যে কোনও ভাবেই তামাক শরীরে প্রবেশ করলেই তা ক্যানসারের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে। ফাইল ছবি।
বৃষ্টি হোক বা মেঘলা এ বারের পুজোয় প্যান্ডেলে যাওয়া মানা। করোনাকে আটকে দেওয়ার এই নিয়ম মানছেন শহরের মানুষজন। তাও কোভিড ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকানো যাচ্ছে না। আবার অতিমারির কারণে অন্যান্য অসুখ চুপচাপ বসে নেই। তাদের দাপটও অব্যাহত। শুধুমাত্র তামাক চিবোনো বন্ধ করলে দৈনিক প্রায় ১২০ জন মুখের ক্যানসার আক্রান্তের অকাল মৃত্যু আটকে দেওয়া যায়।
পথ দেখিয়েছিল মধ্যপ্রদেশ, ২০১২ সালের ৩১ মার্চ গুটখা বিক্রি নিষিদ্ধ করেন সেই রাজ্যের সরকার। তারপর একে একে দেশের প্রায় সবকটি রাজ্যেই এখন গুটখা আর পান মশলা বিক্রি আইনত নিষিদ্ধ। কিন্তু তাও আমাদের দেশ মুখের ক্যানসারের নিরিখে চার নম্বরে দাঁড়িয়ে আছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে পৃথিবীতে গত বছর মুখ ও গলার ক্যানসারে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৬ লক্ষ ৫৭ হাজার। এঁদের মধ্যে ৩ লক্ষ ৩০ হাজার মারা যান। পাপুয়া নিউ গিনি, পাকিস্তান আর বাংলা দেশের পরেই ভারতের স্থান।
আরও পড়ুন:শুধুমাত্র অতিরিক্ত চিনি খেয়েই বিশ্বে মারা যান ৩.৫ কোটি মানুষ!
দেশে প্রতি ঘণ্টায় ৫ জন মুখের (ওরাল) ক্যানসারে মারা যান, প্রতি দিন ১২০ জন। অথচ এই ক্যানসার নিজেদেরই ডেকে আনা, সতর্ক হলে অনায়াসে রুখে দেওয়া যায়। এই কারণে চিবোনো তামাক ও সুপুরি বিক্রির ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারির পরামর্শ দেওয়া হয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তরফ থেকে, জানালেন চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউটের হেড অ্যান্ড নেক ক্যানসার বিশেষজ্ঞ অনিরুদ্ধ দাম।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও জন হপকিন্স ব্লুমবার্গ স্কুল অফ পাবলিক হেলথের যৌথ উদ্যোগে এক সমীক্ষা বলছে, এ দেশে মুখ ও গলার ক্যানসারের অন্যতম কারণ ধোঁয়াহীন তামাক ও সুপুরি। অনিরুদ্ধ দাম জানান, তামাক-সুপুরি, গুড়াকুর পাশাপাশি মদ্যপানও মুখ ও গলার ক্যানসার ডেকে আনে। ধূমপানও খানিকটা দায়ী তো বটেই।
ধূমপানেও ওরাল ক্যানসারের ঝুঁকি রয়েছে। ফাইল ছবি।
ক্যানসার আক্রান্তরা তামাকের নেশার কথা জানালেও মদ্যপানের ব্যাপারে চট করে বলতে চান না। আমাদের দেশের প্রায় সব রাজ্যে আইন করে গুটখা ও পান-মশলা প্রকাশ্যে বিক্রি বন্ধ করা হলেও আইনের ফাঁক দিয়ে গুটখার নেশা চলছে। গত ৬–৭ মাসে চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউটে মোট ক্যানসার রোগীর ৪৮% মুখ ও গলার ক্যানসার নিয়ে চিকিৎসা করাতে এসেছেন।
আরও পড়ুন:খাবারে এই মৌল না থাকলে হতে পারে মারাত্মক সব রোগ
অনিরুদ্ধ জানান, হয় ওরাল ক্যানসার বেড়ে গিয়েছে কিংবা যাঁরা ভিন রাজ্যে চিকিৎসা করাতে যেতেন লক ডাউনের কারণে তাঁরা সিএনসিআই-এ চিকিৎসা করাতে এসেছেন। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চের এক সমীক্ষা বলছে, পুরুষদের মধ্যে মুখগহ্বরের ক্যানসারের ঝুঁকি মেয়েদের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি। সিএনসিআই-এ চিকিৎসা করাতে আসা মুখগহ্বরের ক্যানসারের রোগীদের মধ্যে ৬০% -৭০%ই পুরুষ।
এ দেশের প্রতি ১ লক্ষ মানুষের মধ্যে ২০ জনের মুখের ক্যানসার হয়। এঁদের প্রায় সকলেরই তামাক চিবোনোর নেশার পাশাপাশি বিড়ি বা সিগারেট ও মদ্যপানের নেশা থাকায় মুখ গহ্বরের স্বাস্থ্য অত্যন্ত খারাপ। অনেকেই দিন শুরু হয় গুটখার পাউচ মুখে ঢেলে। পান-সুপুরি, জর্দা, দোক্তা, গুটখা ও মদ্যপান মুখের ক্যানসারের প্রধান কারণ। বিশেষ করে অনেকে গালের পাশে জর্দা পান বা সুপুরি ঠুসে রেখে দেন। ডাক্তারি পরিভাষায় এই অংশের নাম কফিন কর্নার। যাদের এই বদ অভ্যাস আছে তাঁদের ক্যানসারের সূত্রপাত কিন্তু এখান থেকেই হয়।
আরও পড়ুন:ইভেরমেক্টিন কি করোনা মোকাবিলার নয়া তুরুপের তাস? কী বলছেন চিকিৎসকরা
এ ছাড়া ধারালো বা ভাঙা দাঁতের ঘষা লেগে গালের মধ্যে বারে বারে ঘা অথবা গুটলির মত অংশ তৈরি হলে, এবং তা দীর্ঘস্থায়ী হলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশ অনুযায়ী বায়োপ্সি করানো বাধ্যতামূলক। আমাদের দেশে যাবতীয় ক্যানসার আক্রান্তদের মধ্যে এক তৃতীয়াংশই মুখগহ্বরের ক্যানসার নিয়ে বিপর্যস্ত। এমন অনেক রোগীই মুখের ক্যানসার নিয়ে আসেন যাদের রোগ স্টেজ থ্রি বা ফোর-এ পৌঁছে গিয়েছে।
অন্য অসুখের মত মুখ, জিভ বা মাড়ির ক্যানসার প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে সম্পূর্ণ সারিয়ে তোলা যায়। অনিরুদ্ধ জানান, মুখের মধ্যে কোনও সাদাটে বা লালচে দাগ হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। বিশেষত তিনি যদি ধূমপায়ী বা ধোঁয়াহীন তামাকে আসক্ত হন, লিউকোপ্লেকিয়া অর্থাৎ সাদাটে প্যাচ হল প্রি-ক্যানসারাস স্টেজ।
গুটখার নেশা ডেকে আনছে সর্বনাশ। ফাইল ছবি।
গালের পাশে, মাড়িতে বা জিভে কোনও ঘা হলে এবং মাসাধিক কাল থেকে গেলেও ডাক্তার দেখানো উচিত। গালে বা গলায় কোনও ফোলা অংশ যা বাইরে থেকে বোঝা যাচ্ছে, কিন্তু কোনও ব্যথা নেই এর থেকেও ক্যানসারের ঝুঁকি থাকে। ফেলে রাখলে বিপদের ঝুঁকি থাকে।
আরও পড়ুন:বিপদসঙ্কেত! ‘কেরলের শিক্ষা না নিলে পুজোর পর করোনা-সুনামি’
যদি জিভে লাল বা কালো ছোপ পড়ে, জিভ নাড়াতে অসুবিধা হচ্ছে, কথা বলার সমস্যা হয় এবং হাঁ করতে বা মুখ খুলতে সমস্যা হয় তাহলে ক্যানসারের আশঙ্কা থাকে। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। ডেন্টাল সার্জন শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় জানালেন, অনেক সময় দাঁত ভেঙে গেলে, জিভ বা গাল বারবার কামড়ে ফেললে এবং ঘা বা কোনও মাংসপিণ্ড তৈরি হলেও ক্যানসারের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। ধারালো দাঁত ফাইল দিয়ে ঘষে ধার কমাতে ডেন্টাল সার্জনের পরামর্শ নেওয়া উচিত। দিনে দু’বার ব্রাশ করা দরকার এবং কোনও সমস্যা হলে ফেলে না রেখে ডাক্তারের কাছে যাওয়া আবশ্যক।
শুভঙ্কর জানান, গুটখা, দোক্তা, খৈনি, পান-পরাগের সঙ্গে সঙ্গে সিগারেট-বিড়ির নেশা ছেড়ে দিলে এবং মুখের সুস্বাস্থ্য বজায় রেখে মুখ গলার ক্যানসারকে জীবন থেকে দূরে সরিয়ে রাখুন। নেশামুক্ত জীবনযাপনের শপথ নিয়ে ভাল থাকুন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy