নবপত্রিকার আরাধনা তো প্রকৃতিরই আরাধনা। ছবি: সংগৃহীত
সপ্তমীর সকালে গঙ্গার ঘাটে ভিড় হবে নবপত্রিকা স্নান করানোর। এর পরে মণ্ডবে গিয়ে অবগুণ্ঠনবতী নববধূর মতো গণেশের পাশে থাকবেন তিনি। সপ্তমী থেকে দশমী তাঁরও পুজো হবে। বিসর্জনেও রয়েছে নিয়ম। কিন্তু সবচেয়ে বড় রীতি রয়েছে নবপত্রিকা নির্মাণে।
আম বাঙালি নবপত্রিকাকে ‘কলাবউ’ নামেই ডাকে। কিন্তু সবার আগে জেনে রাখা দরকার এ ধারণা একেবারে ভুল। তার প্রথম প্রমাণ নিয়ম অনুযায়ী শুভকাজের সময়ে হিন্দু রীতিতে পত্নীর স্থান হয় স্বামীর বাম দিকে। কিন্তু লক্ষ করে দেখবেন, যেখানে সঠিক লোকাচার মেনে পুজো হয় সেখানে নবপত্রিকা থাকে গণেশের ডান দিকে।
আসলে নবপত্রিকা দেবী দুর্গারই এক রূপ। দুর্গা যে প্রকৃতির প্রতীক সেটা বোঝাতেই এই রূপে আরাধনা। নবপত্রিকা মানে নয়টি গাছের পাতা। তা দিয়েই তৈরি হয়। এর উপরে শাড়ি পরানোয় কলগাছটি ছাড়া আর কোনও গাছের পাতাই দেখা যায় না। তাই নাম হয়ে গিয়েছে, কলাবউ। ন’রকমের গাছের পাতাই শুধু নয়, সেই সঙ্গে নবপত্রিকা বাঁধাও হয় অপরাজিতা ও হলুদ রঙের সুতো দিয়ে। সেই সুতোও কাঁচা হলুদ দিয়েই রং করার নিয়ম।
স্মার্ত রঘুনন্দন নবপত্রিকা সম্পর্কে ‘তিথিতত্ত্বম্’ গ্রন্থে বলেছেন— ‘কদলী দাড়িমী ধান্যঃ হরিদ্রা মানকং কচুঃ। বিল্বাশৌকৌ জয়ন্তী চ বিজ্ঞেয়া নবপত্রিকাঃ’। এর অর্থ, কলাগাছ, ডালিমের ডাল, ধান, হলুদ, মানকচু, সাধারণ কচু এবং বেল, অশোক, জয়ন্তী গাছের ডাল দিয়ে তৈরি হয় নবপত্রিকা।
এই যে ন’টি গাছের উল্লেখ, তার পিছনের রয়েছে কারণ। শাস্ত্রমতে মনে করা হয়, কলার অধিষ্ঠাত্রী দেবী ব্রাহ্মণী, কচুর কালী, হরিদ্রার দুর্গা, জয়ন্তীর কার্তিকী, বেলের শিবা, ডালিমের রক্তদন্তিকা, অশোকের শোকরহিতা, মানকচুর চামুণ্ডা ও ধানের লক্ষ্মী। আর সমবেত ভাবে নবপত্রিকার অধিষ্ঠাত্রী দেবী দুর্গা।
সুতরাং, দুর্গা দর্শনের সময়ে পুজো দেওয়ার সময়ে প্রকৃতিকেও পুজো দিন। নবপত্রিকার আরাধনা তো প্রকৃতিরই আরাধনা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy