Advertisement
E-Paper

গর্ভধারণের ইনশিয়োরেন্স

বেশি বয়সে সন্তানধারণের জন্য এগ ফ্রিজ় করাচ্ছেন অনেক মহিলাই। বিষয়টির সব দিক পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি

মধুমন্তী পৈত চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২১ ০৬:১৭
Share
Save

সময় বদলাচ্ছে। পাল্টাচ্ছে বিয়ে ও সন্তানধারণের ক্ষেত্রে নারীর ইচ্ছে ও চাহিদা। কর্মজীবনের খাতিরে বা অন্য কোনও অনিবার্য কারণে বেশি বয়সে সন্তানধারণের সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন বহু মহিলাই। তবে মনে রাখতে হবে, শরীরেরও নিজস্ব একটি ঘড়ি থাকে। চল্লিশ বছর বয়সের পরে সন্তানধারণের ক্ষেত্রে অনেক সমস্যা দেখা যায়। আবার চিকিৎসকদের মতে, কোনও কৃত্রিম সাহায্য ছাড়াই ওই বয়সে সুস্থ সন্তানের মা হতে পারেন অনেকে। কিন্তু একজন মহিলাকে সময় থাকতেই জানতে হবে, তার গর্ভধারণের সম্ভাবনা কোন বয়সে কেমন থাকবে। সেই বুঝে তিনি ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করতে পারেন। উন্নত চিকিৎসাশাস্ত্র সেই সুযোগ দিচ্ছে। ৩৫ থেকে ৪৫ বছর বয়সে গর্ভধারণের জন্য অনেকেই তিরিশের গোড়ায় বা আরও কম বয়সে এগ ফ্রিজ় করছেন। প্রক্রিয়াটি খরচসাপেক্ষ, তাই মহিলাদের আর্থিক স্বাধীনতার সঙ্গেও বিষয়টি সম্পর্কিত।

চিকিৎসাগত তাৎপর্য

অল্পবয়সি অবিবাহিতা কোনও মহিলা যদি ক্যানসারে আক্রান্ত হন, তাঁর কেমোথেরাপি শুরু হওয়ার আগে এগ ফ্রিজ় করানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। জরায়ু, ডিম্বাশয়ে ক্যানসার হলে পরে স্বাভাবিক নিয়মে সন্তানধারণে সমস্যা হতে পারে। কিন্তু এই অঙ্গগুলি ছাড়া যদি অন্য কোনও অঙ্গে (যেমন স্তন) ক্যানসার হয়, সে ক্ষেত্রেও কেমোথেরাপি ও রেডিয়োথেরাপির প্রভাবে ডিম্বাশয়ের কর্মক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

ক্যানসার ছাড়াও রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, অটো ইমিউন ডিজ়িজ়, টিউবারকিউলোসিসের মতো রোগে ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় গর্ভধারণে সমস্যা দেখা দিতে পারে। সে সব ক্ষেত্রেও এগ ফ্রিজ় করা হয়।

সামাজিক তাৎপর্য

এগ ফ্রিজ় করাতে ইচ্ছুক মহিলাদের সংখ্যা দেশে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। উচ্চশিক্ষার জন্য বা হাই-প্রোফাইল চাকরির খাতিরে মধ্য তিরিশের পরে অনেক মহিলা সন্তানধারণ করতে চাইছেন। বিবাহিতা হলে তাঁরা ভ্রূণ সংরক্ষণও করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে সাফল্যের হার বেশি।

এগ, স্পার্ম ও এমব্রায়ো ফ্রিজ়িং

বন্ধ্যত্ব বিশেষজ্ঞ ডা. গৌতম খাস্তগিরের কথায়, ‘‘এ দেশে এগ ফ্রিজ়িং শুরু হয়েছে নব্বইয়ের দশকে। বিভিন্ন কোষের মধ্যে এগ সেল বেশ জটিল। তাই তার সংরক্ষণ প্রক্রিয়াও কঠিন। একশোটি ডিম সংরক্ষণ করলে তার মধ্যে ষাটটি হয়তো থ (ফ্রিজ়িং অবস্থা থেকে তরল অবস্থায় আনা) করা যায়।’’ তুলনায় এমব্রায়ো সংরক্ষণ করা সহজ। একশোটি সংরক্ষণ করলে, ৯৫টিই তার মধ্যে কর্মক্ষম থাকে।

তবে সামাজিক বাধ্যবাধকতার খাতিরে বাগদত্তা বা বিবাহিতা মহিলারা এমব্রায়ো ফ্রিজ়িং করান। অবিবাহিতা হলে সাধারণত তাঁদের আস্থা এগ ফ্রিজ়িংয়ে।

পদ্ধতির আগে পরীক্ষানিরীক্ষা

প্রথমে মহিলার সার্বিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। হার্ট, লাংস, কিডনি-সহ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলির পরীক্ষা করা হয়। কাউন্সেলিংও এ ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক। যদি মহিলার কোনও মানসিক সমস্যা থাকে, সেটাও খতিয়ে দেখা হয়। এ ছাড়াও এই প্রক্রিয়ার সব দিক নিয়ে চিকিৎসকেরা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে বুঝিয়ে বলে দেন।

এর পরে ওই মহিলার গর্ভধারণের ক্ষমতা পরীক্ষা করা হয়। তার জন্য দু’টি টেস্ট রয়েছে। অ্যান্টি-মুলেরিয়ান হরমোন (এএমএইচ) টেস্ট করা হয়। এবং ঋতুচক্র চলাকালীন দ্বিতীয় থেকে পঞ্চম দিনের মধ্যে তলপেটের আলট্রাসোনোগ্রাফি করা হয় (এএফসি টেস্ট)। প্রথম টেস্টের মাধ্যমে দেখা হয়, আগামী পাঁচ বছরে ওই মহিলা কী হারে ডিম উৎপাদন করতে পারবেন। দ্বিতীয় টেস্টে দেখা হয়, ওই নির্দিষ্ট সময়ে মহিলার ডিম্বাশয়ে ডিমের ক’টি ঘর রয়েছে।

এ ছাড়া এইচআইভি ১২২, হেপাটাইটিস বি, হেপাটাইটিস সি-এরও পরীক্ষা করা হয়।

এগ ফ্রিজ়িং পদ্ধতি

• পরীক্ষাগুলির ফলাফলের ভিত্তিতেই চিকিৎসক স্থির করতে পারেন, কোন ডোজ়ের হরমোন কী পরিমাণে ইনজেক্ট করতে হবে।

• ঋতুচক্র শুরু হওয়ার সঙ্গেই এই পদ্ধতি শুরু করা হয়। স্বাভাবিক নিয়মে ডিম্বাশয়ে মাসে একটি বা দু’টি ডিম তৈরি হয়। একাধিক ডিম তৈরি করার জন্য বাইরে থেকে হরমোন ইনজেক্ট করা হয়।

• মস্তিষ্ক থেকে স্বাভাবিক নিয়মে এফএসএইচ এবং এলএইচ হরমোন নিঃসৃত হয়, যা ডিম তৈরি করতে সাহায্য করে। বাইরে থেকে এই হরমোন শরীরে ইনজেক্ট করা হয়।

• পাশাপাশি কতকগুলি ব্লাড টেস্ট করেও দেখা হয়, ডিম্বাশয়ের উপরে হরমোন এবং ওষুধ কেমন কাজ করছে বোঝার জন্য।

• ৯-১২ দিন মতো সময় লাগে ফলিকলগুলির ডিম রিট্রিভ করার জন্য। এর পরে এইচসিজি ইনজেকশন প্রয়োগ করা হয়।

• আলটাসোনোগ্রাফি করে দেখা হয়, ডিমগুলির চূড়ান্ত অবস্থা। পরে মহিলাকে অজ্ঞান করে প্রসবের পথ দিয়ে ডিমগুলি বাইরে বার করা হয়।

সতর্কতা

স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ অভিনিবেশ চট্টোপাধ্যায়ের মতে, ‘‘যে দিন মহিলার শরীর থেকে ডিম বার করা হয়, সে দিন তিনি বিশ্রাম নিতে পারেন। এক সপ্তাহের মধ্যেই তিনি কাজেও যোগ দিতে পারবেন।’’ তবে ডিম বার করার পরে কতকগুলি উপসর্গ দেখা দিলে, তখনই ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত। যেমন, মূত্রত্যাগে সমস্যা, ১০১ ফারেনহাইটের বেশি জ্বর, তলপেটে ক্রনিক ব্যথা, যোনি থেকে রক্তপাত ইত্যাদি। সাধারণ ক্র্যাম্প বা অস্বস্তি হলে চিকিৎসক কিছু ওষুধ দেন। এক সপ্তাহের মধ্যে তা কমেও যায়।

কত বছর পর্যন্ত ফ্রিজ় করা যায়?

যে বয়সে মহিলা এগ ফ্রিজ় করাচ্ছেন, সেই সময়ে উৎপাদিত ডিমের মান এবং পরবর্তী সময়ে তার রক্ষণাবেক্ষণের উপরে নির্ভর করে এটি। সাধারণত পাঁচ থেকে দশ বছর পর্যন্ত ডিম সংরক্ষণ করা যায়।

আইনি জটিলতা

এগ ফ্রিজ়িং সংক্রান্ত বিল এখনও এ দেশে বলবৎ নয়। ব্রিটেন বা আমেরিকার আইন মেনেই এ দেশে কাজ করা হয়। এমব্রায়ো ফ্রিজ়িংয়ের ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রী দু’জনেরই সম্মতি প্রয়োজন। এমব্রায়ো প্রতিস্থাপনের সময়েও দু’জনের সম্মতি দরকার। অন্তর্বর্তী সময়ে যদি তাঁদের আইনি বিচ্ছেদ হয়ে যায়, তখন ভ্রূণ প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা যায়। সংরক্ষিত ডিম থেকে গর্ভধারণের জন্য সেই মহিলার স্বামী বা পার্টনারের অনুমতি লাগবে।

বিষয়টি স্পর্শকাতর, তাই সব দিক বিচার করে সিদ্ধান্ত নেবেন।

Pregnancy Oocyte Cryopreservation

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}