স্ট্রাগলকে জীবনের অঙ্গ বলে মনে করেন তিনি। ছবি: সংগৃহীত।
দেখতে দেখতে ২০ বছর হয়ে গেল ইন্ডাস্ট্রিতে। এই দু’দশকে তাঁর বেশির ভাগ অভিজ্ঞতাই ভাল। তবে ওঠানামাও দেখেছেন প্রচুর। জীবনে লড়াই থাকবেই, তাই সে সব নিয়ে ভাবতে চান না। রবিবার সন্ধ্যায় হার্ডরক ক্যাফেতে একক অনুষ্ঠানের আগে ট্রোলের শিকার হওয়া থেকে প্রেম— সব কিছু নিয়ে আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে খোলাখুলি আড্ডায় সঙ্গীতশিল্পী উজ্জয়িনী মুখোপাধ্যায়।
প্রশ্ন: কেমন আছেন?
উজ্জয়িনী: দারুণ আছি। আমি সব সময় ভাল থাকার চেষ্টা করি। আর চেষ্টাটাই আসল।
প্রশ্ন: বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে ২০ বছর কাটিয়ে ফেললেন। কেমন কাটল এই দু’দশক?
উজ্জয়িনী: খারাপ কাটেনি। যে দিন থেকে গানকে কেরিয়ার হিসাবে নেব বলে ভেবেছি, আমি জানতাম ভাঙাগড়া থাকবেই। তাই খুব একটা অসুবিধা হয়নি।
প্রশ্ন: শুরুটা হয়েছিল রিয়্যালিটি শো দিয়ে। বাংলা এবং হিন্দি দুই ভাষাতেই প্রতিযোগী ছিলেন। এক জন শিল্পীর উত্থানের ক্ষেত্রে এই ধরনের প্রতিযোগিতার গুরুত্ব কতটা?
উজ্জয়িনী: আমি যে সময়ে শুরু করেছি, তখন রিয়্যালিটি শো স্বচ্ছ হত। টান টান লড়াই থাকত। ইন্ডাস্ট্রিতে আমার তো পথ দেখানোর মতো কেউ ছিলেন না। আমাদের মতো শিল্পীর ক্ষেত্রে রিয়্যালিটি শোয়ের মঞ্চ খুবই গুরত্বপূর্ণ। আমার জন্যে তো ভীষণ দামি, ভীষণ দরকারি একটি প্ল্যাটফর্ম ছিল। তবে ওটাকে প্ল্যাটফর্ম হিসাবেই ভাবতে হবে। প্রাপ্তি বলে ভেবে নিলে কিন্তু মুশকিল। আমিও তেমনটাই ভেবেছি। তবে এখান থেকে পরিচিতি পেয়েছি অনেক।
প্রশ্ন: ইন্ডাস্ট্রিতে সেই অর্থে আপনার কোনও ‘গডফাদার’ নেই। নিজের চেষ্টায় জমি তৈরি করেছেন। লড়াই কতটা কঠিন ছিল?
উজ্জয়িনী: সত্যি কথা বলতে খুব একটা কঠিন ছিল না। বিশাল কোনও অসুবিধার সম্মুখীন হয়েছিলাম, এমন নয়। কারণ আমার জন্য রাস্তাটা খুব পরিষ্কার ছিল। আমার মাথায় ছকা ছিল কী করব। কোনও বিষয় নিয়ে যদি সঠিক পরিকল্পনা থাকে, তা হলে অনেক কঠিন জিনিসও সহজ হয়ে যায়। আমার মনে হয়েছিল, রিয়্যালিটি শো থেকে যদি আমি পরিচিতি পাই, আর যদি সত্যিই আমার প্রতিভা থেকে থাকে, তা হলে কাজ পেতে খুব একটা সমস্যা হবে না। তার জন্য ইন্ডাস্ট্রিতে নিজের কেউ না থাকলেও চলবে।
প্রশ্ন: তা হলে প্রতিভাই শেষমেশ জিতে যায় বলছেন?
উজ্জয়িনী: একদম। আমার ক্ষেত্রে তো তা-ই হয়েছে। আমার কোনও সাপোর্ট ছিল না। এখনও নেই। তা-ও কাজ করে চলেছি। সত্যিই প্রতিভা থাকলে চাপা থাকে না। ফুটে বেরোবেই।
প্রশ্ন: শুরুর দিনের লড়াইয়ের অভিজ্ঞতাগুলি কি আরও এগিয়ে যেতে প্রেরণা জোগায়?
উজ্জয়িনী: লড়াই সকলের জীবনে আছে। আমি অনেক ছোট বয়সে শুরু করেছি। এখনও যে আমি খুব বুড়ো হয়ে গিয়েছি, এমন নয়। তবে প্রথম দিকে আমার আবেগ অনেক বেশি ছিল। সহজেই ভেঙে পড়তাম। চেনা মানুষকে বদলে যেতে দেখে বহু বার মনখারাপ হয়েছে। ধাক্কা খেতে খেতে এখন কঠিন হয়েছি। সবারই এমন হয়। আমি মনে করি ওই ঘটনাগুলিই পেশাদার হয়ে ওঠার প্রস্তুতি।
প্রশ্ন: কেরিয়ারের শুরুতেই বলিউডে অভিষেক হয়েছে। বহু বাংলা সিনেমাতেও আপনি গান গেয়েছেন। মুম্বইয়ে সাফল্য পাওয়া কি বেশি কঠিন?
উজ্জয়িনী: বিষয়টি কঠিন কিংবা সহজের নয়। বলিউড খুব বড় ইন্ডাস্ট্রি। আমাদের ইন্ডাস্ট্রি সেই তুলনায় অনেক ছোট। সেটা খুব স্বাভাবিক। আমার ওখানে কাজ করাটা খুব কঠিন বলে মনে হয়নি। তবে বলিউডে ভাগ্য একটা বড় বিষয়। সামাজিক মাধ্যমগুলিতেও তাই। সেখানে জনপ্রিয় হতে গেলে যে খুব গুণী হতে হয়, তেমন নয়। ভাইরাল হতে গেলে প্রতিভার দরকার পড়ে না। প্রয়োজন ঠিকঠাক ‘কন্টেট’ আর সঠিক সময়। বলিউডেও তেমনই। তবে কোনটি যে সঠিক সময়, সেটা কেউ জানে না। এখানেই ঈশ্বরের হাত আছে।
প্রশ্ন: এখন অনেক শিল্পীই সামাজিক মাধ্যমে বেশ সক্রিয়। আপনার কি মনে হয় কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়ায় জনপ্রিয় হওয়া জরুরি?
উজ্জয়িনী: একশো শতাংশ জরুরি। আমি সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারে অত্যন্ত ল্যাদখোর। মাঝেমাঝে ব্যবহার করি। লক্ষ লক্ষ অনুগামী আমার চাই না। যদি মানুষ ভালবেসে একটা লাইকও দেন, সেটাই আমার প্রাপ্তি। দেখি না কত দিন এ ভাবে চলে।
প্রশ্ন: ট্রোলের শিকার হওয়া খুব সাধারণ একটি বিষয় হয়ে উঠছে। আপনি নিজেও বহু বার ট্রোলড হয়েছেন। ভয় পান?
উজ্জয়িনী: এক বছর আগে জিজ্ঞাসা করলে হয়তো বলতাম, হ্যাঁ। তবে এখন আর ভয় পাই না। একেবারেই না। এগুলি তো হতেই থাকে। এই সাক্ষাৎকারটি নিয়েও আমি ট্রোলড হতে পারি। আগের বছরই রূপঙ্করদার ডাকা সাংবাদিক সম্মেলনে যাইনি বলে সমালোচনা হয়েছে। কেন যাইনি, সে কথা আমি চৈতালিদি আর রূপঙ্করদা দু’জনকেই জানিয়েছিলাম। তাঁরা বুঝেছিলেন। ব্যাপারটি হচ্ছে এই বিষয়গুলি একেবারেই দীর্ঘস্থায়ী নয়। কয়েক দিন পরেই নতুন কোনও একটা বিষয় চলে আসে।
প্রশ্ন: ইদানীং গায়িকারাও তাঁদের বাহ্যিক রূপ নিয়ে বেশ সচেতন হয়ে পড়েছেন। এই বিষয়টিকে আপনি কী ভাবে দেখেন?
উজ্জয়িনী: এটা আসলে একেবারেই সকলের ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমার যদি ইচ্ছা হয়, খুব সেজেগুজে কোথাও যেতে পারি। আবার যদি মনে হয় একেবারে পাগলের মতো যাব, তেমনই চলে যাই। (হাসি)...। আসলে সব কিছুই সমাজমাধ্যমকে কেন্দ্র করে। আগে মানুষ শুনতে চাইত। কিন্তু এখন সকলে দেখতে চায়। সৌন্দর্য সকলেরই ভাল লাগে।
প্রশ্ন: আপনি কখনও বডি শেমিংয়ের শিকার হয়েছেন?
উজ্জয়িনী: হয়েছি। কিন্তু তাতে আমার কিছু এসে-যায় না। বিভিন্ন জায়গায়, নানা ভাবে হয়েছি। মুম্বইয়ে এক বার অডিশন দিতে গিয়েছিলাম। সেখানে আমার চেহারা দেখে বলা হয়েছিল আমি পর্দার জন্য একেবারেই উপযুক্ত নই। তখন খুব কেঁদেছিলাম। পরে তিনিই অন্য কারণে আমার কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন। তার পর আমি ২২ কেজি ওজন কমিয়েছিলাম। তবে সেটা মোটা বলেছে বলে নয়। আমার নিজের মনে হয়েছিল কমানো দরকার। কারণ মঞ্চে চনমনে থাকতে হয়। তবে আমি যে আমার ওজন নিয়ে খুব অখুশি নই। মোটা বলে যে পুরুষ বন্ধুর কমতি হচ্ছে জীবনে, তা নয়। (হাসি).....
প্রশ্ন: উজ্জয়িনী কি প্রেমে পড়েছেন?
উজ্জয়িনী: (লাজুক হাসি).. থাক না। এ সব আবার কেন। এগুলি খুবই ব্যক্তিগত বিষয়। প্রেমের কথা প্রেমের জায়গায় থাক। তবে আমি বলব, প্রেমের থেকে ভাল জিনিস আর কিছু হয় না পৃথিবীতে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy