চেনা ছক। কিন্তু নামকরণ হচ্ছে নতুন ভাবে। নয়া প্রজন্মের কাছে সব রকম পরিস্থিতির ভিন্ন ভিন্ন অভিধা রয়েছে। প্রেম-সম্পর্কের নতুন নতুন অভিধাই এখন চর্চার কেন্দ্রে। ‘গোস্টিং’, ‘ব্রেডক্রাম্বিং’, ‘ফ্লাডলাইটিং’, ‘লাভ বম্বিং’, ‘বেঞ্চিং’— এই তালিকা খুব ছোট নয়। আরও একটি নতুন ধারা নিয়ে কথা শুরু হয়েছে সমাজমাধ্যমে, তা হল, ‘ফাবিং’।
কোন ধরনের প্রেমের সম্পর্ককে ‘ফাবিং’ বলা হয়
ডিজিটাল মাধ্যমের দৌরাত্ম্য চলছে নতুন যুগে। মোবাইল ফোন নিত্য দিনের প্রতিটি মুহূর্তের অপরিহার্য সঙ্গী হয়ে উঠেছে। শহর থেকে শহরতলি, এমনকি গ্রামেও ইন্টারনেটের প্রভাব প্রবল ভাবে প্রবেশ করে গিয়েছে। মোবাইলের আসক্তি থাকলে, প্রেমের সম্পর্ক হোক বা বাবা-মায়ের সঙ্গে সম্পর্কই, সবেরই মাঝে ফোনের উপস্থিতি থাকবেই। আর প্রেমের সম্পর্কে তিন নম্বর ব্যক্তি হয়ে ঠাঁয় থেকে যায় মোবাইল ফোন। এমনই পরিস্থিতিকেি বলা হচ্ছে ‘ফাবিং’। যেখানে দু’জনের সম্পর্কে এক জন নিজের সঙ্গীর থেকেও বেশি গুরুত্ব দেয় মোবাইলকে। ‘ডেটিং’-এর জগতে সেখান থেকেই এই নয়া অভিধার জন্ম।

প্রেমের সম্পর্কের ধারায় নয়া শব্দ ‘ফাবিং’। ছবি: সংগৃহীত।
প্রেমের সম্পর্কে ‘ফাবিং’য়ের প্রভাব
আপাত ভাবে এই প্রবণতা সম্পর্কে গভীর প্রভাব ফেলে না। অথবা মনে হতে পারে, প্রভাব পড়লেও, সেটি ক্ষতিকারক নয়। কিন্তু ছাইচাপা আগুনের মতোই ভয়ঙ্কর হয়ে থাকে পরিস্থিতি।
মনোবিদ আত্রেয়ী ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘প্রেমের সম্পর্ক মানে কেবলই শারীরিক ঘনিষ্ঠতা বা নৈকট্য নয়। অন্যের মনের কথা শোনা, অন্যকে বলা, এই সমস্ত কিছু নিয়েই সম্পর্ক তৈরি হয়। ফাবিংয়ের প্রবণতা আমাদেরকে ব্যক্তিগত পরিসরে অনেক বেশি আবদ্ধ করে ফেলেছে। আমরা হয়তো নিজেদের পছন্দ মতো বিষয়বস্তু নিয়ে নিজেদেরকেই সময় দিতে বেশি ব্যস্ত। কিন্তু মনের কথা বলা, সঙ্গীর কথা শোনা, এমনকি ঝগড়া করার মধ্যেও যে মানসিক নৈকট্য, তার থেকে আলোকবর্ষ দূরে সরে যাচ্ছি। একসঙ্গে থেকেও আমরা আলাদা।’
আরও পড়ুন:
যন্ত্রের জন্য কোনও মানুষকে উপেক্ষা করার এই অভ্যাস সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি করতে পারে। সঙ্গীর এমন ব্যবহারের ফলে অন্য মানুষটি নিজেকে অপ্রয়োজনীয় এবং অদৃশ্য বলে মনে করতে পারেন। নিজের কাছেই নিজের মূল্য হারিয়ে ফেলতে থাকেন সেই মানুষটি। কাউকে অবহেলা বা উপেক্ষা করলে তাঁদের একাকিত্বকে বাড়িয়ে তোলা হয়। এর ফলে কেবল সেই মানুষটি অবসাদের শিকার হচ্ছেন, তা-ই নয়, সম্পর্কেও চিড় ধরতে শুরু করে। পরিস্থিতি চরমে পৌঁছে গেলে বিচ্ছেদ হতে বেশি সময় লাগে না। তাই চিড় ধরার সঙ্কেত পেলেই সতর্ক হয়ে যাওয়া উচিত দু’জনেরই। যদি সঙ্গী নিজে থেকে বুঝতে পারেন, তা হলে ভাল। যদি উপলব্ধি করতে না পারেন, তা হলে অবশ্যই সময় থাকতে থাকতে কথা বলে নেওয়া উচিত অন্য জনের।