লম্বা হওয়ার চিকিৎসা শুরু করুণ ১৬ বছরের মধ্যেই।—ছবি : শাটারস্টর
চেহারা নয়, ব্যবহার আর কাজ দিয়েই মানুষের বিচার করা উচিত। এসব তত্ত্বকথা মনে রাখা আর তা মেনে চলার মতো ভাবনা খুব কম মানুষেরই আছে। স্কুল, কলেজ বা সমসবয়সিদের আড্ডায় সব সময় কেউ কেউ সে কথা মনে রাখতে পারেন না। খাটো চেহারার ছেলে মেয়েদের বন্ধুবান্ধব, এমনকি বড়দের কাছ থেকেও নানা আপত্তিকর মন্তব্য শুনতে হয়। স্কুলে, টিউশনে বা আনন্দ অনুষ্ঠানেও বন্ধুরা আড়ালে কিংবা সামনাসামনিই ‘পাসপোর্ট সাইজ ফোটো’ বলে হাসাহাসি করে। ফলে বেঁটে চেহারার ছেলে মেয়েদের মন খারাপ হতে হতে শুরু হয় ডিপ্রেশন। তবে এই সমস্যার সমাধান হতে পারে। সঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু করলে মিলতে পারে সুরাহা।
প্রতি ৪,০০০ বাচ্চার মধ্যে ২ জন গ্রোথ হরমোন ডেফিসিয়েন্সির সমস্যায় ভোগে। মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের মধ্যে চার গুণ বেশি এই (এইচজিএইচ) হরমোনের ঘাটতি লক্ষ করা যায়। এন্ডোক্রিনোলজিস্ট সেমন্তী চক্রবর্তী জানালেন, গ্রোথ হরমোনের সাহায্যে চিকিৎসা করে হরমোনের অভাবজনিত কারণে বেঁটে ছেলে মেয়েদের উচ্চতা কিছুটা বাড়ানো যায়। তবে যখন বাচ্চার থাইরয়েড ও গ্রোথ হরমোনের তারতম্যের কারণে উচ্চতা কম হয় এবং ১০–১২ বছর বয়সের মধ্যে চিকিৎসা শুরু করা হয়, তা হলেই উচ্চতা বাড়ানো সম্ভব।
লম্বা বা বেঁটে হওয়ার পিছনে বংশগতির একটা ভূমিকা আছে। তার সঙ্গে আরও অনেকগুলো ফ্যাক্টর কাজ করে। সঠিক পুষ্টির অভাব, গ্রোথ হরমোন আর থাইরয়েড হরমোনের তারতম্য, জন্মের সময় খুব ছোট থাকা, ক্রনিক কিডনি ডিজিজ, টিবি, সিলিয়াক ডিজিজের (গমের খাবারে অ্যালার্জি) মতো কিছু অসুখ ইত্যাদি বিভিন্ন কারণ লম্বা হবার পথে বাধা সৃষ্টি করে, বললেন এন্ডোক্রিনোলজিস্ট সাগরিকা মুখোপাধ্যায়। তাই বাচ্চার বৃদ্ধির ব্যাপারে বাবা মায়ের খেয়াল রাখা উচিত। ওজন এবং উচ্চতা যদি স্বাভাবিকের থেকে কম হয়, তা হলে পুষ্টির ব্যাপারে নজর দিতে হবে। যদি দেখা যায়, বাচ্চার ওজন ঠিক আছে কিন্তু উচ্চতা স্বাভাবিকের তুলনায় যথেষ্ঠ কম, তখন এন্ডোক্রিনোলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া উচিত বলে দুই চিকিৎসকের মত।
আরও পড়ুন : শীতে চিন্তামুক্ত হয়েই খান কফি, এড়িয়ে চলুন সাপ্লিমেন্ট
সাগরিকা মুখোপাধ্যায় জানালেন যে,আমাদের মস্তিষ্কের মধ্যে হাড়ের সুরক্ষিত ঘেরাটোপের মধ্যে আছে ছোট্ট মটর দানার আকারের পিট্যুইটারি গ্ল্যান্ড। বেস অফ দ্য ব্রেনে থাকা এই গ্রন্থিটির ওজন মাত্র ০.৫ গ্রাম। আর এই ছোট্ট গ্ল্যান্ডই আমাদের শরীরের বিভিন্ন হরমোনের কাজকর্ম নিয়ন্ত্রণ করে। ছোট্ট অথচ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পিট্যুইটারি গ্ল্যান্ডের দু’টি অংশ— অ্যান্টেরিয়র ও পস্টেরিয়র। অ্যান্টেরিয়র বা সামনের অংশ থেকেই নিঃসৃত হয় গ্রোথ হরমোন।
চিকিৎসক সাগরিকার কথায়, ভ্রূণ যখন মায়ের গর্ভে তখন থেকেই পিট্যুইটারি গ্রন্থি থেকে গ্রোথ হরমোন নিঃসরণ শুরু হয়। বিভিন্ন ধরণের গ্রোথ হরমোন, যেমন হিউম্যান গ্রোথ হরমোন (এইচজিএইচ), গ্রোথ হরমোন রিলিজিং হরমোন (জিএইচআরএইচ), থাইরয়েড স্টিম্যুলেটিং হরমোন (টিএসএইচ), ফলিকল স্টিম্যুলেটিং হরমোন (এফএসএইচ) সহ নানা হরমোন নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ করে। একই সঙ্গে রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখে, মেটাবলিজম বা বিপাকীয় ক্রিয়া স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে, শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখে, কিডনির কাজকর্ম ঠিক রাখে, এ রকম আরও অনেক শারীরবৃত্তীয় কাজে সাহায্য করে এই গ্রোথ হরমোন।
সেমন্তী চক্রবর্তী জানালেন, সারা জীবন ধরেই গ্রোথ হরমোন নানান শারীরবৃত্তীয় কাজে সাহায্য করে। কোনও কারণে পিট্যুইটারি গ্রন্থির কাজ ব্যাহত হলে স্বাভাবিক বৃদ্ধিতে বাধা সহ নানান অসুবিধে হতে পারে। এমনকি গ্রোথ হরমোনের অভাবে ওজন বেড়ে যায়। সাগরিকা জানালেন, যে সব কোষ থেকে গ্রোথ হরমোন বের হয়, বিভিন্ন সংক্রমণ কিংবা টিউমার বা অন্য কোনও কারণে সেগুলির কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে গেলে হরমোন নিঃসরণ অত্যন্ত কমে যায়। ছোট বয়সে এই সমস্যা হলে বাচ্চার বৃদ্ধি কমে যায়। এই কারণেই বাচ্চারা লম্বায় বাড়ে না।
আরও পড়ুন : কোভিডের নতুন স্ট্রেন ধরা পড়ার মতো কিট কি এ দেশে আছে?
বাবা মায়ের বয়সের গড় অনুযায়ী বাচ্চারা বেড়ে ওঠে। ছেলেরা কিছুটা লম্বা ও মেয়েরা কিছুটা খাটো হয়। গ্রোথ চার্ট অনুযায়ী বাচ্চাদের বৃদ্ধির হার যদি খুব কম থাকে তবে চিকিৎসকের পরামর্শে প্রয়োজনীয় টেস্ট করা উচিত। থাইরয়েড হরমোনের তারতম্য, অটিজম, ম্যাল অ্যাবজরবশন আছে কি না জেনে নিয়ে গ্রোথ হরমোন পরিমাপ করা দরকার হতে পারে। তবে গ্রোথ হরমোন অ্যাসের পরিবর্তে ইনসুলিন লাইক গ্রোথ ফ্যাক্টর-১ টেস্ট করা অনেক বেশি সুবিধেজনক। গ্রোথ হরমোনের তারতম্য হলে হরমোন ওষুধ প্রয়োগ করে বাচ্চার উচ্চতা বাড়ানো যায়। সেমন্তী জানালেন, ১২–১৪ বছর বয়সের মধ্যে চিকিৎসা শুরু করলে চিকিৎসায় ভাল ফল পাওয়া যায়। কেন না, ছেলেদের ১৮ বছরের পর ও মেয়েদের ১৫–১৬ বছরের পর লম্বা হওয়া মুশকিল। তাই এই বয়সের আগেই চিকিৎসা শুরু করা উচিত।
মেয়েদের মধ্যে বেঁটে থাকার প্রবণতা বাড়ছে আর্লি মেনার্কির জন্যে। তবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ মতো চললে উচ্চতা বাড়ানো সম্ভব। থাইরয়েড হরমোনের তারতম্যেও বেঁটে ও মোটা হওয়ার প্রবণতা বাড়ে। তাই এর চিকিৎসাও করানো দরকার। বাচ্চার জন্মের সময় খুব ছোট আকার হলে অবশ্যই পেডিয়াট্রিক এন্ডোক্রিনোলজিস্ট দেখানো উচিত। তবে বাবা মায়ের উচ্চতা কম হলে বংশগত কারণে ছেলে মেয়ের উচ্চতা কম হবে, এই কথাটা ভুলে গেলে চলবে না। গ্রোথ হরমোন দিয়ে চিকিৎসা করে লাভ হবে কি না তা নির্ধারণ করবেন একজন বিশেষজ্ঞ। চিকিৎসকের উপর ভরসা রেখে সঠিক চিকিৎসা করানো দরকার।
আরও পড়ুন : মোবাইল স্ক্রিনেই গ্লাস ঠেকিয়ে চেঁচিয়ে বলুন উল্লাস!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy