মেদ কমানোর উদ্দেশ্যেই লেবু-জলে অভ্যস্ত হন অনেকেই। ছবি: শাটারস্টক।
সকালবেলা উঠে খালিপেটে লেবুজলের অভ্যাস বেশ জনপ্রিয়। প্রচলিত ধারণা অনুসারে, খালি পেটে এই লেবু-জলের হাত ধরেই নাকি কমে যায় শরীরের মেদ। একটু খাওয়াদাওয়ার অনিয়ম বা নিত্য ব্যস্ততার মাঝে শরীরচর্চায় সময় কমে গেলে ভরসা তো আছেই— সকালে উঠে লেবু-মধুর টোটকা!
কিন্তু এই নিশ্চিন্তির ঘরেই কাঁটা দেখছেন বিজ্ঞানীরা। সম্প্রতি এই ঘরোয়া উপায়ে মেদ কমানোর ভরসায় বড় রকমের প্রশ্নচিহ্ন এঁকে দিয়েছে জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড নিউট্রিশনে প্রকাশিত একটি গবেষণা। না, সেই গবেষণায় লেবুকে ‘নিষ্কর্মা’ বলে দেগে দেওয়া হচ্ছে না মোটেও, তবে এই প্রচলিত ধারণার উপর আঘাত হানছে তো বটেই।
প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, পলিফেনল রয়েছে এমন উদ্ভিজ্জ উপাদানের ক্ষমতা থাকে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টের মতো ফ্যাট বার্ন করার। লেবুর রস ও খোসাতে এই সব উপাদান যথেষ্ট পরিমাণে মজুত থাকে। তবু সকালের লেবু-জলকে ফ্যাট কমানোর উপাদান বলে স্বীকার করতে গররাজি বিজ্ঞানীরা। কিন্তু আটকাচ্ছে কোথায়? পুষ্টিবিদ সুমেধা সিংহ দিলেন সেই ব্যাখ্যাই।
আরও পড়ুন: সারভাইকাল ক্যানসার নয় তো? এই সব লক্ষণ দেখলেই ডাক্তার দেখান
তাঁর মতে, ‘‘লেবুর মধ্যে পলিফেনল থাকায় তা ফ্যাট বার্ন করতে সাহায্য করে ঠিকই, কিন্তু এই বার্ন করার পদ্ধতিটা একটু আলাদা। লেবুর জল তখনই কাজে আসে, যখন তা কোনও উচ্চ ক্যালোরিযুক্ত পানীয়র পরিবর্তে খাওয়া হয়। ধরা যাক, একটা নির্দিষ্ট সময়ে ফলের রস বা উচ্চ ক্যালোরিযুক্ত দুগ্ধজাতীয় কোনও পানীয় খাওয়ার অভ্যাস আছে। এ বার সেই অভ্যাস ছেড়ে ওই জায়গায় কেউ লেবু-জল খেতে শুরু করলে শরীরে হঠাৎই ক্যালোরির অভাব দেখা যায়। এতে প্রাথমিক সময়ে ওজন কমে অবশ্যই। পরেও এই অভ্যাস বজায় রাখলে শরীর টক্সিনমুক্তও থাকে। কিন্তু নিয়ম করে সকালে উঠে লেবু-জলের আলাদা করে কোনও ম্যাজিক নেই।’’
গবেষণার বক্তব্যকে সমর্থন করছেন ফিটনেস বিশেষজ্ঞ সুকোমল সেনও। তাঁর কথায়, ‘‘লেবু-জল মূলত শরীরকে ডিটক্সিফাই করে। টক্সিনমুক্ত থাকার কারণে কিডনি, লিভার অনেকটাই সুস্থ থাকে। অ্যাসিড রিফ্লাক্সকেও নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু ওজন কমিয়ে ফেলতে পারবে এমন পানীয় আদতে কিছু নেই।’’
আরও পড়ুন: রোদে পুড়েছে ত্বক? এই সব প্যাকেই উঠবে ট্যান
পুষ্টিবিদদের ব্যাখ্যা মানলে উঠে আসে আর একটি সহজ বিষয়। কেমন তা? আসলে আমাদের প্রত্যেকেরই ওজন অনুযায়ী নির্দিষ্ট ক্যালোরির ডায়েট গ্রহণ করা উচিত। ডায়াটেশিয়ানরা সেই মতোই তৈরি করেন ডায়েট চার্ট। কিন্তু প্রতি দিনই অত হিসেব কষে খেতে না পারে আমরা তুলনায় বেশি ক্যালোরির খাবার খেয়ে ফেলি। পরিমাণের সঙ্গে এর কোনও যোগ নেই। সমপরিমাণ বিভিন্ন খাবারে বিভিন্ন ক্যালোরি থাকে। তাই নিয়মিত খাবারে কোনটায় কতটা ক্যালোরি এত হিসেব কষে উঠতে না পেরে আমরা বেশি খেয়ে ফেলি। ফলে হজমের কাজে শরীরের জল বেশি শোষিত হওয়ায় জলের অভাব দেখা যায় শরীরে। লেবুর জল এই সময় শরীরে জলের জোগান বাড়িয়ে তুলতে বিশেষ কাজে আসে। শরীরও অভ্যন্তরস্থ কাজের জন্য দরকারি জল পেয়ে যাওয়ায় আলাদা করে আর নুনের সঙ্গে জলের জোট বাঁধিয়ে শরীরে জল জমিয়ে রাখে না। সঙ্গে মূত্রের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় শরীরে জল জমে থাকে না, এতে পেটের ফোলা ভাব কমে। একে ফ্যাট কমল বলে ধরে নেওয়ার কারণ নেই।
তা হলে উপায়?
পুষ্টিবিদদের সাফ জবাব, মেদ কমাতে চাইলে নিয়মিত শরীরচর্চা, ঘাম ঝরানো হাঁটাহাঁটি বা জগিং, সাইকেল চালানো বা সাঁতার এ সব তো প্রয়োজন বটেই, সঙ্গে ডায়েট মেনে খাওয়াদাওয়া করলেই অনেকটা নিয়ন্ত্রণে থাকবে ওজন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy