Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
Misophonia

আওয়াজে যন্ত্রণা 

টিভি, বোর্ডে চক ঘষা, বাসনের আওয়াজে ভীষণ রাগ হচ্ছে? মিসোফোনিয়ার উপসর্গ নয় তো? জেনে নিন

Sourced by the ABP

ঐশী চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৯:২৪
Share: Save:

সম্প্রতি এক অদ্ভুত সমস্যায় পড়েছেন সুদীপা। ভাল মনে ঘুম থেকে উঠলেও, কিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁর মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে। কখনও বোতলে জল ভরার শব্দে রাগ হচ্ছে, কখনও আবার প্রচণ্ড অস্বস্তি হচ্ছে মানুষজনের কথাবার্তার আওয়াজে! পরে চিকিৎসকের কাছে গিয়ে সুদীপা জানতে পারেন, তাঁর মিসোফোনিয়া রয়েছে। গ্রিক ভাষায় মিসোফোনিয়া শব্দটির অর্থই হল, আওয়াজের প্রতি ঘৃণা। অর্থাৎ, তাঁর স্নায়ু কিছু শব্দ এবং আওয়াজের প্রতি অতি সংবেদনশীল হয়ে গিয়েছে।

চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, মিসোফোনিয়া কিছুটা বিরল হলেও আমাদের চারপাশে এমন অনেকেই রয়েছেন, যাঁরা দৈনন্দিনের নানা আওয়াজে বিরক্ত হন, অসুস্থ বোধ করেন। এই সমস্যা বাড়তে থাকলে পরবর্তী কালে ক্ষতির আশঙ্কা বাড়ে।

লক্ষণ যেমন

সাধারণত, মাইক বা বাজি ফাটানোর তীব্র আওয়াজে অনেকেই বিরক্ত হন, অসুস্থ বোধ করেন। কিন্তু যাঁদের মিসোফোনিয়া বা শব্দের প্রতি অসংবেদনশীলতা রয়েছে, তাঁরা প্রতিদিনের নানা আওয়াজেও অসুবিধে বোধ করেন। এই সকল শব্দের মধ্যে পড়ে খাবার চিবোনো, হাততালি দেওয়া, জোরে নিঃশ্বাস ফেলা, ঢোক গেলা, চক ঘষা, টাইপ করার শব্দগুলি। মানুষজনের কথাবার্তা, বাচ্চাদের কান্না, এমনকি পাখির ডাকও অসহনীয় মনে হয়। মিসোফোনিয়া থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে সাধারণত দেখা দিতে পারে—

• তীব্র বিরক্তি-রাগ , সেটা এতটাই যে সামনে থাকা মানুষকে আঘাত করে ফেলেন, ভাঙচুর করেন।

• অতিরিক্ত উদ্বেগে বা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়া। অনেকের এ-ও মনে হয় যে তাঁরা কোনও বন্ধ জায়গায় আটকে পড়েছেন।

• শারীরিক অস্বস্তি। মাথা যন্ত্রণা, গা গোলানো থেকে বমি-হওয়া, বুকে ব্যাথা বা রক্তচাপ বেড়ে যায়।

সামাজিক প্রভাব

শারীরিক ও মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত বোধ করা ছাড়াও, সামাজিক স্তরেও সমস্যায় পড়তে পারে মিসোফোনিয়ায় আক্রান্ত মানুষ। আওয়াজ সহ্য করতে না পেরে অন্যদের সঙ্গে বাক্‌বিতণ্ডা বা অতিরিক্ত উদ্বিগ্ন হয়ে গুটিয়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়। ফলে সমাজে মেলামেশা করতে সমস্যা হয়। কর্মক্ষেত্রে বা পরিবারে, বন্ধুমহলে অশান্তি বাড়তে থাকে। কিছু সময়ে ‘ফোনোফোবিয়া’ বা উচ্চমাত্রার আওয়াজে অতিরিক্ত ভয়ও
দেখা দেয়।

যাঁদের হতে পারে

এই সমস্যা কোনও নির্দিষ্ট বয়সের মানুষকে যে প্রভাবিত করে, এমনটা নয়। মনোরোগ বিশেষজ্ঞ জয়রঞ্জন রাম জানাচ্ছেন, বেশ কিছু রোগ এবং পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির কারণেও শব্দের প্রতি এই বিরক্তি বাড়তে পারে। যেমন, জিনঘটিত রোগ বা মস্তিষ্কের গঠনগত সমস্যার কারণে এই রোগ দেখা দেয়। তা ছাড়া অটিজ়ম থাকলে সেই শিশুরাও নানা ধরনের আওয়াজ সহ্য করতে পারে না। অতিরিক্ত আওয়াজে কেঁদে ফেলে, ঘাবড়ে যায়, বিরক্ত হয়। এ ব্যাপারে সহমত পোষণ করলেন ডা. আবীর মুখোপাধ্যায়ও।

একই ভাবে, যে সকল ব্যক্তি ‘হাইপারআকুসিস’-এ আক্রান্ত, তাঁরাও নানা শব্দ-আওয়াজের প্রতি অসংবেদনশীল হয়ে পড়েন। রোগটি কিছুটা বিরল হলেও শিশু থেকে বয়স্ক, সকলের মধ্যেই হাইপারআকুসিস দেখা দিতে পারে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা।

এ ছাড়াও, শব্দদূষণের মধ্যে যাঁদের বসবাস বা কর্মক্ষেত্র, তাঁদের মধ্যেও মিসোফোনিয়ার লক্ষণ দেখা দেয়। জোরে গান চললে, গাড়ির হর্ন জোরে বাজালে, ভারী যন্ত্রের ক্রমাগত আওয়াজে এমন জায়গায় দীর্ঘক্ষণ, দীর্ঘদিন থাকলেও মিসোফোনিয়া দেখা দেয় ও তা ক্রমশ বাড়তে থাকে।

ডা. জয়রঞ্জন রাম বলছেন, “নানা সময়ে অতিরিক্ত স্ট্রেস, এডিএইচডি, ওসিডি, টুরেট সিনড্রোম, অতিরিক্ত উদ্বেগ বা অবসাদের কারণেও মিসোফোনিয়ার লক্ষণ দেখা দেয়।”

তবে উপায়?

চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, সাধারণত এই সমস্যা যে কারও হচ্ছে, তা-ই মানতে চান না অনেকে। অনেকে আবার ঘর ছেড়ে বেরোতেই চান না, আওয়াজের ‘আতঙ্কে’। তবে যদি এমন লক্ষণ উদ্বেগজনক মনে হয়, তা হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। তার নেপথ্যে অন্য রোগ থাকলে তার চিকিৎসা করাও জরুরি। চিকিৎসক আবীর মুখোপাধ্যায় বলছেন, “থেরাপির মাধ্যমে মনকে শান্ত করা যায়। তা ছাড়া, অডিয়োলজিস্টের সাহায্যও নেওয়া যায়। কিছু এমন পেশা-পরিস্থিতি রয়েছে যেখানে অতিরিক্ত আওয়াজের মধ্যে কাজ করতে হয় অনেককে। এই ক্ষেত্রে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের থেরাপি ভীষণ উপকারী।”

তাৎক্ষণিক সমাধান হিসেবে ইয়ারপ্লাগের ব্যবহার বা পছন্দের গান শোনাও বেশ উপকার দিতে পারে।


অন্য বিষয়গুলি:

Misophonia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE