স্কুল শিক্ষিকা সঙ্গীতা কর ক’দিন আগেই ঘুরে এলেন দার্জিলিং-কালিম্পং। এ বার যাবেন রাশিয়া। বাঙালি চিরকালই ঘুরতে ভালবাসে। সঙ্গীতাও আলাদা নন। তবে তার জন্য পরিবার-বন্ধুদের তোয়াক্কা করেন না তিনি। কখনও একে বারে একাই বেরিয়ে পড়েন, কখনও আবার যান কয়েক জন মহিলার সঙ্গে দল বেঁধে।
শুধু সঙ্গীতাই নন, মহিলাদের একা বেড়াতে যাওয়ার প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে এ শহরেও। ইচ্ছেমতো বেরিয়ে পড়ছেন ওঁরা। সঙ্গীতা জানালেন, ২০১৪ সাল থেকে এমন ভ্রমণে যাচ্ছেন তিনি। স্বামী বেড়াতে যেতে বিশেষ ভালবাসেন না। তাই তাঁকে বাড়িতে রেখে একাই বেরিয়ে পড়েন স্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘আসলে সব সময় মনে হয়, কবে আবার নতুন কোনও জায়গা দেখব। এই তাগিদ থেকেই বেরিয়ে পড়ি। সঙ্গে কে যাবে, এখন আর সে সবের তোয়াক্কা করি না।’’ ইতিমধ্যেই একা কিংবা শুধুই মহিলাদের দলের সঙ্গে ১৫টি জাগয়া ঘুরে এসেছেন তিনি। জানালেন, ‘অল উইমেন ট্রিপ’-এ যেতে পছন্দ করেন, এমন অনেক মহিলাই আছেন। সঙ্গীতার এখন আলাপ হয়ে গিয়েছে সে রকম অনেকের সঙ্গে। সুন্দরবন থেকে শুরু করে ব্যাঙ্কক, মিশর, কানাডা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র— পরিবারের কোনও পুরুষ সদস্যের সঙ্গ ছাড়াই ঘুরে ফেলেছেন ওঁদের অনেকে। এ বার একা একা রাশিয়া। তা নিয়ে খুবই উত্তেজিত সঙ্গীতা।
মহিলা ভ্রমণার্থীদের জন্য আলাদা করে বেড়ানোর ব্যবস্থা করে দিচ্ছে এ শহরের বহু সংস্থাও। এমনই একটি ভ্রমণ সংস্থার কর্ণধার স্বাতী রায় জানালেন, এই ধরনের ভ্রমণের প্যাকেজের চাহিদা বাড়ছে।
অনেক সময় স্ত্রীর বেড়াতে যাওয়ার বিষয়ে স্বামীরাই যোগাযোগ করেন। স্বাতী বলেন, ‘‘দেখেছি এই ধরনের ট্রিপে গিয়ে খুব রিল্যাক্সড থাকেন সকলে। হয়তো জীবনে অনেক দায়-দায়িত্ব নিয়ে চলেছেন। পরিবারের বাইরে এসে কয়েকটা দিন অন্য ভাবে কাটান।’’ স্বাতী জানালেন, অনেকেই ঘুরে এসে আবার যাওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেন। এঁরা পরস্পরকে আগে চিনতেনও না। কিন্তু বেড়াতে গিয়ে তৈরি হয় বন্ধন।
তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী উষসী মাইতি স্বাতীদের ব্যবস্থাপনাতেই দু’বার বেড়াতে গিয়েছেন। তিনি জানালেন, এক ঝাঁক অচেনা মহিলার সঙ্গে বেড়াতে যাওয়ার অভিজ্ঞতা একেবারেই অন্য রকম। বয়সের ব্যবধান কিংবা সামাজিকতার সব বাধা পেরিয়ে হঠাৎ একসঙ্গে কয়েক দিনের ‘মুক্তি’ উপভোগ করতে ভালই লেগেছে সকলের। উষসীদের সঙ্গেই সুন্দরবন বেড়াতে গিয়েছিলেন শুক্লা ভক্ত। পঞ্চাশোর্ধ্ব শুক্লার দিদি শীলা তালুকদারও গিয়েছিলেন সঙ্গে। শুক্লা জানালেন, রোজের রুটিনের বাইরে এমন ভ্রমণ তাঁদের কাছে যেন একেবারে তাজা বাতাসের মতো এসেছিল।
তবে একা বেড়াতে গিয়ে মাঝেমধ্যে সমস্যার মুখোমুখিও হতে হয় মহিলাদের। কলকাতার এক তথ্যপ্রযুক্তি কর্মীকে চাকরির কারণেই যেমন দেশ-বিদেশে যেতে হয়। সঙ্গে রয়েছে একা একা ভ্রমণের নেশাও। কিছু দিন আগেই চেরাপুঞ্জি গিয়েছিলেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, নানা অছিলায় একা মহিলাকে দেখে হেনস্থা করেছেন হোটেল-কর্মীরা। তাঁরা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, একা মহিলাকে ঘর ভাড়া দেওয়া হবে না। তবে তাতে দমে যাননি তিনি। উল্টে জানালেন, বেড়াতে গেলে এমন অভিজ্ঞতা হতেই পারে। পরের বার একা একা কোন নতুন জায়গা দেখতে যাবেন, তার খোঁজেই মগ্ন এখন তিনি!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy