এই ভাইরাস সংক্রমণ অবশ্যই আশঙ্কার। কিন্তু এ কথাও সত্যি, এই ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়াকে থামিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা আমাদের মধ্যেই রয়েছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মতো নিতান্ত জরুরি কারণ ছাড়া বাইরে বেরনো বন্ধ করলে, তাঁদের পরামর্শ অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে (শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা, স্বল্প অথচ সুষম পুষ্টিগুণসম্পন্ন খাবার, অল্প অল্প করে বার বার জল খাওয়া, ঠিক সময়ে এবং পর্যাপ্ত ঘুম, একটু ব্যায়াম, মনকেও সুস্থ রাখা) ভাইরাসের সাধ্য নেই আমাদের ঘায়েল করে।
তবু, অজানা আশঙ্কায় এবং খারাপ কিছু ঘটে যাবে— অনেক দূরের এমন ভাবনায় কেউ কাতর, কেউ নিরাপত্তার আশঙ্কায় তটস্থ। বুক ধড়ফড় করছে, হাত-পা কাঁপছে, শীত শীত করছে, স্থির হয়ে বসতে পারছেন না। দুশ্চিন্তা ভিড় করছে মনে, খেতে ইচ্ছে করছে না। যখন আমরা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে দিয়ে যাই, তখন কমবেশি এই সব লক্ষণ আমাদের মধ্যে ফুটে ওঠে। কেউ কেউ কোনও কিছুতেই আনন্দ খুঁজে পান না। একটুতে চোখ ভিজে আসে, মেজাজ তিরিক্ষি হয়। নৈরাশ্যও ভর করে। জীবনটাই বৃথা মনে হয়। মনে হয় কেউ পাশে নেই। ঘুম ভেঙে যায় মাঝরাতে বা কিংবা ভোররাতে। বিস্বাদ লাগে সব কিছু। এই লক্ষণগুলো বিষণ্ণতার। অল্প মন খারাপের মধ্যে দিয়ে আমরা প্রায় সবাই মাঝেমধ্যে গিয়ে থাকি। তার তীব্রতা, ব্যাপ্তি বা স্থায়িত্ব ততটা থাকে না। কিন্তু, বিষণ্ণতায় মন খারাপের মাত্রা অনেক তীব্র। স্থায়িত্বও তুলনামূলক বেশি। বিপর্যয়ের এই দিনগুলিতে অল্পমাত্রায় উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, দুশ্চিন্তা, মন খারাপ কিংবা বিষণ্ণতা অস্বাভাবিক নয়।
মনের এই অবস্থা কাটাতে আমরা কী করতে পারি?
n শুধু আমিই নই, অনেকেই এই পরিস্থিতির শিকার। এটা মেনে নিতে পারলে মনের অস্থিরতা অনেকটা কমবে।
n একটু শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম করতে পারি। সোজা হয়ে চেয়ার-টুল-মোড়ার উপরে কিংবা মেঝেতে বসে খুব ধীর গতিতে দীর্ঘ শ্বাস নেওয়া, আর ধরে না-রেখে খুব ধীরে প্রশ্বাস ছাড়া। অস্থিরতা বা টেনশন অনুভব করলে কিছুক্ষণ দু’চোখ বন্ধ করে করতে পারলে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা কিছুটা কমবে।
n বাড়ির কারও কাছে কিংবা ফোন বা সোশ্যাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে কোনও আত্মজন বা বন্ধুর কাছে মনের কথা বলা। তাতে জমে থাকা অনুভূতির তীব্রতা কিছুটা কমে, ভার কিছুটা হালকা হয়। মন খুলে লিখতে পারলেও হয়।
n টিভি বা সোশ্যাল নেটওয়ার্কের সামনে দীর্ঘক্ষণ বসে করোনা সংক্রমণ নিয়ে খবর শুনতে বা দেখতে থাকলে মন তাতেই আবদ্ধ হয়ে থাকবে। বাড়বে দুশ্চিন্তা-উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা-ভয় ও আশঙ্কার মাত্রা। করোনা-সংক্রান্ত খবর সম্পর্কে সচেতন থাকতে দিনে বার দুই-তিন টিভি দেখলেই হয়।
n করোনা নিয়ে চারপাশে অজস্র অবৈজ্ঞানিক খবর ভাসছে। যাচাই না করে অযথা আতঙ্কের শিকার হই আমরা। খবরের তথ্যসূত্র, তার বিশ্বাসযোগ্যতা যুক্তিবোধ দিয়ে যাচাই করে নেওয়া দরকার। তাতে অযথা উদ্বেগ কমে।
n করোনা হলেই মৃত্যু, এই আতঙ্ক অমূলক। আক্রান্তদের সেরে যাওয়ার হার অনেক অনেক বেশি।
n সন্তান বা কাছের মানুষ দূরে থাকলে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা স্বাভাবিক। কিন্তু, এটাও ভাবতে হবে, তাঁরা বড় হয়েছেন। নিজেদের এবং পরিবারের প্রতি তাঁরাও দায়িত্বশীল। আমরা শুধু উদ্বেগটুকু জানিয়ে রাখি, সতর্ক ও সজাগ থাকতে বলি। প্রতিদিন তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলি, অন্য বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে উৎসাহ দিই। এতে তাঁদের আত্মপ্রত্যয় দৃঢ় হবে, এই বিশ্বাস থাকুক।
n ঘরে থাকার একঘেঁয়েমি কাটাতে বই পড়ুন। খুঁজে নেওয়া যায় নিজের মধ্যেকার সুপ্ত সৃজনশীল সত্তাকেও। হাতে তুলে নিতে পারি রঙের তুলি। অখণ্ড অবসরে অনেকদিন কথা না-হওয়া বন্ধুকে ফোন করা যায়। খোঁজ নেওয়া যায় দূরে থাকা সেই আত্মজনের, বহুদিন যার খোঁজ নেই।
n ঘরে একসঙ্গে সারা দিন থাকার ফলে বিভিন্ন কারণে পরিবারে কাছের মানুষদের মধ্যে মতান্তর ঘটতে পারে। তা যেন মনান্তরের দিকে না-যায়। সে জন্য পারস্পরিক দোষারোপ নয়, অন্যের অনুভূতি, সমস্যা, পরিস্থিতিকে তাঁর জায়গা থেকে একটু বোঝার চেষ্টা করতে হবে। তা হলেই ঘরবন্দি থাকা শত প্রতিকূলতার মধ্যেও মধুর হয়ে উঠতে পারে।
n মানসিক সমস্যা খুব বেশি হলে মনস্তাত্ত্বিক কাউন্সেলর, মনোবিদ বা মনোচিকিৎসকের সহায়তা নিতে পারি।
আসুন, আমরা সতর্ক থাকি সংক্রমণ বিষয়ে। শুধু নিজের প্রতিই নয়, কাছের এবং দূরের সকলের প্রতিই দায়িত্বশীল থাকি। নিজের মনের যত্ন নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কাছের এবং দূরের মানুষদের মনেরও একটু যত্ন নিই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy