সাইকা নিজেও অত্যন্ত আত্মপ্রত্যয়ী। ছবি: সংগৃহীত।
কোচ শিবসাগর সিংহ মনে করেন, তাঁর ছাত্রী লম্বা রেসের ঘোড়া। পরিশ্রম আর সঠিক প্রস্তুতি নিলে সকলকে ছাপিয়ে যাবেন। ছাত্রী নিজেও অত্যন্ত আত্মপ্রত্যয়ী। অস্থির, চঞ্চল মেয়েটাই বাইশ গজে বল হাতে ক্ষিপ্র হয়ে ওঠেন। প্রথম বছরের ‘উইমেন্স প্রিমিয়ার লিগে’ জয়ী হয়েছে মুম্বই। সোমবার রাতে কলকাতা ফিরেছেন মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের অন্যতম বোলার বাংলার মেয়ে সাইকা ইশাক। ফিরেই প্রথম কথা বললেন আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে।
প্রশ্ন: কেমন আছেন?
সাইকা: দারুণ! অনেক দিন পর বাড়ি ফিরলাম। অন্য রকম একটা অনুভূতি হচ্ছে।
প্রশ্ন: রবিবার ফাইনাল জেতার পর থেকে জীবন কতটা বদলে গিয়েছে?
সাইকা: অনেকটা। অদ্ভুত একটা ভাল লাগা কাজ করছে। আলাদা একটা পরিচিতি তৈরি হয়েছে। সকলেই ফোন করে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। এই জয় আমার কাছে জীবনের অনেক বড় একটা প্রাপ্তি। এর পরে যত সাফল্যই আসুক, ফাইনাল জেতার পর সেই অনুভূতি মনে থেকে যাবে আজীবন।
প্রশ্ন: পরিবার কতটা খুশি?
সাইকা: প্রচণ্ড। আম্মি, আমার বড় দিদি ওরা খুব খুশি হয়েছে। শুধু তাই নয়, পাড়ার লোকজনেরাও আমাকে নিয়ে একেবারে প্রায় উৎসব শুরু করে দিয়েছে। আমার জন্য সকলকে এ ভাবে খুশি হতে দেখে ভাল খেলার খিদেটা আরও বেড়ে যাচ্ছে।
প্রশ্ন: জীবনে প্রথম বড় কোনও ম্যাচ খেললেন। গোটা আইপিএল মরসুমে আপনার বোলিং প্রশংসিত হয়েছে বেশ কয়েক বার। ফাইনালের দিন খেলতে নামার আগে মাথায় কী চলছিল?
সাইকা: যে ভাবেই হোক, জিততে হবে। আর কিচ্ছু মাথায় ছিল না সেই সময়। মাঠে গিয়ে আমার এত দিনের পরিশ্রম উজাড় করে দিতে হবে, জিতে ফিরতে হবে। মনে মনে এ সবই জপছিলাম।
প্রশ্ন: ব্যক্তিগত কোনও প্রস্তুতি ছিল?
সাইকা: ক্রিকেটে তো ব্যক্তিগত প্রস্তুতি বলে কিছু হয় না। সকলে ভাল খেললে তবেই জয় আসে। তবে হ্যাঁ, খেলতে নামার আগে আমার কোচ শিবুস্যরকে ফোন করেছিলাম। উনি আমায় বলেছিলেন, তুই সেরা। তুই সবচেয়ে ভাল করবি। টেনশন করিস না। শুধু মন দিয়ে খেলে যা। তার পর আমার সব ভয় কেটে যায়।
প্রশ্ন: ২০১৮ সালে ক্রিকেটার মিঠু মুখোপাধ্যায়ের সূত্রে আপনার বর্তমান কোচের সঙ্গে আলাপ। তার পর হঠাৎই যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। ২০২১ সালে আবার তাঁর কাছে যান। মাঝের ৩ বছর কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলেন?
সাইকা: কোথাও হারিয়ে যাইনি। আমার চোট ছিল। সেটা সারতে একটু সময় লাগছিল। তবে খেলা থেকে একেবারে দূরে ছিলাম না। নিজে প্র্যাকটিস করতাম। চোট পুরোপুরি সেরে যাওয়ার পর প্রথম শিবুস্যরকেই যোগাযোগ করেছিলাম।
প্রশ্ন: ভবিষ্যতে ক্রিকেট খেলতে চান, এটা প্রথম কবে বুঝতে পেরেছিলেন?
সাইকা: আমি ছোট থেকেই পাড়ার ছেলেদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলতাম। তবে আমি পেশাদার ক্রিকেটার হতে পারি, এটা প্রথম আমাকে বুঝিয়ে ছিলেন আমার পাপা। পাপার স্বপ্ন ছিল, আমি ক্রিকেট খেলি। তার পর আমায় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে ভর্তি করিয়ে দেন। সেই শুরু। পাপা চাইতেন আমি ইন্ডিয়া টিমে খেলি। পাপা আজ নেই। কিন্তু তাঁর সব স্বপ্নের বীজ আমার মধ্যে বপন করে দিয়ে গিয়েছেন।
প্রশ্ন: মুম্বই ইন্ডিয়ান্স যে আপনাকে ১০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে কিনেছে, সেটা প্রথম শুনে কী মনে হয়েছিল?
সাইকা: ওটা ঠিক ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। আইপিএল নিলামের সময় আমি বাড়িতে ছিলাম না। ফলে আমি জানতাম না কী হচ্ছে। হঠাৎই আমার কোচ ফোন করে আমাকে জানালেন। বাড়ি থেকেও ফোন করে জানিয়েছিল।
প্রশ্ন: ১০ লক্ষ টাকা দিয়ে কী করবেন ভেবেছেন?
সাইকা: আমি কিছু করব না। আম্মিকে দিয়ে দিয়েছি। আমার যা দরকার, তা তো আম্মির কাছে চাইলেই পেয়ে যাই। ফলে টাকা নিয়ে আমার সত্যিই কিছু করার নেই।
প্রশ্ন: খেলোয়াড় মানেই তাঁকে ফিট হতে হবে। তার উপর আপনি বোলার। আপনি কেমন ফিটনেস রুটিন মেনে চলেন?
সাইকা: কোচ যা বলেন, সেটাই করি। তবে সম্প্রতি ‘নিউট্রিশন’-এর সঙ্গে আমার একটা চুক্তি হয়েছে। গত এক মাস ধরে ওরাই আমার ডায়েটের বিষয়টি দেখছে। এমনিতে অন্য সময় আমি কার্বোহাইড্রেট কম খেতাম। তুলনায় প্রোটিনটা একটু বেশি খেতাম। চেষ্টা করি, বাড়ির খাবার খাওয়ার। সেই সঙ্গে নিয়ম করে দৌড়নো, ব্যায়াম তো আছেই।
প্রশ্ন: বাইরের খাবার কি একেবারেই বন্ধ?
সাইকা: না। মাঝেমাঝে খাই। বিরিয়ানি খেতে আমি অসম্ভব ভালবাসি। খাব না মনে করেও খেয়ে ফেলি অনেক সময়। বাড়ি ফিরে দিদিকে বলেছি বিরিয়ানি বানিয়ে খাওয়াতে। (হাসি)........।
প্রশ্ন: খেলা ছাড়া আর কী করতে সবচেয়ে ভাল লাগে?
সাইকা: বাইক চালাতে। মাঝেমাঝেই একা একা বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়ি। একা ঘুরতে আমার ভাল লাগে। বাইক চালাতেও দারুণ লাগে।
প্রশ্ন: আপনার কোচের মতে, আপনি ভীষণ চঞ্চল এবং অস্থির। সত্যি?
সাইকা: হ্যাঁ। আমি খুবই অস্থির। শান্ত হতে পারি না। স্যর এর জন্য আমাকে বকাও দেন। আমাকে আরও স্থির হতে হবে। আমি জানি সেটা। তবে চেষ্টা করলে আমি পারব।
প্রশ্ন: ভারতীয় টিমের কার খেলা সবচেয়ে বেশি ভাল লাগে?
সাইকা: রবীন্দ্র জাডেজা। ওঁর বোলিং আমার ভাল লাগে। আমি শিখি ওঁর থেকে।
প্রশ্ন: রবীন্দ্র জাডেজার সঙ্গে দেখা হলে কী পরামর্শ চাইবেন?
সাইকা: না, সেটা তো এখন আমি বলব না। যদি কখনও দেখা হয় তা হলে সেটা রবীন্দ্র জাদেজাকেই বলব। আগে থেকে বলে দিলে কী করে হবে। (হাসি...)
প্রশ্ন: ভবিষ্যৎ নিয়ে কী পরিকল্পনা?
সাইকা: ভারতীয় দলে খেলতে চাই। সবে তো শুরু হয়েছে। আরও পরিশ্রম করতে চাই। প্রস্তুতি নেব। তার পর তো বাকিটা সময় বলবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy