Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Titas Sadhu

ভবিষ্যতে ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট টিমের ক্যাপ্টেন হতে চাই: তিতাস সাধু

মেয়েদের অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপে ম্যাচের সেরা হয়ে সদ্য নিজের বাড়ি ফিরেছেন তিতাস সাধু। সাফল্যের ব্যক্তিগত প্রস্তুতি থেকে পছন্দের খাবার— আনন্দবাজার অনলাইনের মুখোমুখি।

Image of Under19 World Cup Winner Titas Sadhu.

খোলামেলা আড্ডায় ধরা দিলেন বঙ্গতনয়া তিতাস সাধু। ছবি: সংগৃহীত।

রিচা রায়
শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১১:৪৪
Share: Save:

একমাথা ঝাঁকড়া চুল। চোখে-মুখে আত্মবিশ্বাসের ছাপ। জীবনের প্রথম বিশ্বকাপ ফাইনালে ম্যাচ সেরার খেতাব। চুঁচুড়ার বাসিন্দা এই জোরে বোলার সদ্য ইতিহাস গড়েছেন পোচেস্ট্রুমে। চার ওভারে ছয় রান দিয়ে তুলে নিয়েছিলেন দুই উইকেট। নিজের ফিটনেস রুটিন থেকে রোহিত শর্মার দেওয়া পরামর্শ— আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে খোলামেলা আড্ডায় ধরা দিলেন বঙ্গতনয়া তিতাস সাধু।

প্রশ্ন: আপনাকে শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন। কেমন আছেন?

তিতাস: অনেক ধন্যবাদ। বেশ ভাল আছি।

প্রশ্ন: ২৯ জানুয়ারি, পোচেস্ট্রুমে ম্যাচ শেষ হওয়ার পর থেকে জীবন কতটা বদলেছে?

তিতাস: অনেকটাই। প্রচুর মানুষের ভালবাসা পাচ্ছি। সেই সঙ্গে আমাদের নিয়ে হইচই, উত্তেজনা দেখে মন্দ লাগছে না। বিভিন্ন জায়গা থেকে সম্বর্ধনা দিচ্ছে। এই মুহূর্তে জীবন সম্পূর্ণ অন্য খাতে বইছে বলা চলে। তবে আমার বাবা, মা, দিদা, আমার কোচ— আমার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ মানুষগুলি আমাকে আগে যে ভাবে সাপোর্ট করতেন, এখনও একই ভাবে পাশে রয়েছেন। সেখানে কোনও বদল আসেনি।

প্রশ্ন: প্রথম বিশ্বকাপেই জয় ছিনিয়ে এনেছেনম্যাচের সেরাও হয়েছেন। খেলতে নামার আগে মাথায় কী চলছিল?

তিতাস: রবিবার, ফাইনালের দিন আমরা ঠিক করে নিয়েছিলাম যে এই ম্যাচটা আমাদের জিততে হবে। যে ভাবেই হোক। ম্যাচ চলাকালীনও সেটাই মনে হচ্ছিল। আমার মনে হয় সেই খিদেটা ছিল বলেই হয়তো জয় এসেছে। আমিও নিজের ১০০ শতাংশ দিয়ে খেলেছিলাম। ‘প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচ’ হতে পেরেছি, এটা আমার কাছে অনেক বড় প্রাপ্তি।

Image of Under19 World Cup Winner Titas Sadhu.

কঠোর ফিটনেস রুটিন মেনে চলেন তিতাস। ছবি: সংগৃহীত।

প্রশ্ন: নিজে থেকে কোনও বিশেষ প্রস্তুতি নিয়েছিলেন?

তিতাস: ক্রিকেট আসলে পুরোটাই ‘টিম গেম’। সবাই জান লড়িয়ে খেললে তবেই জয় আসে। তবে আমি সব সময় ম্যাচের আগের দিন কিংবা ম্যাচ শুরু হওয়ার আগে দু’ওভার মতো শর্ট বল করি। বল করার সময় দেখে নিই যে ঠিক কোথা থেকে বল করলে প্রতিপক্ষকে মাঠের বাইরে পাঠানো যাবে।

প্রশ্ন: ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, পাইলট নয়— ক্রিকেটার হতে চান। এটা কবে বুঝতে পারলেন?

তিতাস: ছোটবেলায় খেলাধুলোর প্রতি সকলেরই একটা ঝোঁক থাকে। আমারও ছিল। তা ছাড়া আমার বাবা একজন অ্যাথলিট। কাকা-কাকিমাও খেলাধুলোর সঙ্গে যুক্ত। ফলে ছোট থেকেই খেলার পরিবেশে বড় হয়েছি। প্রথমে আমি দৌড়তাম। তার পর কিছু দিন সাঁতার কাটলাম। কিন্তু ক্রিকেটের প্রতি অন্য রকম ভালবাসা জন্মে গেল। বাবাও দেখলেন বলটা আমি ভালই করছি। তার পর ক্রিকেটের অনুশীলন শুরু করলাম। তখন থেকেই ভাবি, ক্রিকেট নিয়েই ভবিষ্যতে এগোনো যেতে পারে।

Image of Under19 World Cup Winner Titas Sadhu.

সতীর্থদের সঙ্গেও সুসম্পর্ক তিতাসের। ছবি: সংগৃহীত।

প্রশ্ন: খেলোয়াড় মানেই তাঁকে ফিট হতে হবে। তার উপর আপনি জোরে বোলার। আপনি কী ফিটনেস রুটিন মেনে চলেন?

তিতাস: বাবার বানিয়ে দেওয়া ফিটনেস রুটিন মেনেই আমি চলি। প্রত্যেক দিন আলাদা আলাদা রুটিন থাকে। তিন দিন স্ট্রেংথ থাকলে, দু’দিন এইচআইটি। আর প্রতি দিনের রুটিন বলতে সকালে উঠে ট্রেনিংয়ে যাই। দুপুরে জিম করি। সেখান থেকে ফিরে বিকালে স্কিল্‌সের প্র্যাকটিস থাকে।

প্রশ্ন: আর খাওয়াদাওয়া?

তিতাস: সব সময় কার্বোহাইড্রেট কম খাওয়ার চেষ্টা করি। তুলনায় প্রোটিনযুক্ত খাবার বেশি করে খাই। মোট কথা ভিতর থেকে চাঙ্গা রাখবে এমন খাবারদাবারই খাওয়া হয়।

প্রশ্ন: তা হলে তো বাইরের খাবার একেবারেই বন্ধ?

তিতাস: (হাসি) না না, তা একেবারেই নয়। আমি চাইনিজ খেতে অসম্ভব ভালবাসি। মাঝেমাঝে খেয়ে নিই। তবে তার পরের দিন একটু বেশি ক্ষণ জিম করে নিই।

প্রশ্ন: আপনি এই মুহূর্তে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী। বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করছেন। দশম শ্রেণির বোর্ডের পরীক্ষায় আপনি দারুণ ফল করেছিলেন। পড়াশোনা আর ক্রিকেট— দুটো একসঙ্গে সামলান কী করে?

তিতাস: আসলে খেলার সঙ্গে পড়াশোনার কোনও বিরোধ নেই। বরং একটা সুসম্পর্ক রয়েছে। আমি যখন খেলা শুরু করি, অদ্ভুত ভাবে পরীক্ষার রেজাল্টও ভাল হতে থাকে। বোর্ডের পরীক্ষার সময় পেশাদার ক্রিকেট খেলতাম না ঠিকই। তবে রোজ প্র্যাকটিসে যেতাম। ৯০ শতাংশ নম্বরও পেয়েছিলাম। সেই সঙ্গে ক্রিকেটের খুঁটিনাটিও তাড়াতাড়ি ধরতে পারতাম। সারা ক্ষণ খেলাধুলো করা মানেই যে পড়াশোনা লাটে উঠবে, এ ধারণা ভুল।

প্রশ্ন: অনেকেই আপনাকে ঝুলন গোস্বামীর সঙ্গে তুলনা করছেন। এটা শোনার পর আপনার নিজের মনে কী চলছে?

তিতাস: প্রথমত এটা আমার কাছে একটা গর্ব করার মতো বিষয়। তবে ওই জায়গায় পৌঁছতে অনেকটা রাস্তা পেরোতে হবে। আমি সবে শুরু করেছি। প্রচুর পরিশ্রম করতে হবে। তবে আপ্রাণ চেষ্টা করব। জেতার পর ঝুলনদি নিজে আমাকে হোয়াটসঅ্যাপ করে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন। আগে ওঁর সঙ্গে বেশ কয়েক বার দেখাও হয়েছিল। ১৪-১৫ বছর বয়সে আমার জীবনের প্রথম প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচের অ্যাওয়ার্ড উনি তুলে দিয়েছিলেন। তখন বোলিংয়ের কিছু পরামর্শ দিয়েছিলেন। সব কিছু মাথায় রেখে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করব।

প্রশ্ন: বোঝাই যাচ্ছে, ঝুলন গোস্বামী আপনার অন্যতম আইকনতবে ভারতীয় ক্রিকেট টিমের কার খেলা সবচেয়ে ভাল লাগে?

তিতাস: হার্দিক পাণ্ড্যের খেলা আমার ভাল লাগে। তাঁর কামব্যাক, বোলিং-এর খুঁটিনাটি আমাকে অনুপ্রাণিত করে। আমি মাঝেমাঝেই ওঁর পুরনো খেলা মোবাইলে চালিয়ে দেখি।

প্রশ্ন: হার্দিকের সঙ্গে কখনও দেখা হলে কী টিপস চাইবেন?

তিতাস: ‘এনসিএ’তে আমার দেখা হয়েছে ওঁর সঙ্গে। এ ছা়ড়াও রোহিত শর্মা, বুমরার সঙ্গেও দেখা হয়েছে। দেখা হলে প্রচুর কথা তো হয়ই। তবে প্রত্যেকেই বলেছেন, ভালবেসে ক্রিকেট খেলতে। মন দিয়ে খেললে দক্ষতা এমনিতেই চলে আসবে।

প্রশ্ন: রিচা ঘোষ এবং হৃষিতা বসু— এই দু’জন সতীর্থের সঙ্গে কেমন সম্পর্ক?

তিতাস: ভাল। আমরা তিন জনই বাংলার মেয়ে। ফলে একটা মিল তো রয়েছেই। তা ছাড়া রিচাকে আমি অনেক আগে থেকে চিনি। ও ইন্ডিয়ার জন্য খেলার আগে থেকেই আমার সঙ্গে পরিচয়। আর সতীর্থ হিসাবে হৃষিতাও খুব ভাল।

প্রশ্ন: সাহস, আত্মবিশ্বাস, বিনয়— আপনি কি বিশ্বাস করেন এক জন ক্রিকেটারের জীবনে এই তিনটি থাকা বাধ্যতামূলক?

তিতাস: অবশ্যই। তবে আত্মবিশ্বাস আর সাহস তৈরি হয় অভিজ্ঞতার মাধ্যমে। যত বেশি ম্যাচ খেলব, নিজের প্রতি বিশ্বাসও ততটাই বাড়তে থাকবে। সেই সঙ্গে সাহস। আর ক্রিকেট বলে নয়, যে কোনও কাজেই সফল হতে গেলে আগে ভাল মানুষ হওয়া জরুরি। সাফল্য নিজের পথ ধরেই আসবে।

প্রশ্ন: খেলা ছাড়া আর কী করতে ভাল লাগে?

তিতাস: নেটফ্লিক্সে সিনেমা দেখতে। (লাজুক গলায়) আয়ুষ্মান খুরানা আর সিদ্ধার্থ মলহোত্রকে আমার ভাল লাগে। ওঁদের সিনেমা দেখি। বই পড়ি। ভাল বাংলা পড়তে পারি না। তাই ইংরাজি বই-ই ভরসা।

প্রশ্ন: জীবনের লক্ষ্য কী?

তিতাস: আপাতত ২০২৫ সালে বিশ্বকাপ জেতা। আর ভবিষ্যতের কথা বলতে গেলে আমি ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট টিমের একজন কোর সদস্য হতে চাই। আর যদি ক্যাপ্টেন হতে পারি, তা হলে তো জীবন সার্থক।

অন্য বিষয়গুলি:

Titas Sadhu Cricket India Under 19 World Cup
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy