টলিপাড়ায় কান পাতলে ‘ফিটনেস ফ্রিক’ হিসাবে যাঁদের নাম শুনতে পাওয়া যায়, সেই তালিকায় বিক্রমের নাম উপরের দিকেই থাকে। ছবি: সংগৃহীত
অনাবৃত ঊর্ধ্বাঙ্গ। পরনে নীলরঙা জিন্স। মেদহীন, পেশিবহুল চেহারা। শরীরের প্রতিটি পেশি স্পষ্ট। শিরাগুলি ফুটে উঠেছে। বাঁ হাতের কব্জিতে কালচে হলুদ রঙের ঘড়ি। চোখে রোদচশমা। অক্টোবরের এক সকালে অভিনেতা বিক্রম চট্টোপাধ্যায়ের এমন ছবি প্রকাশ্যে আসতেই হইচই পড়ে গিয়েছে টলিপাড়ায়। অনেকেই বলছেন, নতুন অ্যাকশন হিরো পেল টলিউড। ধারাবাহিক কিংবা সিনেমার পর্দায় রোম্যান্টিক নায়কের ভূমিকায় বহু বার বিক্রমকে দেখেছেন দর্শক। সেই ‘চকোলেট বয়’-এর ভাবমূর্তি ভেঙে একেবারে অন্য রূপে ধরা দিয়েছেন বিক্রম। উপলক্ষ তাঁর নতুন ছবি। যে ছবির জন্য এত পরিশ্রম, আগামী বছর ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিকে শুরু হবে তার শুটিং। সিনেমার একটা বড় অংশ জুড়ে অ্যাকশন থাকলেও ছবির গল্প এগোবে মূলত পথ-কুকুরদের প্রতি অমানবিকতার প্রতিবাদকে ঢাল করেই।
টলিপাড়ায় কান পাতলে ‘ফিটনেস ফ্রিক’ হিসাবে যাঁদের নাম শুনতে পাওয়া যায়, সেই তালিকায় বিক্রমের নাম উপরের দিকেই থাকে। সারা বছরই নিজেকে ফিট রাখেন অভিনেতা। তবে নতুন ছবির জন্য নিজেকে যে ভাবে গড়েছেন, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। কোন রুটিন মেনে বাহ্যিক চেহারার এমন বদল ঘটালেন তিনি? কতটা পরিশ্রম করলে তবে এমন শরীর পাওয়া যায়? নতুন ছবির শুটিং শুরুর আগে আনন্দবাজার অনলাইনের কাছে এ প্রসঙ্গে মুখ খুললেন বিক্রম চট্টোপাধ্যায়।
বিক্রম বলেন, ‘‘আমি বরাবরই নিজেকে ফিট রাখার চেষ্টা করি। আমাদের ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে হয়। দর্শক এক ভাবে আমাদের দেখতে পছন্দ করেন। পেশাগত কারণে যেটুকু নিজেকে সুস্থ-সচল রাখতে হয়, সেটা আমি করতাম। তবে নিজেকে ফিট রাখা আর একটা ছবির জন্য নিজেকে পুরোপুরি বদলে ফেলার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। কোনও মতেই দু’টো বিষয় এক নয়। এই চেহারা পেতে আমাকে পাঁচ-ছ’মাস সব কিছু ভুলে পরিশ্রম করতে হয়েছে। এই ছবিতে প্রচুর অ্যাকশন দৃশ্য রয়েছে। ফলে নিজেকে সেই মতো তৈরি করতে হচ্ছে। এর আগে আমি যে ধরনের কাজ করেছি, তাতে আমাকে কখনও মারামারি করতে দেখা যায়নি। ফলে এই কাজটা আমার কাছে চ্যালেঞ্জেরই।’’
চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে নিজেকে বদলে ফেলার এই পরিশ্রম শুরু করেছেন বিক্রম। সেপ্টেম্বরের শেষ পর্যন্ত প্রতিটি নিয়ম নিষ্ঠার সঙ্গে মেনেছেন। পুজোর আগেই ফটোশুট সেরে ফেলেছিলেন। বিক্রমের পুজো কেটেছে হিমাচলে। ফলে কোনও ঝুঁকি নিতে চাননি। বেড়াতে যাওয়ার আগেই কাজ শেষ করে গিয়েছেন। মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর— এই ছ’মাস কী কী নিয়ম মেনে চললেন তিনি? অভিনেতার কথায়, ‘‘ধারাবাহিকতা প্রয়োজন। উৎসাহ ধরে রাখতে হবে। ইচ্ছেটা হারিয়ে যেতে দেওয়া যাবে না। তার মানে এই নয় যে, সারা ক্ষণ জিমে পড়ে থাকতে হবে। পছন্দের খাবার একেবারে মুখে তোলাই যাবে না। নিয়ম মেনে চললে সবটাই করা যাবে। প্রস্তুতি পর্বের একটা সময় আমিও বিভিন্ন কারণে প্রচণ্ড মানসিক উদ্বেগে ছিলাম। মনে হচ্ছিল এত পরিশ্রম করে আদৌ কোনও ফল পাওয়া যাবে কি? তবে জানতাম যে, আমার সামনে কোনও লক্ষ্য থাকলে তা আমি পূরণ করবই। সপ্তাহে পাঁচ থেকে ছ’দিন সেই লক্ষ্যটাকে মাথায় রেখে পরিশ্রম করে গিয়েছি। মিক্সড মার্শাল আর্টসের প্রশিক্ষণ নিচ্ছি। চেষ্টা করছি রপ্ত করার।’’
২০২৩ সালে মুক্তি পাবে শাহরুখ খান অভিনীত ছবি ‘পাঠান’। সে ছবিতেও শাহরুখ খানের নতুন রূপ দেখে উচ্ছ্বসিত দর্শক। ‘পাঠান’-এ শাহরুখের সঙ্গে নিজের নতুন লুকের কোনও মিল খুঁজে পাচ্ছেন কি অভিনেতা? তাঁর কথায়, ‘‘সেই ঔদ্ধত্য আমার একেবারে নেই। আমি বড় হয়েছি ওঁর ছবি দেখে। সারা জীবনে অনেকেই অনুপ্রেরণা বলে মেনে এসেছি। বয়স ৫০ পেরিয়েও উনি যেটা করছেন, সেটা সত্যিই আমার পক্ষে সম্ভব না। তবে চেষ্টা করতে পারি। অনুপ্রাণিত হতে পারি। ওই সাধনার মধ্যে দিয়ে যাওয়ার প্রতিভা সকলের থাকে না। তাই ওই তুলনায় না যাওয়াই ভাল। তবে জিৎদা, বুম্বাদা, টোটাদা— আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতেও তো এমন উদাহরণ কম নেই। তাঁরা নিজেদের যে ভাবে ধরে রেখেছেন, তা সত্যিই শেখার মতো। এ প্রসঙ্গে একটা কথা বলার। অ্যাকশন ছবিতে কাজ করার ইচ্ছার বীজটা আমার মনে পুঁতে দিয়েছেন স্বয়ং জিৎদা। যখনই একসঙ্গে আড্ডা দিতাম, এক জন সিনিয়র হিসাবে জিৎদা আমাকে পরামর্শ দিতেন। বারবারই বলতেন, কবে তোমাকে নতুন ভাবে পর্দায় দেখব। আমিও জেনে নিতাম, কী ভাবে এগোনো যায়। একই আলোচনা আমার অঙ্কুশের সঙ্গেও হত। ভিলেন ছবির জন্য অঙ্কুশও নিজেকে বদলে ফেলেছিল। ফলে অসুবিধা হয়েছে এমন নয়। এখানে এক জনের কথা না বললেই নয়। আমার জিম প্রশিক্ষক। ও না থাকলে সত্যিই যত়টা পেরেছি, ততটাও সম্ভব হত না।’’
শুধু শরীরচর্চা আর কসরত করলেই এমন চেহারা পাওয়া দুষ্কর। তার সঙ্গে নিয়ম মেনে খাওয়াদাওয়া করাও জরুরি। রোজের খাওয়াদাওয়ায় কী কী বিধি-নিষেধ মেনে চলেছেন বিক্রম? তাঁর কথায়, ‘‘টানা পাঁচ মাস তো একই রুটিন মেনে চলিনি। প্রথম দেড় দু’মাস এক রকম ডায়েট করেছিলাম। পরের কিছু দিন অন্য রকম। শেষের দশ-পনেরো দিন ডায়েট একেবারে বদলে গিয়েছিল। তবে প্রাথমিক রুটিন একটা ছিল। শুধু সকালের জলখাবারে কার্বোহাইড্রেট খেতাম। তার পর সারা দিন না খেলেই ভাল। তবে মাঝেমাঝে খুব ইচ্ছে করলে দুপুরে ভাত খেয়ে নিতাম। বিশেষ করে বাড়িতে যে দিন পোস্ত বা শুক্তো রান্না হত, আমি আর লোভ সামলাতে পারতাম না। প্রোটিন বেশি করে খেতাম। তার সঙ্গে হজমের গোলমাল ঠেকাতে ফাইবার খেতাম। চিনি খাওয়া একেবারেই বন্ধ ছিল। তাতেও মাঝেমাঝে লুকিয়ে লুকিয়ে চকোলেট, আইসক্রিম খেয়ে নিতাম। তবে সেটা ডায়েট করার শুরুর দিকে। শেষের দু’মাস বাইরের কোনও খাবার খাইনি।’’
বিক্রমের নতুন রূপ ইতিমধ্যেই দর্শকের প্রশংসা কুড়িয়েছে। টলিপাড়ায় তাঁকে নিয়ে শুরু হয়েছে চাপা গুঞ্জন। যাঁকে নিয়ে এই উচ্ছ্বাস, তিনি কতটা সন্তুষ্ট? এই পরিশ্রম কি সফল? বিক্রমের উত্তর, ‘‘আমি কোনও দিনই আমার নিজের কাজ বিচার করতে পারি না। আমি খাটতে পারি। যাঁদের জন্য খেটেছি, তাঁদের সামনে আমার পরিশ্রমটা তুলে ধরতে পারি। কিন্তু আমি কতটা ভাল পেরেছি, সেটা দর্শক ভাল বলতে পারবেন। সহকর্মীরা বলতে পারবেন। আমার সংবাদমাধ্যমের বন্ধুরা বলতে পারবেন। নিজের কাজ বিচার করার মতো ক্ষমতা আমার নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy