Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

চোখ জুড়ানো

চোখের প্রতি অবহেলা আর নয়। কী ভাবে চোখ ভাল রাখবেন সহজেই, রইল হদিশ

মডেল: রিয়া বণিক। ছবি: অমিত দাস

মডেল: রিয়া বণিক। ছবি: অমিত দাস

সায়নী ঘটক
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৪:০৯
Share: Save:

শরীরের সবচেয়ে অবহেলিত অঙ্গগুলির মধ্যে অন্যতম চোখ। ক্লান্তিতে চোখ বুজে না এলে কিংবা চোখের দৃষ্টি ঝাপসা না হওয়া পর্যন্ত আলাদা করে চোখের আরাম নিয়ে মাথা ঘামান না অনেকেই। কিছু চেনা ভুলের ফলে যেমন অজান্তেই চোখের ক্ষতি হয়, তেমনই নিয়মিত চোখের পাওয়ার চেক করাতেও চান না অনেকে। এ বার দেখে নেওয়া যাক, কোন ভুলগুলি এড়িয়ে চলা যায়—

• চলন্ত ট্রেন, বাস বা মেট্রোয় যাওয়ার সময়ে বই পড়লে চোখে স্ট্রেন পড়ে। ছোট ছোট কম্পমান অক্ষর পড়তে গিয়ে চোখে চাপ পড়ে বেশি, তাই এড়িয়ে যাওয়াই ভাল।

• অন্ধকারে টিভি স্ক্রিন, ল্যাপটপ বা কম্পিউটারে চোখ রাখলে পুরো কনসেন্ট্রেশন মনিটরে গিয়ে পড়ে, যা চোখের পক্ষে অস্বস্তিদায়ক। ব্লু রে-র প্রভাবও অত্যন্ত ক্ষতিকর। সে ক্ষেত্রে একটানা দেখবেন না এবং ঘরের আলো জ্বালিয়ে দেখলেই ভাল।

• যাঁদের সারা দিন কম্পিউটারের সামনে বসে কাজ করতে হয়, তাঁদের কম্পিউটার ভিশন সিনড্রোম খুব কমন। চোখের ড্রাইনেসও দেখা যায়। তাই কিছু সময় অন্তর মেশিনের সামনে থেকে উঠে চোখে জলের ঝাপটা দিয়ে আসুন। লুব্রিকেটিং আই ড্রপও ব্যবহার করতে পারেন।

• টেলিভিশন, মোবাইল এবং কম্পিউটার স্ক্রিনের ব্রাইটনেস কমিয়ে রাখুন। চশমার লেন্সে অ্যান্টি গ্লেয়ার, অ্যান্টি রিফ্লেক্টিভ কোটিং ব্যবহার করুন।

• সানগ্লাস ব্যবহারও জরুরি। না ধুয়ে চোখে হাত দেবেন না কখনওই, এতে সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়ে। চোখের পেশিকে আরাম দিতে অন্তত সাত-আট ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন।

দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া

সিঙ্গাপুরে আয়োজিত এক সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যে সব শিশু মোবাইল বা কম্পিউটারের সামনে অনেকটা সময় কাটায়, তাদের মায়োপিয়ার ভয় বেশি। প্রতিকার হিসেবে নিদান দেওয়া হয়েছে, ছোটদের অন্তত এক-দু’ঘণ্টা বাড়ির বাইরে গিয়ে খেলতে। মুঠোফোন বা ল্যাপটপের চৌকো পর্দার বাইরেও শিশুদের দৃষ্টির পরিধি যেন প্রসারিত হয়, তা খেয়াল রাখতে হবে অভিভাবকদেরই। চোখে পাওয়ার থাকলে চশমা ব্যবহার করতে হবে সব সময়ে। লেন্সের ব্যবহার শুরু হোক একটু বড় হওয়ার পর থেকে। অপথালমোলজিস্ট সুমিত চৌধুরী বললেন, ‘‘যে শিশুরা মায়োপিয়ায় ভোগে, তারা খুব ইনটেলিজেন্ট এবং অন্তর্মুখী স্বভাবের হয়। বইকেই নিজের জগৎ বানিয়ে তোলে।’’ এই ধরনের শিশুদের বিশেষ যত্নের প্রয়োজন। নিয়মিত পাওয়ার চেকিং ও ঠিক মতো খাওয়াদাওয়া জরুরি।

কী করে বুঝবেন আপনার খুদেটির দেখতে সমস্যা হচ্ছে? পাওয়ার এসেছে কি না, তা-ই বা বুঝবেন কী করে? নজর দিন—

• টেলিভিশন বা কম্পিউটার স্ক্রিনের একদম সামনে গিয়ে বসা।

• বই বা মোবাইল চোখের একদম কাছে ধরা।

• পড়াশোনায় অমনোযোগ।

• আঞ্জনি না সারা।

• বল খেললে হ্যান্ড-আই কোঅর্ডিনেশনে সমস্যা।

• রঙের ব্যবহার, পাজ়ল ও ডিটেলে কাজ করায় সমস্যা।

• বার বার চোখে জল আসা।

দূরে থাকুক রোগবালাই

বিভিন্ন রোগব্যাধি শরীরে বাসা বাঁধলে চোখের উপরে তার প্রভাব পড়ে বেশি মাত্রায়। উচ্চ রক্তচাপ যেমন চোখের থ্রম্বোসিসের কারণ হতে পারে, আবার পরিবারে ডায়াবিটিসের উদাহরণ থাকলে ডায়াবিটিক রেটিনোপ্যাথির সম্ভাবনা বাড়ে। যার জেরে রেটিনার কোষ দুর্বল হয়ে দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হতে থাকে। তবে আগে থেকে রোগ নির্ণয় করা গেলে এই অসুখ এড়ানো সম্ভব। মানুষের গড় আয়ু সামগ্রিক ভাবে বেড়ে যাওয়ায় বয়স্কদের মধ্যে ম্যাকুলার ডিজেনারেশনের প্রকোপ বাড়ছে। চল্লিশ পেরোলেই চালসে— কথাটা এখনও মর্মে মর্মে সত্যি। নিরক্ষীয় দেশগুলোয় সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির জোরালো প্রভাব, সেই সঙ্গে দূষণ, অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস সবই চোখে ছানি পড়াকে ত্বরান্বিত করে। তবে বয়স বাড়লে যেমন চুল পাকবে, তেমনই বয়সের সঙ্গে সঙ্গে লেন্সের আবরণও শক্ত হতে থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। তাই ছানি পড়ার হাত থেকে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করেও লাভ হয় না খুব একটা।

ঝুঁকি নয় চোখে

চশমা পরতে পছন্দ করেন না অনেকে। চোখে পাওয়ার থাকলে কারও চাকরির ক্ষেত্রে সমস্যা হয়, আবার কখনও পারফর্মিং আর্টের অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় হাই পাওয়ার। পাওয়ার নিয়ন্ত্রণে সমাধান হতে পারে ল্যাসিক। কর্নিয়া মসৃণ করে দেওয়া হয় লেজ়ারের সাহায্যে। তবে তা করাতে গেলে ১৮ বছরের পরেই করান। এবং বিশদে চেকআপ করিয়ে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে তবেই এগোন।

চোখ রাখুন ডায়েটে

চোখ ভাল রাখতে সবুজ শাক, আনাজপাতি বেশি করে খাওয়া জরুরি। ভিটামিন এ ও ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার, পালং শাক, ব্রকোলি, গাজর, লেবুর মতো সিট্রাস ফ্রুট, বাদাম, ডিম, সামুদ্রিক মাছ ও ছোট চারা মাছ খাওয়া চোখের পক্ষে ভাল। প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে ধূমপান চোখের ক্ষতি করে। গেঁড়ি-গুগলি খাওয়ার চল এখন শহুরে মানুষদের মধ্যে নেই বললেই চলে। কিন্তু তা চোখের পক্ষে খুবই উপকারী।

চোখের যত্ন নেওয়ার অভ্যেস শুরু করুন ও আপনার খুদেটিকেও করান ছোট থেকেই। শরীরের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় সম্পদ যখন চোখ, তখন তার জন্য বাড়তি যত্ন নিতে হবে বইকি!

অন্য বিষয়গুলি:

Eye Car Eye Protection Tips for Eyes
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE