শুধু ওজন কমানোই নয়, হার্টের অসুখ, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করা সবটাই এই ডায়েটের অন্যতম কাজ। ছবি: শাটারস্টক।
কম সময়ে বেশি ওজন কমাতে চাইলে ভেরি লো ক্যালোরি ডায়েট বা ‘ভিএলসিডি’–র জুড়ি নেই৷ এ হল খুব কম কার্বোহাইড্রেট ও প্রোটিনে ভরপুর ৬০০–৮০০ ক্যালোরির ডায়ে। পুষ্টিবিদ রোগীর অবস্থা বুঝে খুব হিসেবনিকেশ করে এমন ডায়েট চার্ট বানান৷ পরিস্থিতি অনুযায়ী কখনও জল বা অন্য লো–ক্যালোরি তরলে কেনা পাউডার মিশিয়েও বানানো হয়৷
সাধারণ লো ক্যালোরি অর্থাৎ ১০০০–১৬০০ ক্যালোরি ডায়েটের বদলে এই ডায়েট খেলে ২–৩ গুণ বেশি ওজন কমে৷ মেয়েদের ক্ষেত্রে সপ্তাহে এক থেকে দেড় কেজির মতো কমে, ছেলেদের কমে দেড় থেকে দুই কেজি৷ শুধু ওজন কমানোই নয়, হার্টের অসুখ, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করা সবটাই এই ডায়েটের অন্যতম কাজ।
অতিরিক্ত রক্তচাপ, সুগার, লিপিড কমতে শুরু করে ৩ সপ্তাহের মধ্যে৷ বিএমআই ৩৫–এর উপরে হলে এই ডায়েট খাওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষ়জ্ঞরা। তবে শ্বাসকষ্ট, ডায়াবিটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হাই কোলেস্টেরল ইত্যাদি থাকলে বিএমআই ২৭–এর উপরে হলেও খাওয়া যায়।
আরও পড়ুন: মেদহীন মধ্য প্রদেশ
তবে এর কিছু বিপদও আছে৷ যেমন:
ডায়াবিটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ থাকলে কম খাবারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ওষুধের মাত্রা না কমালে সুগার বা রক্তচাপ অনেক কমে গিয়ে পরিস্থিতি ঘোরালো হতে পারে৷ বাড়াবাড়ি হলে প্রাণহানির শঙ্কাও থাকে। খাবারে কার্বোহাইড্রেট এবং প্রোটিনের মাপ ঠিক রাখতে না পারলে শরীরে কিটোন নামে এক ক্ষতিকর পদার্থের পরিমাণ বাড়ে (কিটোসিস), মাংসপেশি ক্ষয়ে যায়৷ আরও বেশ কিছু বিপদের আশঙ্কাও থাকে৷ ক্লান্তি, অপুষ্টি, জলশূণ্যতা, হৃদস্পন্দনের ত্রুটিজনিত রোগ, গলস্টোন ইত্যাদির আশঙ্কা তো থাকেই৷ কাজেই চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদের পরামর্শ ছাড়া এই ডায়েট শুরু করবেন না৷
দ্রুত ওজন কমাতে ভরসা রাখুন এই ডায়েটে, তবে মেনে চলুন সতর্কতাও।
কারা খাবেন
বয়স হতে হবে ৬৫–র নীচে ৷ বিএমআই ৩০–৩৫–এর মধ্যে থাকলেও যদি অত্যন্ত উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, আর্থ্রাইটিস ইত্যাদি থাকে, তা হলে এই ডায়েট খান। ২–৪ মাস লো ক্যালোরি ডায়েট এবং ব্যায়াম করে ওজন সে ভাবে কমেনি, এমন হলে এই ডায়েট খান। ওজন খানিকটা কমে যাওয়ার পর তা বজায় রাখার মতো মোটিভেশন থাকলেও এই ডায়েট খান।
কারা খাবেন না
সম্প্রতি হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক হলে বা কার্ডিয়াক কনডাকশন ডিসর্ডার থাকলে এই ধরনের ডায়েটে অভ্যস্ত না হওয়াই ভাল৷ কিডনি, লিভার বা গলব্লাডারের অসুখ, ক্যানসার ও এডস আক্রান্তদের জন্য এই ডায়েট নয়। থাকলে৷ টাইপ ওয়ান ডায়াবিটিসের রোগীরাও নিজেদের ডায়েট থেকে বাদ দিতে পারেন এটি৷ জটিল মানসিক অসুস্থতা, অ্যালকোহলিজম বা অ্যানোরেক্সিয়া নারভোসায় আক্রান্ত হলেও বাদ থাক এই ডায়েট৷
আরও পড়ুন: ডিম খেলেই সন্তানের অ্যালার্জি? পুষ্টির ঘাটতি মেটাতে এ সব খাওয়ান রোজ
সাবধানতা
পুষ্টিবিদের কথা মতো খাবারের পরিমাণ আস্তে আস্তে কমিয়ে ও তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পুষ্টি বাড়িয়ে শরীর যখন এই খাবারে অভ্যস্ত হয়ে যায়, তখন শুরু হয় ভিএলসিডি৷ প্রথম দিকে, যখন ওজন দ্রুত কমছে, প্রতি সপ্তাহে অবশ্যই ডাক্তার দেখান৷ কিছু পরীক্ষা করে রোগীর অবস্থা যাচাই করা এই সময় জরুরি৷ ৩–৪ মাসের বেশি ভিএলসিডি চালানো উচিত নয় কখনওই৷
পুষ্টিবিদের পরামর্শ ছাড়া এক পাও চলা যাবে না৷ ভিএলসিডি–র পর্ব শেষ হলে এলসিডি-তে যেতে হবে অন্তত ৩ মাস সময় নিয়ে, ধীরে ধীরে খাবারে ক্যালোরির পরিমাণ বাড়িয়ে তুলতে হবে এই সময়৷
কী কী বারণ
এই ডায়েট চলাকালীন খুব বেশি দৌড়ঝাপের কাজ বা রোদে ঘোরাঘুরি চলবে না৷ খিদে অসহ্য হলে এক–আধটা শশা বা অল্প ক্লিয়ার স্যুপ খেলে খুব অসুবিধে নেই৷ সারা দিনে রান্নায় ১ চামচের বেশি তেল ব্যবহার করা যাবে না৷ ক্লান্ত লাগালে দুধ–চিনি ছাড়া কালো বা সবুজ চা মাঝেমধ্যে খেতে পারেন৷ এক–আধ কাপ চিনি ছাড়া কালো কফিও খেতে পারেন এক–আধ বার৷
এক কাপ সব্জি বা টমেটো স্যুপ রাখুন ডায়েটে।
ডায়েট চার্ট
এই ডায়েটের একটাই নীতি। হয় প্রায় সেদ্ধ, নয় তো তরল খাবার৷ খাদ্যতালিকায় কার্বোহাইড্রেট থাকবে ১০০ গ্রামের মতো৷ প্রোটিন ০.৮–১.৫ গ্রাম/কেজি— এমন ওজনের হিসেবে৷ মাছ, চর্বি ছাড়া মাংস, ডিমের সাদা, সয়াবিন বা দুধ হবে এই প্রোটিনের উৎস৷ ইলেকট্রোলাইট, ভিটামিন, মিনারেলও দিতে হতে পারে৷ ডাক্তারের পরামর্শ মতো পুষ্টিবিদ বানাবেন সময় অনুযায়ী ডায়েট চার্ট৷
কী ধরনের খাবার দেওয়া হয় সচরাচর, তার একটা উদাহরণ রইল।
৬০০ ক্যালোরি সলিড ডায়েট
সকালে মাখন বা জ্যাম ছাড়া ১ টা টোস্ট, ২৫ গ্রাম ছানা/১ টা ডিমের সাদা অংশ ( সেদ্ধ বা পোচ করে), ১ কাপ চিনি ছাড়া চা। বেলা ১০–১১ টা নাগাদ মুসাম্বি, আপেল, পেয়ারা, পাকা পেঁপে–র মধ্যে যে কোনও একটা ফল, অন্তত ১০০ গ্রাম। দুপুর ১টায় আধ কাপ ভাত বা একটা ছোট রুটি (২৫ গ্রাম), আধ বাটি ডাল (১৫ গ্রাম) অথবা আধ বাটি টক দই (১০০ গ্রাম), সঙ্গে ছোট মাছ অথবা এক-দু’ টুকরো চিকেন (৩০ গ্রাম), সবুজ তরিতরকারি, স্যালাড।
বিকেল ৩টে নাগাদ ১ কাপ চা (চিনি ছাড়া) ও একটা ক্রিম ক্র্যাকার বিস্কুট সন্ধেয় মুসুর ডাল সেদ্ধ, সালাড, আর একটা সেদ্ধ বা পোচ করা ডিম। রাত্রি ৮টা নাগাদ ১ কাপ ভেজ ক্লিয়ার স্যুপ, ১টা ছোট রুটি, সবুজ তরিতরকারি, সালাড৷ ঘুমনোর আধ ঘণ্টা আগে এক কাপ মাখন তোলা দুধ খান৷
৬০০ ক্যালোরি লিকুইড ডায়েট
এ ক্ষেত্রে সকাল ৬টায় এক কাপ চা (চিনি ছাড়া)। সকাল ৮ টায় এক কাপ মাখন তোলা দুধ, সকাল ১০ টায় ১ কাপ ফলের রস (তিনটে মুসাম্বি বা কমলালেবু দিয়ে বানানো)। বেলা ১২ টায় আধ কাপ পরিজ/ডালিয়া (২৫ গ্রাম), সঙ্গে ১ কাপ সব্জি বা টমেটো স্যুপ রাখুন ডায়েটে। বিকেল ৩টেয় এক কাপ ফলের রস (তিনটে মুসাম্বিলেবু দিয়ে বানানো) সন্ধে ৬টা নাগাদ ১ কাপ ভেজিটেবল বা টমেটো স্যুপ। রাত ৮টা নাগাদ ছোট এক বাটি পাতলা খিচুড়ি ও রাত ঘুমনোর আগে এক কাপ মাখন তোলা দুধ৷
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy