উপরে আমের গ্লেজ়ে সাজানো কয়েকটি পুদিনা পাতা। সেই সব এক সঙ্গে যখন মুখে পড়ে, তখন চোখ আপনা হতেই বুজে আসে।

কোয়েস্ট মলের ছ’তলায় ইয়াচার রেস্তরাঁ। একটি দেওয়াল পুরোপুরি কাচের। সেখান থেকে একটু দূরে চোখ রাখলে দেখা যায় হাওড়া ব্রিজের একাংশও। শহরের একটা দিকের প্যান ১৮০ ডিগ্রি ভিউ দেখতে দেখতে এ ভাবেও উদ্‌যাপন করতে পারেন বাংলার নববর্ষ। ইয়াচার বৈশাখী মেনু চলবে এপ্রিল মাসের শেষ দিন পর্যন্ত।

Yauatcha Poila Baishakh

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}