Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Domestic Violence

লকডাউনের অবসাদে হিংস্র হচ্ছে মন!

লকডাউনের মাঝে শুধু মে মাসেই ১২টি স্ত্রী-হত্যার ঘটনা ঘটেছে জেলায়। জুন মাসে সেই সংখ্যা ৮টি। পুলিশের দাবি, কেবল হত্যা নয়, প্রতি দিন থানায় যে অভিযোগ আসছে তার সিংহভাগই পারিবারিক নানা সমস্যা সংক্রান্ত।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

সুজাউদ্দিন বিশ্বাস
ডোমকল শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০২০ ০৪:৫০
Share: Save:

স্ত্রী মিনিট কয়েক ধরে ফোন-কানে ঘুরলেই বাঁকা চোখে তাকাচ্ছেন কর্তা। আবার রান্নায় নুন কম নিয়ে দু’কথা বললেই খুন্তি হাতে তেড়ে আসছেন স্ত্রী। লকডাউনের দীর্ঘ পরিধিতে পরিবারের কাছাকাছি থাকার সু এবং কু— দু’টো ফলই সামনে এসে পড়েছে। যার রেশ কখনও বা গড়াচ্ছে বচসা-হাতাহাতি এমনকি খুনের ঘটনাতেও। মনোবিদ এবং সমাজতাত্ত্বিকেরা যার মধ্যে সাদা ও কালো, দু’দিকেরই সন্ধান পাচ্ছেন। পরিভাষায় যাকে বলে, ‘ডোমেস্টিক ভায়লেন্স’ তা অসম্ভব বেড়ে গিয়েছে।

পিছিয়ে পড়া জেলা মুর্শিদাবাদেও তা ভয়ঙ্কর চেহারা নিয়েছে। অন্তত পুলিশের হিসেব সে কথায় সিলমোহর দিচ্ছে। স্ত্রী-হত্যার যে অভিযোগ মাসে দু’তিনটি জমা পড়ত থানায়, তা এই দু’মাসে প্রায় তিন গুণ বেড়ে গিয়েছে। মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার কে শবরী রাজকুমার তা মেনে নিচ্ছেন। বলছেন, ‘‘গত দু’মাসে পারিবারিক সমস্যা অনেক বেড়ে গিয়েছে। আমরা সেই সমস্যা মেটাতে ইতিমধ্যে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বিশেষ করে যে এলাকায় ওই ধরনের অভিযোগ বেশি হচ্ছে সেই এলাকায় পুলিশি সহয়তা কেন্দ্র গড়া হয়েছে।’’

লকডাউনের মাঝে শুধু মে মাসেই ১২টি স্ত্রী-হত্যার ঘটনা ঘটেছে জেলায়। জুন মাসে সেই সংখ্যা ৮টি। পুলিশের দাবি, কেবল হত্যা নয়, প্রতি দিন থানায় যে অভিযোগ আসছে তার সিংহভাগই পারিবারিক নানা সমস্যা সংক্রান্ত। সমাজতাত্ত্বিকদের দাবি, মূলত অনিশ্চিত জীবন ও আর্থিক সঙ্কট এই সমস্যার প্রধান কারণ। তা ছাড়াও লকডাউনের ফলে একঘেয়েমি অবস্থাও এই সমস্যাকে বাড়িয়ে তুলেছে বলে দাবি করছেন অনেকে।

জেলার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নেত্রী খাদিজা বানু বলছেন, ‘‘বিশেষ করে পরিযায়ী শ্রমিকদের সংসারে এই সমস্যা প্রকট হয়ে উঠেছে। এক দিকে কাজ হারানোর ফলে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, অন্য দিকে বাড়িতে বসে থাকতে থাকতে টান পড়েছে পকেটেও। আর সেখান থেকে দাম্পত্য কলহ বেড়ে গিয়েছে। আমাদের কাছে মাস দুয়েক ধরে অনেক মহিলাই এ ব্যাপারে অত্যাচারিত হওয়ার অভিযোগ করছেন।’’ হরিহরপাড়ার কন্যাশ্রী যোদ্ধাদের কো-অর্ডিনেটর জাকিরন বিবি বলছেন, ‘‘ফোনে কথা বলা নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সন্দেহ সাঙ্ঘাতিক বেড়ে গিয়েছে। যার ফলে বিবাদ লেগেই আছে।’’ ডোমকল গার্লস কলেজের অধ্যাপক সমাজতত্ত্ব বিভাগের প্রধান প্রিয়ঙ্কর দাস বলছিলেন, ‘‘মুর্শিদাবাদের মতো জেলায় এই সমস্যার কারণ অর্থনীতি। বিশেষ করে পুরুষ নির্ভর অর্থনীতির কারণে পুরুষের ঘাড়ে বোঝা চাপছে। আর সেখান থেকে মানুষের মনে তৈরি হচ্ছে অবসাদ, পান থেকে চুন খসলেই শুরু হচ্ছে পারিবারিক বিবাদ।’’ বিবাদ যে লেগেই রয়েছে তা জানেন ডোমকলের পরিযায়ী শ্রমিক সফিকুল ইসলামও, ‘‘অনেক সময় বুঝতে পারছি ভুল হচ্ছে। কিন্তু নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না। কাজ না থাকলে মনে শয়তান বাসা বাঁধে যে!’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE