‘শীতকাল কবে আসবে, সুপর্ণা?’ কবির এই অপেক্ষাভরা প্রশ্নের জবাব দেওয়ার সময় এসে গিয়েছে। হাওয়ার মৃদু কাঁপুনি জানান দিচ্ছে, শীতকাল আসন্ন। তবে এখন শীতকাল মানেই মিঠে রোদ, কমলালেবু আর উলের সোয়েটার নয় শুধু। এ বছরের শীত যেন বয়ে আনছে দুঃসময় পেরিয়ে এক নতুন শুরুর আশা। তার উপরে ভর করে আনন্দ-উদ্যাপনের অবসর খুঁজে নিতে চাইছে মন। প্রায় সব বাড়িতেই শীতের শুরুতে নানা প্রস্তুতি নেওয়া হয়ে থাকে। তার ছাপ থাকে ওয়ার্ড্রোব থেকে ড্রেসিং টেবল, কিংবা অন্দরসজ্জায়। কেউ বই, জামাকাপড় রোদে দেন। কেউ আবার মরসুমি ফুল বা আনাজের চারা লাগান ছাদবাগানে। শুকনো ডালপাতা ছেঁটে গাছের পরিচর্যায় মাতেন। সেই সঙ্গে নিজের পরিচর্যায়ও। শীতে একটু বেশিই যত্নে রাখতে হয় ত্বককে। সব মিলিয়ে হেমন্ত-শেষের বাতাসে হিমেল আভাস ধরা দিতেই নড়েচড়ে বসি আমরা।
এ বছরটা যেহেতু একটু আলাদা, তাই এ বার সুদিনের আশায় যেন আরও বেশি উন্মুখ সকলে। তাই শীতবুড়োকে স্বাগত জানানোর সঙ্গে সঙ্গে সে প্রস্তুতিও শুরু হোক।
দৃশ্যবদল অন্দরে
যাঁরা নিজেদের থাকার জায়গাটিকে সাজিয়েগুছিয়ে রাখতে ভালবাসেন, তাঁদের কাছে শীতকাল মানেই অন্দরসজ্জার ভোল পাল্টে ফেলার সুবর্ণ সুযোগ। শুধুমাত্র আলোর সাহায্যে কী করে এ সময়ে ঘরের লুক একেবারে বদলে ফেলা যায়, তার হদিস দিলেন অভিনেত্রী ঋতাভরী চক্রবর্তী। তিনি বললেন, ‘‘আলোর রকমফেরেই একটা ঘরের চেহারা পাল্টে ফেলা যেতে পারে। দীপাবলির মতো করে নয়, শীতের আলোর সাজ হবে একেবারে আলাদা। বিভিন্ন আকারের সুগন্ধি ক্রিসমাস ক্যান্ডেল আর নরম আলোর রাইস লাইট দিয়ে সাজিয়ে তুলতে পারেন আপনার ঘর।’’
বড়দিনের সময়ে ঘরের একটা কোণ বরাদ্দ করুন ক্রিসমাস ডেকরের জন্য। সাজানো ক্রিসমাস ট্রি আর তার নীচে গিফট-বক্স তো আছেই, রেনডিয়ার কিংবা নাটক্র্যাকার ডলের মতো বাহারি ফিগারাইন দিয়েও সাজিয়ে তুলতে পারেন ঘরের সেই অংশটি।
শীতের বালাপোশ-কম্বলের বিছানা দখল করার সময় এসে গিয়েছে। রোজ বিছানা তোলার সময়ে তা ভাঁজ করে খাটের পায়ার দিকে সাজিয়ে রাখুন। কাঁথা স্টিচের বাহারি কুইল্ট বা রজ়াই থাকলে তা পেতে রাখাও আরামদায়ক। উত্তুরে হাওয়া আটকাতে একটু ভারী পর্দা লাগাতে পারেন এ সময়ে।
সান্ধ্য আড্ডা থেকে ভূরিভোজ
পাব হপিং নয়, বরং বাড়িই এখন পার্টি করার আদর্শ জায়গা। তাই শীতের রাতে বন্ধুবান্ধবকে ডাকলে একটু গড়িয়ে নেওয়ার বন্দোবস্ত তো করতেই হয়। যে ঘরে পার্টি করবেন, তা আলো দিয়ে সাজানোর পাশাপাশি সেন্টেড ক্যান্ডেল, অ্যারোমা ডিফিউজ়ার কিংবা পপৌরি টেবলে রাখতে পারেন। কাউচ বা সোফার পাশেই মেঝেতে কার্পেট বা ফ্লোর রাগ বিছিয়ে দিন, মোটা গদি হলেও চলবে। এই সময়ে ধুলো বেশি জমে, তাই পাতার আগে ধুলো ঝেড়ে রোদে দিয়ে নিন একবার। তার উপরে রাখুন কয়েকটি উজ্জ্বল রঙের কুশন আর হালকা করে গায়ে জড়িয়ে নেওয়ার মতো ছোট র্যাপ ব্ল্যাঙ্কেট। টেবিলে সাজান খাবার-পানীয়। শীতের রাতে খোলা ছাদে বারবিকিউতেও আনন্দ!
ঘর সাজানোর পাশাপাশি আপনার রান্নাঘরেও লাগুক নতুনের ছোঁয়া। প্যানে সামান্য মাখন গরম করে তাতে কয়েকটা দারুচিনির টুকরো ফেলে দিলেই সারা ঘর সুগন্ধে ভরে উঠবে। বেকিংয়ের সরঞ্জাম হাতের কাছে নামিয়ে রাখুন। কেক তৈরির সুবাসে যখন ঘর ম-ম করে, কোথায় লাগে রুম ফ্রেশনার! ডাইনিং টেবলে সাজিয়ে রাখুন চিজ় কিউবস, কিংবা বাহারি শিশিতে মধু বা ঝোলা গুড় ঢেলে রাখুন। ব্রেকফাস্ট-টেবলেও প্যানকেক বা পাউরুটি সহযোগে কাজে লেগে যাবে তা। ফন্ডুও রাখতে পারেন আড্ডার মাঝে। গলানো চিজ়ের ওমে আড্ডা জমে উঠবে। নতুনত্বও থাকবে।
গাছেরও চাই যত্ন
পাতা ঝরার মরসুম হলেও এ সময়ে গাছেরও চাই বিশেষ যত্ন। শীতকালে রোদ ঘুরে যায়। তাই বারান্দা, জানালা বা ছাদের যে অংশে রোদ ঘুরে গিয়েছে, টবের অবস্থানও সেই অনুযায়ী পাল্টে দিন। শুকিয়ে আসা পাতা ছেঁটে ফেলুন। বেড়ে যাওয়া গাছের ডাল প্রুনিং করে সুন্দর শেপ দিন তাকে। ছাদ বা কিচেন গার্ডেনে টম্যাটো, ধনেপাতা ইত্যাদির চারা লাগাতে পারেন। আবার ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, গাঁদার মতো বাহারি ফুলেও সাজিয়ে তুলতে পারেন।
ওয়ার্ড্রোবে উষ্ণ পরশ
গরম পোশাক বেরিয়ে পড়তেই এ সময়ে আলমারির চেহারাও যায় পাল্টে। গরম জামাকাপড় ব্যবহার করার আগে কড়া রোদে দিয়ে নিন। স্কার্ফ, শ্রাগ, স্টোল, হালকা জ্যাকেটের মতো অল্প ঠান্ডায় পরার পোশাকগুলি হাতের কাছে রাখুন। বিয়েবাড়ির পোশাক বা পার্টিওয়্যারও দরকারমতো বার করে রাখতে পারেন কয়েকটা। আলমারির ভোলবদল যখন হচ্ছেই, তখন ন্যাপথলিন পাল্টে, সর্টিং করে পুরনো পোশাক বাতিল করুন ও নতুন ভাবে আলমারি গুছিয়ে রাখুন। একটা কোট হ্যাঙার রাখতে পারেন ডিসপ্লে-তে, যেখানে সুদৃশ্য কোট বা জ্যাকেট ঝুলিয়েও রাখা যাবে। উপরের দিকে রাখতে পারেন টুপি। খুব বেশি শীতকাতুরে হলে, বাড়িতে পরতে পারেন নভেল্টি স্লিপার্স। তুলোর মতো স্লিপার্সে পা গলিয়ে চলার যে কী মজা!
খেয়াল রাখুন ত্বকের
শীতে ত্বকের আলাদা পরিচর্যার প্রয়োজন। তাই ড্রেসিং টেবল ও স্নানের জায়গাটির সাজসজ্জাও পাল্টে যাবে সেই অনুযায়ী। গ্লিসারিনের শিশি কিংবা বডি বাটার— ত্বকের পেলবতা ধরে রাখার উপকরণগুলি জায়গা করে নেবে সামনের সারিতে। রূপ বিশেষজ্ঞ ব্রিজেট জোনস বললেন, ‘‘এ সময়ে সাবানের ব্যবহার একেবারে বন্ধ করে দেওয়াই ভাল। পরিবর্তে ব্যবহার করুন শাওয়ার ক্রিম। স্নানের শেষে হালকা ভিজে গায়েই ময়শ্চারাইজ়ার মেখে নিন। বাজারচলতি মিনারেল অয়েলযুক্ত ক্রিম/লোশনের পরিবর্তে অর্গ্যানিক বডি অয়েল, বডি বাটার কিংবা গোলাপজল-গ্লিসারিনের মিশ্রণ ব্যবহার করতে পারেন। হাইড্রেটিং মাস্ক ও সেরাম ব্যবহার করুন নিয়মিত।’’ স্নানের সময়ে উষ্ণ গরম জলে একটু বাথ সল্ট বা এসেনশিয়াল অয়েল মেশানো, ঘুমোতে যাওয়ার আগে বালিশে সামান্য মিস্ট ছড়িয়ে নেওয়া— এই ছোট ছোট অভ্যেসগুলিই আপনার শীতযাপন ভরিয়ে দিতে পারে যত্নের ওমে।
চারদিকের করোনা পরিবেশের মাঝে এ বারের শীতকাল নিজেকে ভাল রাখার অবসর। তার শুভারম্ভ হোক এখন থেকেই।
মডেল: সোহিনী গুহ রায়, শ্রেষ্ঠা সুর, ঐশ্বর্য মুখোপাধ্যায়; ছবি: শুভদীপ সামন্ত; মেকআপ: সুবীর মণ্ডল
হেয়ার: শক্তি দাস; পোশাক: ইমেজ অ্যান্ড স্টাইল, গড়িয়াহাট; লোকেশন: ক্লাব ইকোহাব, ইকোস্পেস বিজ়নেস পার্ক, রাজারহাট; ফুড পার্টনার : রং দে বসন্তী ধাবা
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy