Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Vaishali Thakkar

ফের অভিনেত্রীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার! পেশাই কি মানসিক চাপ বাড়াচ্ছে? প্রশ্ন তুলল বৈশালীর মৃত্যু

কেন বার বার অভিনেত্রীদের ‘আত্মহত্যা’র ঘটনাই সামনে আসছে? পেশাগত চাপ না কি অন্য কোনও কারণ? কী বলছেন মনোবিদ?

টেলি অভিনেত্রী বৈশালী ঠক্করের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করা হয় তাঁর বাড়ি থেকে।

টেলি অভিনেত্রী বৈশালী ঠক্করের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করা হয় তাঁর বাড়ি থেকে। ছবি: সংগৃহীত

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০২২ ২০:০৬
Share: Save:

পল্লবী দে, বিদিশা দে মজুমদার, মঞ্জুষা নিয়োগী— মাস কয়েক আগেই সংবাদের শিরোনামে ছিল নামগুলি। নেপথ্যে তাঁদের আত্মহত্যার খবর। যোগসূত্র একটিই। তাঁরা সকলেই বিনোদন জগতের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। রবিবার ফের সংবাদের শিরোনামে এল এক অভিনেত্রীর আত্মহত্যার খবর। টেলি অভিনেত্রী বৈশালী ঠক্করের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করা হয় তাঁর বাড়ি থেকে। পুলিশের সন্দেহ, এটি আত্মহত্যা। বাড়ি থেকে একটি সুইসাইড নোটও উদ্ধার হয়েছে। আর এই খবর ফের মনে করাল পল্লবী, বিদিশা, মঞ্জুষার কথা। সঙ্গে ফিরে এল সেই প্রশ্ন। বার বার বিনোদন জগতে এমন কেন ঘটছে? কেন তরুণ অভিনেত্রী-মডেলরা বেছে নিচ্ছেন চরম পথ?

হিন্দি টেলিভিশনে পরিচিত মুখ বৈশালী। ‘সসুরাল সিমর কা’ ধারাবাহিকে কাজ করে জনপ্রিয়তা লাভ করেছিলেন। এ ছাড়াও একাধিক ধারাবাহিকে তাঁর অভিনয় প্রশংসিত হয়েছে। তাই বৈশালীর মৃত্যু অনেককেই অবাক করেছে। তবু কারও কারও বক্তব্য, বিনোদন জগতের সঙ্গে যুক্তদের মনের অবস্থা এমন হয়। কাজের জগতে প্রাসঙ্গিক থাকার চেষ্টা, পেশাগত চাপ, সম্পর্কের জটিলতা— অনেক কিছুই থাকে। অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল হয়ে পড়া, পারিবারিক অশান্তির মতো সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে অনেকেই বেছে নিচ্ছেন আত্মহত্যার পথ। সে তো গেল ব্যক্তিগত ধারণা। পরিসংখ্যান বলছে আত্মহত্যা বাড়ছে এ দেশে। এ বছরের মার্চে প্রকাশিত ‘ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো’র পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এ দেশে বছর বছর বাড়ছে আত্মহত্যার প্রবণতা। ১৯৭৮ সালে প্রতি ১ লক্ষে ঘটত ৬.৩টি আত্মহত্যা। ২০২০ সালে তা-ই বেড়ে হয়েছে ১১.২৫। সেই রিপোর্টে আরও একটি বিষয় নজরে এসেছে। আর্থিক ভাবে এগিয়ে থাকা কোনও দেশের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ এ দেশের মহিলাদের মধ্যে আত্মহত্যার ঘটনা।

কেন অল্পবয়সিদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে?

কেন অল্পবয়সিদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে? প্রতীকী ছবি।

কেন বার বার অভিনেত্রীর আত্মহত্যার ঘটনাই সামনে আসছে? পেশাগত চাপ না কি অন্য কোনও চাপ?

আনন্দবাজার অনলাইন থেকে যোগাযোগ করা হয় মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘‘আত্মহত্যার সঙ্গে নির্দিষ্ট পেশার কোনও সম্পর্ক আছে বলে আমি মনে করি না। বিনোদন জগৎ সব সময়েই সংবাদের শিরোনামে থাকে, তাই সেই ক্ষেত্রের কোনও ব্যক্তিত্ব আত্মহত্যা করলেও সে ঘটনা আলাদা করে আমাদের চোখে পড়ে। যিনি তত পরিচিত নন, তিনি এই একই কাজ করলে তাঁর পেশাকে কিন্তু বড় করে দেখা হয় না। অধিকাংশ পেশারই কিছু নিজস্ব চাপ থাকে। প্রতিটি আত্মহত্যার আখ্যান, তার গড়ে ওঠার কাহিনি, তার কার্যকারণ ভিন্ন এবং সেটি সেই ব্যক্তির নিজস্ব যাপন ইতিহাসের মধ্যে নিহিত থাকে। কেন কোনও ব্যক্তি আত্মহননের পথ বেছে নেন, সেই কারণ তাঁর সঙ্গেই পৃথিবীর বুক থেকে চলে যায়। আমাদের অনেক সময়ে কিছু আপাত সাদৃশ্যের মাধ্যমে সেই কারণ নির্ণয়ের প্রবণতা দেখা যায়। ঠিক যেমনটা অভিনয়ের জগতের কোনও আত্মহত্যার কথা শুনলেই আমরা নিজেদের মনে একাধিক কারণ ভেবে বসি!’’

কেন অল্পবয়সিদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে? অনুত্তমার জবাব, ‘‘পেশাগত কারণে তাঁদের এতটাই সময় চলে যায় যে, অনেকেই সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। যদি মনেও করেন যে তাঁরা মানসিক সমস্যা বা উদ্বেগের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন, তবুও মনোবিদের কাছে যাওয়ার সময় কিন্তু বার করতে পারেন না। কেবল বিনোদন জগতের লোক নন, এক জন পুলিশকর্মী কিংবা বিমানসেবিকাও কোথাও না কোথাও এই একই সঙ্কটের মুখোমুখি হচ্ছেন। এর পাশাপাশি কিছু ব্যক্তিগত কারণ অবশ্যই আছে।’’

এই সমস্যার সঙ্গে কী ভাবে লড়বে তরুণ প্রজন্ম? মনোবিদের বক্তব্য, ‘‘মানসিক স্বাস্থ্যকর্মীদের সংখ্যা চাহিদার তুলনায় এখনও অপ্রতুল, ফলে বহু মানুষের কাছে এখনও সাহায্য পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়ে উঠছে না। আত্মহত্যার কথা অনেক সময়ে একটি তীব্র তাগিদ হিসাবেও এক জনের মনের মধ্যে আসতে পারে, ঠিক সেই সময়ে যদি কোনও সচল সুইসাইড হেল্পলাইন নম্বরের সাহায্য তাঁরা পান, তা হলে বহু সময়ে ওই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার দৃষ্টান্তও আমরা দেখেছি। আমাদের দেশে এমন অনেক নম্বরের উল্লেখ পাওয়া যায় ঠিকই, কিন্তু সেগুলির সক্রিয়তা সম্পর্কে সংশয় থেকে যাচ্ছে বইকি। আমাদের এই নম্বরগুলিকে সক্রিয় ও সচল রাখার জন্য সব ধরনের উদ্যোগের প্রয়োজন আছে। এবং সম্ভব হলে সেই নম্বরগুলির যাতে যথাযথ প্রচার হয়, সেই দিকেও আমাদের নজর দেওয়ার প্রয়োজন আছে। এ ছাড়া, এমন কয়েক জন বন্ধু বানাতে হবে, যাঁদের সঙ্গে মন খুলে কথা বলা সম্ভব। এমন কিছু মানুষ, যাঁরা আপনার কথা অনত্র চাউড় করবেন না, আপনার ভাল-মন্দ বিচার করবেন না। আমাদের আবেগের সুরক্ষা বলয় তৈরির প্রয়োজন আছে এবং সেখানে আমাদের পরস্পরের সঙ্গে নতুন সংলাপ স্থাপন ও যুক্ত হওয়ার দিকেও নজর দিতে হবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Vaishali Thakkar Suicide Mental Health
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy