Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Vitiligo

লজ্জা নয়, চিকিৎসা করান

শ্বেতি নিয়ে নানা কুসংস্কার রয়েছে। কিন্তু এ রোগের নিরাময় সম্ভব। বাচ্চাদের মুখ, চোখের পাশে, হাতে, পায়ে, গায়ে এই রোগ বেশি হয়।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

কৌশিক সোম ও জলি শেঠ (চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ)
শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০২১ ০১:২৩
Share: Save:

প্রশ্ন: শ্বেতি বলতে সাধারণ ভাবে কী বোঝানো হয়? এই সমস্যাকে অনেকে ‘অটো ইমিউন ডিজ়িজ়’ নামে অভিহিত করেন। এ প্রসঙ্গে কিছু বলবেন?

উত্তর: সাধারণ ভাবে শ্বেতি বলতে ত্বকের উপরের এক ধরনের নির্দিষ্ট সাদা দাগকেই আমরা বুঝে থাকি। চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় এই অসুখ ‘ভিটিলিগো’ নামে পরিচিত। আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা কোনও এক অজ্ঞাত কারণে নিজের দেহের বিভিন্ন কোষ ও কলাকে ধ্বংস করে দেওয়ার চেষ্টা করে। এই জাতীয় রোগকে বলা হয় ‘অটো ইমিউন ডিজ়িজ়’। শ্বেতি বা ত্বকের দুধ-সাদা দাগও এই ধরনের ‘অটো ইমিউন ডিজ়িজ়’।

প্রশ্ন: সাধারণ ভাবে কোন দৈহিক প্রক্রিয়ার কারণে এই অসুখ হয় সে প্রসঙ্গে কিছু বলবেন?

উত্তর: ত্বকের ভিতরে থাকা ‘মেলানোসাইট’ কোষ ‘মেলানোজেনেসিস’ অর্থাৎ ত্বকের রঞ্জক ‘মেলানিন’ তৈরির প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দেহের রং নির্ধারণ করে। এই মেলানিনই ত্বকের রং নির্ধারণ করে এবং ত্বককে আল্ট্রা ভায়োলেট রশ্মি থেকে রক্ষা করে। শরীরে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার সমস্যার জন্য রক্তে এক ধরনের শ্বেতকণিকাটি টি-লিম্ফোসাইট বেড়ে যায়। এরাই মেলানোসাইট কোষটি ধ্বংস করে। এর কারণে ত্বকের কিছু অংশে এক ধরনের দুধ-সাদা উপসর্গহীন দাগ দেখা দিতে পারে। একেই শ্বেতি বলে।

প্রশ্ন: অন্য কোন কোন কারণে ত্বকে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে?

উত্তর: ‘অটোইমিউন ডিজ়িজ়’ ছাড়াও নানা কারণে ত্বকে সাদা দাগ হতে পারে। আলতা, সিঁদুর, কলপ বা প্রসাধনে ব্যবহৃত রাসায়নিকের প্রভাবে অথবা প্লাস্টিকের চপ্পল দীর্ঘ দিন পরলে অনেকের ত্বকে সাদা দাগ হতে দেখা যায়। চিকিৎসার পরিভাষায় এর নাম ‘কেমিক্যাল লিউকোডার্মা’। আবার অনেক দিন ধরে জোরে বেল্ট বেঁধে পোশাক পরলেও কোমরে এক ধরনের সাদা দাগ হয়। যথাযথ চিকিৎসায় এই রোগ নিরাময় সম্ভব।

প্রশ্ন: প্রধানত শরীরের কোন কোন অংশে এই রোগ হয়?

উত্তর: ত্বকের যে কোন অংশে এই রোগ হতে পারে। বাচ্চাদের মুখ, চোখের পাশে, হাতে, পায়ে, গায়ে এই রোগ বেশি হয়। বড়দের ঠোঁট, আঙ্গুলের ডগায়, যৌনাঙ্গে, মাথা ও বুকে বা শরীরের যে কোন জায়গায় এই রোগ হতে পারে। তবে, শরীরের যে অংশে রোগ থাকে না যেমন, হাতের তালু, পায়ের তলায়, ঠোঁট, এ সব জায়গায় এই রোগ হলে চিকিৎসাতেও রোগ সারতে বিলম্ব হয়।

প্রশ্ন: আমাদের সমাজে শ্বেতি নিয়ে নানা কুসংস্কার রয়েছে। এই রোগের আক্রমণ হলে অনেকে অবসাদেও ভোগেন। সে ক্ষেত্রে কী করণীয়?

উত্তর: ত্বকের এই সাদা দাগের সঙ্গে কুষ্ঠের কোনও সম্পর্ক না থাকলেও সেই আতঙ্কে আক্রান্ত মানুষটি ও তাঁর পরিবার মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েন। অনেকে লজ্জার কারণে চিকিৎসাও করাতে চান না। এতে সমস্যা অনেকটাই বেড়ে যায়। এ রোগ যতটা শারীরিক, তার চেয়ে বেশি মানসিক। তাই চিকিৎসার সঙ্গে দরকার রোগীকে ভরসা জোগানো।

প্রশ্ন: ত্বকে যে কোনও সাদা দাগকেই শ্বেতি বলা যায় কি? এই রোগ নির্ণয় কী ভাবে করা হয়?

উত্তর: যে কোন দাগ মাত্রই শ্বেতি নয়। অন্য কোন কারণেও শরীরে সাদা দাগ হতে পারে। যেমন, ছুলি, জন্মগত দাগ বা জরুল, কোন প্রদাহজনিত দাগ থাকতে পারে। নির্দিষ্ট চিকিৎসায় এই রোগ সারানো সম্ভব। এ ক্ষেত্রে ‘উডসল্যাম্প চেকিং’ করে বোঝা যায়, সাদা দাগটি আদৌ শ্বেতি কি না।

প্রশ্ন: এই রোগ কত প্রকার?

উত্তর: ছড়ানোর হার অনুসারে শ্বেতি সাধারণত দু’রকমের হয়। প্রথমটি হল স্টেবল অর্থাৎ ‘ইনসিডিয়াস ভিটিলিগো’। এ ক্ষেত্রে রোগটি ধীর গতিতে ছড়ায়। আর দ্বিতীয়টি, ‘আনস্টেবল ভিটিলিগো’। এ ক্ষেত্রে রোগ দ্রুত ছড়ায়।

প্রশ্ন: এই রোগের চিকিৎসা কী ভাবে হয়?

উত্তর: এই রোগের চিকিৎসার নানা পদ্ধতি রয়েছে। রোগীর বয়স, রোগের ব্যাপ্তি, রোগ প্রকাশের জায়গা বুঝে চিকিৎসা করা হয়। চিকিৎসার নানা পদ্ধতি রয়েছে। প্রাথমিক অবস্থায় রোগ দেখলেই আগে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত। তা হলেই রোগ সেরে উঠার সম্ভাবনা বাড়বে। ওষুধ খাওয়ার পরেও যদি রোগটি ঠোঁট ও আঙুলের ডগায় ছড়িয়ে যায়, তখন ‘স্কিন গ্রাফ্টিং’ করা হয়। এ ছাড়া, শ্বেতির চিকিৎসায় হাল আমলে ‘অটোলোগাস মেলানোসাইট ট্রান্সপ্লান্ট’ পদ্ধতিও ব্যবহৃত হচ্ছে। যদিও এটি এখনও পরীক্ষার স্তরে রয়েছে। এ ক্ষেত্রে কৃত্রিম ভাবে মেলানোসাইট তৈরি করে তা ত্বকে প্রতিস্থাপন করা হয়।

প্রশ্ন: এই রোগ কি পুরোপুরি নিরাময় সম্ভব?

উত্তর: আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে দেখা গিয়েছে শরীরের যে কোনও জায়গার শ্বেতি দূর করা যায়। শিশুদের মধ্যে ৯৯ শতাংশ ক্ষেত্রে শ্বেতি সেরে যায়। বাচ্চাদের শরীরের ত্বকের ৮০ শতাংশের কম অংশে রোগটি হলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দু’আড়াই বছরের মধ্যে তা সেরে যায়। প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে যথাযথ চিকিৎসায় বছর পাঁচেকের মধ্যে ৪০-৫০ শতাংশ ক্ষেত্রে শ্বেতি সেরে যায়। খুব কম ক্ষেত্রেই রোগটি পুনরায় ফিরে আসতে দেখা গিয়েছে।

প্রশ্ন: কোন কোন ক্ষেত্রে রোগটি সারানো খুবই কঠিন হয়ে দাঁড়ায়?

উত্তর: প্রথম থেকে ঠিক মতো চিকিৎসা না করালে এই রোগ সারানো কঠিন হয়ে ওঠে। এ ছাড়া, কিছু দিন এক রকম, তার পরে আর এক রকম চিকিৎসা পদ্ধতির আশ্রয় নিলে রোগটি এমন জায়গায় চলে যায় যে, কিছু করার থাকে না। এ ছাড়া, রোগটি দ্রুত শরীরের নানা অংশে ছড়িয়ে পড়লে সারানো মুশকিল। এর সঙ্গে কারও যদি থাইরয়েড, ডায়াবিটিস, অ্যাজ়মা, এগজ়িমা বা অন্য কোনও ‘অটোইমিউন ডিজ়িজ়’ থাকে, যা শ্বেতির চিকিৎসাকে প্রভাবিত করতে পারে, তা হলে রোগটি সারানো সহজ নয়। তবে সে ক্ষেত্রেও উপায় আছে। শ্বেতির দাগ মেলাতে ‘ওয়াটার রেজ়িস্ট্যান্ট কভার’ ব্যবহার করা যেতে পারে।

সাক্ষাৎকার: সুপ্রকাশ চৌধুরী

অন্য বিষয়গুলি:

Vitiligo treatment
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy